অর্থনৈতিক সাম্য ও বিষণ্নতা

আপনি যদি পৃথিবীময় অর্থনৈতিক সাম্য আনয়নের একনিষ্ঠ সমর্থক হন,তবে আপনার বিষণ্নতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি! ন্যাচার হিউমেন বিহেভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা এমনটাই দাবি করেছে।
মানুষকে তার সামাজিক মূল্যবোধের আলোকে তিনটি বৃহৎ শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে ৬০ ভাগ মানুষ চায়, পৃথিবীর সব সম্পদ প্রত্যেকের মাঝে সমানভাবে বণ্টিত থাকুক। এদেরকে বলা হয় ‘প্রো-সোশ্যাল’। ৩০ ভাগ মানুষ হলো ‘ইন্ডিভিজুয়ালিস্ট’। এরা কেবল নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট থাকে। বাকি ১০ ভাগ মানুষ শুধু নিজের সম্পদ বাড়াতেই নয়, বরং অন্য যে কারো চেয়ে অধিক সম্পদশালী হওয়ার পেছনে লেগে থাকে।
আমাদের ব্রেইনে অ্যামিগডালা নামক একটা অংশ রয়েছে। যেটার কার্যকারিতার জন্য আমরা স্ট্রেস বা মানসিক চাপ অনুভব করি। ২০১০ সালে ন্যাচার নিউরোসায়েন্সে প্রকাশিত ড. মাসাহিকো হারুনোর এক গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি যে, একই কাজের জন্য প্রো-সোশ্যাল ব্যক্তিদের যখন অন্যদের চেয়ে কম টাকা দেওয়া হয় কিংবা অন্যদের চেয়ে বেশি টাকা দেওয়া হয়, দুই ক্ষেত্রেই তাদের অ্যামিগডালায় কার্যকারিতা দেখা দেয়। অর্থাৎ কম টাকা পেলে সেটা মানতে না পেরে যেমন তাদের স্ট্রেস হয়, ঠিক তেমনি অধিক টাকা পেলে অপরাধবোধ থেকেও তাদের স্ট্রেস হয়। অপরদিকে ইন্ডিভিজুয়ালিস্টরা যখন অধিক টাকা পায়, তাদের অ্যামিগডালায় কোনো ধরনের কার্যকারিতা দেখা যায় না। অথচ কম টাকা পেলে ঠিকই তাদের অ্যামিগডালা ‘লাফিয়ে ওঠে’!
এ বছর নভেম্বরে প্রকাশিত ড. হারুনোর আরেকটি গবেষণা প্রো-সোশ্যাল ও ইন্ডিভিজুয়ালিস্টদের বিষণ্নতার মাত্রা পরিমাপ করার চেষ্টা করে। ‘বেক ডিপ্রেশন ইনভেন্টোরি’ নামক এক বহুল প্রচলিত ‘ডিপ্রেশন মিজারমেন্ট টুল’ ব্যবহার করে দেখা গেছে যে প্রো-সোশ্যালদের ডিপ্রেশনের মাত্রা ইন্ডিভিজুয়ালিস্টদের চেয়ে বেশি। ওই ব্যক্তিদের ওপরে এক বছর পরে আবারো পরীক্ষণ চালিয়ে বিষণ্নতার মাত্রার একই ফল পাওয়া গেছে।
এ থেকে হয়তো আমরা এ সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে, পৃথিবীময় যারা অর্থনৈতিক সাম্য বা সমতা প্রত্যক্ষ করতে চায়, তারাই হয়তো মানসিক অসাম্যে ভোগে। কিংবা যে ৬০ ভাগ মানুষ (নিঃস্বার্থভাবে ‘স্বার্থপরের মতো নিজেদের মানসিক প্রশান্তির জন্য’) সবার সমানাধিকার চান, তাদের সংখ্যাটা আরও বেড়ে ৯০ ভাগ হয়ে গেলেও আসলে বাকি ১০ ভাগের জন্য কখনই দুনিয়ায় সমতা বিরাজ করবে না।
প্রো-সোশ্যালদের বিষণ্নতা কার্যকারীভাবে দূর করা হয়তো সেভাবে সম্ভব না, তবে সাময়িকভাবে দূর করার উপায় হিসেবে রটগার্স ইউনিভার্সিটির নিউরোসায়েন্টিস্ট মাউরিসিয়ো দেলগাদো ‘কগনিটিভ বিহেভিয়্যার থেরাপি’ ব্যবহারের পরামর্শ বাতলে দিয়েছেন, যেটা ব্যক্তিকে ব্রেইনের প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স ব্যবহার করতে সাহায্য করে। আর এই প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স অ্যামিগডালাজনিত স্ট্রেসকে প্রশমিত করতে ভূমিকা রাখে। সুতরাং অ্যামিগডালা দ্বারা সৃষ্ট মানসিক চাপকে মোকাবিলা করার জন্য ব্যক্তি যত বেশি প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স ব্যবহার করবে, সে তত কম বিষণ্নতায় ভুগবে।
 
তথ্যসূত্রঃ https://www.scientificamerican.com/article/nice-brains-finish-last/
 
এফএস/এমএসএ

Previous articleরাগ: বন্ধু না শত্রু?
Next articleকক্সবাজারের অনুষ্ঠিত সম্মেলনের প্রথম দিন আজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here