আমি স্বপ্নে দেখি প্রতিদিনই ড্রাগ নিচ্ছি

আমি স্বপ্নে দেখি প্রতিদিনই ড্রাগ নিচ্ছি

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আমাদের আজকের প্রশ্ন যিনি পাঠিয়েছেন তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

প্রশ্ন: আমার বয়স ২৬ বছর। মাত্র ১৫ বছর বয়সে আমি বিয়ে করি আমার প্রেমিককে। বিয়ের ২বছর পর আমার একটি মেয়ে হয়। মেয়ের বয়স ৩বছর হওয়ার পর আমার স্বামীকে আমার খুব সন্দেহ হয় এবং এটা সত্যি যে সে অন্য সম্পর্কে লিপ্ত হয়। এরপর থেকে আমি নানান রকম মানসিক সমস্যায় ভুগি।

প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাই। আমি বিয়ের আগেই আমার নিজের পারিবারিক কারণে ঘুমের ঔষধ সেবন করে আসছিলাম। এক পাতার নিচে কখনই ঔষধ সেবন করিনি। এই সময় Triptin 10mg, Alactin, Slipam30, Disopan 2 এইগুলো খাচ্ছিলাম। ২০১৫ থেকে আমাকে সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো হয়। পরে আর সেটা কন্টিনিউ করা হয়নি।

২০১৮ সালে আমি বিভিন্ন ড্রাগে এডিক্টেড হয়ে যাই। তখন আমি সিগারেট, গাঁজা, ইয়াবা ইত্যাদি নিতাম। কিন্তু এতে আমার পরিবারের উপর কোনো ইফেক্ট পড়ত না । কেউ বুঝতেও পারেনি। আমার শ্বশুড়বাড়িতে অনেক কাজ করতে হতো। আর সেটা আমার বিরক্ত লাগত প্রায়ই, ড্রাগ নেওয়ার পর আমার কাজে আনন্দ লাগছিলো। এরপর স্বামীর পরকিয়ার বিষয়ে মনোমালিন্যের পর আমি বাবার বাসায় চলে যাই।

এরপর আমার মা বুঝতে পারে যে আমি স্বাভাবিক নই। কিন্তু আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় আমাকে তখন ডাক্তার দেখানো হয়নি। উল্লেখ্য যে, আমার বাবা তখন প্রায় ৩৫ বছরের মানসিক রোগী এবং তিনি বিছানায় পড়ে ছিলেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। তখন আমার মনে হচ্ছিল আমি সব ভুল করছি। কিন্তু আমি ড্রাগ ছাড়তে পারছিলাম না।

১০ দিন পর আমাকে রিহ্যাবে ভর্তি করানো হয়। সেখানে ২০দিন ট্রিটমেন্টের পর আমি প্রায় সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরি। সেখান থেকে আমাকে Serolax 50mg, Oleanz 5, Perkinil দেয়া হয়। সেগুলো আমি ৩মাস খাই। এরপর ৬মাস ভালো ছিলাম।

এখন সমস্যা হলো, আমি শুধু ভয় পাই। কারো সাথে কথা বলতে পারিনা। আগে আমি কথা বলে সবাইকে বিরক্ত করে ফেলতাম। আমার হাত-পা কাঁপে। আর কোনো কিছুই মনে থাকে না। এমনকি রিহ্যাবের দিনগুলোও আমি মনে করতে পারি না।

আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবধ্য যে, আমি আর কখনও ড্রাগ নিবো না। কিন্তু স্বপ্নে প্রায় প্রতিদিনই দেখি আমি ড্রাগ নিচ্ছি। কেউ আমাকে জোর করে খাওয়াচ্ছে এসব। এগুলো আমাকে সারাদিনের জন্য অসহ্য যন্ত্রণা দেয়। এ থেকে আমি কিভাবে মুক্তি পেতে পারি জানাবেন প্লিজ।

উত্তর: প্রশ্নটি করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। এখানে অনেক কিছু জানার আছে, যা উল্লেখ করা হয়নি। সেটা হলো যে, আপনি কি এখন স্বামীর সাথে আছেন বা আপনার স্বামীর সাথে আপনার সম্পর্ক আছে কি নাই? বা আপনি ডিভোর্স করে চলে আসছেন কিনা? এটা আসলে এখনো পর্যন্ত ক্লিয়ার না।

তবে এটা বুঝা গেল যে আপনি স্বামীর বাড়িতে খুব একটা ভালো ছিলেন না। মাত্র ১৫ বছর বয়সে আপনার বিয়ে হয় এবং দুই বছর পরে আপনার একটা মেয়ে হয়। মেয়ের বয়স তিন বছর হওয়ার পর আপনার স্বামীর প্রতি আপনার সন্দেহ হয়। এখন আপনার মেয়ে কোথায় আছে সেটাও ক্লিয়ার না।

এই বিষয়গুলো প্রশ্ন করার অর্থ হলো আপনি এখন কি উপলক্ষ নিয়ে সামনে আগাবেন সেটা বুঝার জন্য। যদি ডিভোর্স হয় তাহলে এক রকম, যদি স্বামীর সাথে থাকেন তাহলে এক রকম, যদি বাচ্চাটা থাকে তাহলে এক রকম।

একই সাথে আপনার চিকিৎসা প্রদ্ধতিটাও এর ওপর নির্ভর করবে। আপনার জন্য ভালো দিক হলো আপনি নেশা ছেড়েছেন এবং আপনি সংকল্প করেছেন যে, আপনি আর নেশা করবেন না। এটা অত্যন্ত অত্যন্ত ভালো দিক।

আপনার বাবা অসুস্থ ছিলেন আবার আপনি নিজেও ২০১৫ সালে মানসিক রোগী ছিলেন। পরবর্তিতে রিহ্যাবের মাধ্যমে চিকিৎসা করে আপনি ভালো হয়েছেন। এগুলো কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে। কেননা এগুলো কিন্তু চিকিৎসার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আমার মনে হয়, যে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে আপনি গিয়েছিলেন তার কাছে আপনার আবার যাওয়া উচিত। উনার কাছ থেকে চিকিৎসা নিলে আপনি এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে পারবেন। যেহেতু আপনি প্রচন্ড সংকল্প করেছেন যে আপনি আপনার জীবনটাকে ঠিক করবেন। সুতরাং আপনি আবার মানসিক রোগের চিকিৎসা নিন। তাহলে দেখবেন আপনার এই কষ্টগুলো অনুভব করবেন না। বরং আপনি ভালো থাকবেন।

শেষের দিকে আপনি যে সমস্যার কথাগুলো বলেছেন সেগুলো শুনে আমার মনে হচ্ছে আপনি একজন আতঙ্কগ্রস্ত বা বিষণ্ণতায় ভুগছেন। সেটাও প্রোপারলি ভালো হয়ে যাবে যদি আপনি চিকিৎসার মধ্যে আসেন। যত দ্রুত সম্ভব আপনি আপনার সেই মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে দেখান বা নতুন কাউকে দেখান। ভালো থাকবে এবং সুস্থ থাকবেন।

ইতি,
প্রফেসর ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক – মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সেকশন মেম্বার – মাস মিডিয়া এন্ড মেন্টাল হেলথ সেকশন অব ‘ওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন’।
কোঅর্ডিনেটর – সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক মেন্টাল স্কিল কনসাল্টেন্ট – বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম।
সম্পাদক – মনের খবর।

Previous articleনিয়মানুবর্তিতা মানসিক চাপ লাঘব করে
Next articleসুন্দর স্বপ্নে সফল ভবিষ্যৎ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here