একুশে পদক পাচ্ছেন মনের খবর এর উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক

0
118

বাংলাদেশের খ্যাতানামা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য জাতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার একুশে পদক পাচ্ছেন।
বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মো. ফয়জুর রহমান ফারুকী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০১৮ সালের একুশে পদকপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে।
অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন ‘মনের খবর’ এর উপদেষ্টা পর্ষদের সম্মানিত সদস্য। তাঁর এ পদক প্রাপ্তিতে মনের খবর পরিবারের পক্ষ থেকে নিরন্তর শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে অন্যান্য পদকপ্রাপ্তদের সাথে অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক এর  হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একুশে পদক তুলে দেবেন।
পদক প্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের তৈরি ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি পদক, দুই লাখ টাকা, একটি সম্মাননা পত্র এবং একটি রেপ্লিকা দেওয়া হবে।
ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে চালু করা একুশে পদক সরকার প্রতি বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দিয়ে থাকে। সাহিত্য, সংস্কৃতি, গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর ২১ জনকে একুশে পদক দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এর আগে উপন্যাসে অবদানের জন্য তিনি ২০১০ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। অধ্যাপক ডা. আনোয়ারা সৈয়দ হক  “বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনস অব সাইকিয়াট্রিস্ট” ও  “বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনস ফর চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলোসেন্স মেন্টাল হেলথ” এর আজীবন সদস্য। তার “কিশোর কিশোরীর মন ও তার সমস্যা”, “তুমি এখন বড় হচ্ছো”, “মানসিক সমস্যার গল্প”, “তোমার কথা” নামে সহজভাবে মানসিক রোগ নিয়ে  লেখা বইগুলো আমাদের দেশে মানসিক রোগ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে।  তিনি মনের খবরেও নিয়মিত লেখেন।
আনোয়ারা সৈয়দ হক আনোয়ারা ১৯৪০ সালের ৫ নভেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) যশোর জেলার চুড়িপট্টি গ্রামে এক মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা গোলাম রফিউদ্দিন চৌধুরী ছিলেন একজন ব্যবসায়ী ও মা আছিয়া খাতুন একজন গৃহিণী। তার শৈশব ও কৈশোর কাটে যশোরে। ১১ ভাইবোনের মধ্যে তৃতীয় আনোয়ারা ছিলেন ডানপিটে স্বভাবের। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন লেখক হবার। মাকে সবসময় বলতেনও সে কথা।
আনোয়ারার পাঠদানের হাতেখড়ি হয় মায়ের কাছে। চুড়িপট্টির মোহনগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। মধুসূদন তারাপ্রসন্ন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক ও ১৯৫৮ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্ত স্কুল ও কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন।  ১৯৫৯ সালে আনোয়ারা ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি ১৯৬৫ সালে তিনি এমবিবিএস পাস করেন। পরে ১৯৭৩ সালে উচ্চ শিক্ষার জন্য লন্ডন যান। তিনি সেখান থেকে ১৯৮২ সালে মনোবিজ্ঞানে এমআরসি ডিগ্রী লাভ করে দেশে ফিরে আসেন।
এমবিবিএস পাস করার পর তিনি তৎকালীন পাকিস্তান বিমানে মেডিকেল কোরে লেফটেন্যান্ট পদে যোগদান করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি বিমানবাহিনীর চাকরী থেকে ইস্তফা দিয়ে লন্ডন চলে যান এবং সেখানে কয়েকটি হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লন্ডন থেকে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে দেশে এসে ১৯৮৪ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজে মনোরোগ বিভাগে সহকারী প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় মাদকাসক্তি নিরময় কেন্দ্রের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন ঢাকার মানসিক স্বাস্থ ইন্সটিটিউটের পরিচালক ও প্রভাষক। ১৯৯৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে অবসর নেন। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ও স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সাল থেকে তিনি ঢাকার বারডেম হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের প্রভাষক ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে কর্মরত আছেন।
আনোয়ারার প্রথম ছোটগল্প পরিবর্তন ১৯৫৪ সালে দৈনিক সংবাদে প্রকাশিত হয়। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত তিনি নিয়মিত দৈনিক ইত্তেফাকের কচি কাঁচার আসরে লিখতেন। মাইকেল মধুসূদন কলেজে পড়াকালীন দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী ও গুলিস্তা পত্রিকায় তাঁর লেখা গল্প, কবিতা প্রকাশিত হত। গুলিস্তা পত্রিকায় লিখে তিনি পুরষ্কৃতও হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়াকালীন লেখালেখির পাশাপাশি তিনি কলেজের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন। এই সময়ে ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম শ্রেণীর পত্র-পত্রিকা ও বিভিন্ন মেডিকেল জার্নালে তার লেখা ছাপা হত। তার প্রথম উপন্যাস ১৯৬৮ সালে সচিত্র সন্ধানীতে প্রকাশিত হয়। তার সেই প্রেম সেই সময় ও বাজিকর উপন্যাসে সাধারন মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বর্ণিত হয়েছে। নরক ও ফুলের কাহিনী উপন্যাসে লিখেছেন তার ছেলেবেলার কথা। বাড়ি ও বণিতা উপন্যাসে চিত্রায়িত হয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের সামাজিক সমস্যা। উপন্যাস ছাড়া তিনি শিশুদের জন্য সাহিত্য রচনা করেছেন। ১৯৭৭ সালে ছানার নানার বাড়ি, বাবার সাথে ছানা (১৯৮৬), ছানা এবং মুক্তিযুদ্ধ (১৯৮৭), ১৯৯০ সালে তৃপ্তি, আবেদ হোসেনের জোৎস্না দেখা, ১৯৯২ সালে হাতছানি, আগুনের চমক এবং মুক্তিযোদ্ধার মা নামক শিশুতোষ গল্প ও উপন্যাসগুলি প্রকাশিত হয়।
এবছর একুশে পদকপ্রাপ্তরা অন্যরা হলেন- ভাষা আন্দোলনে অধ্যাপক হালিমা খাতুন (মরণোত্তর), অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, অধ্যাপক মনোয়ারা ইসলাম, শিল্পকলা (সংগীতে) সুবীর নন্দী, আজম খান (মরনোত্তর), খায়রুল আনাম শাকিল, অভিনয়ে লাকী ইনাম, সুবর্না মুস্তাফা, লিয়াকত আলী লাকী, আলোকচিত্রে সাইদা খানম, চারুকলায় জামাল উদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযুদ্ধে ক্ষিতিন্দ্র চন্দ্র বৈশ্য, গবেষণায় ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, ড. মাহবুকুল হক, শিক্ষায় ড. প্রণব কুমার বড়ুয়া, ভাষা ও সাহিত্যে রিজিয়া রহমান, ইমদাদুল হক মিলন, অসীম সাহা, মইনুল আহসান সাবের ও হরিশংকর জলদাস।
 
 

Previous articleঅনলাইনে পীড়নের শিকার বাংলাদেশের ৩২ শতাংশ শিশু
Next articleপরীক্ষার চাপ সামলাতে খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে পারেন যে খাবার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here