আমরা প্রায়ই বলি বা শুনি যে, আমি খুব স্ট্রেস এ আছি। দীর্ঘ সময় স্ট্রেস এ থাকলে আমাদের শরীরে বেশ গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হতে থাকে। আস্তে আস্তে শুরু হয় এবং ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হয়। যে প্রতিক্রিয়া দেহে দেখা যায় তাকে General Adaptation Syndrome (GAS) বলে। Hans Selye, the father of stress, গবেষণা করে দেখেছেন লম্বা সময় স্ট্রেস এ থাকলে এই সিনড্রোম দেখা যায়। এই সিনড্রোম তিন ধাপে দেখা যায়। যথাঃ
১. Alarm reaction বা বিপদ সংকেত প্রতিক্রিয়া
এটা সিনড্রোম এর প্রথম ধাপ। এই ধাপে শরীর যুদ্ধ করে বা পালাও প্রতিক্রিয়া দেখায় (fight-or-flight response)। এই জরুরি অবস্থা মোকাবেলা করার জন্য শরীরের অন্যান্য জায়গা থেকে বিপাকীয় প্রক্রিয়া মেনে বিভিন্ন হরমোনের মাধ্যমে শক্তি স্ট্রেস মোকাবেলার জন্য চালিত করে। হরমোন গুলোর মধ্যে epinephrine and norepinephrine, hypothalamus–pituitary–adrenal axis (HPA), ACTH, cortisol উল্লেখ যোগ্য।
২. Stage of resistance বা প্রতিরোধ করার পর্যায়
যদি বিপদ সংকেত প্রতিক্রিয়া পর্যায়ের পরেও স্ট্রেস থাকে তাহলে শরীর মানায়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় নানা অসুবিধা দেখা যেতে পারে। বিপদ সংকেত প্রতিক্রিয়া পর্যায়ে যে পরিবর্তন গুলো ঘটে শরীর সেটা পরিবর্তন করে, হরমোন ও বিপাকীয় প্রক্রিয়া পরিবর্তনের স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার চেষ্টা করে। এ সময় যে পরিবর্তিত অবস্থার তৈরি হয় Selye সেগুলকে diseases of adaptation বলে আখ্যায়িত করেন। পরিবর্তিত অবস্থার মধ্যে তিনি উল্লেখ করেন ulcers, high blood pressure, asthma, and illnesses that result from impaired immune function ইত্যাদি।
৩. Stage of exhaustion পরিশ্রান্ত পর্যায়
এই পর্যায়ে শরীর মানায়ে নিতে ব্যর্থ হয় ও স্ট্রেস এর মুখে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ে। শরীরে দীর্ঘ মেয়াদী পরিবর্তন দেখা যেতে থাকে । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হয়ে পড়ে। শরীরের ভিতরের অঙ্গ গুলোতে আস্তে আস্তে পরিবর্তন হতে থাকে। হরমোন ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে যা কিনা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘ মেয়াদী পরিবর্তন আনে।
কয়েকটি বিষয় এই পরিবর্তন গুলোকে প্রভাবিত করে। যার বাড়া ও কমার উপর দেহের পরিবর্তনের হার নির্ভর করে। মোটামুটি ভাবে চারটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
১. Amount of exposure বা স্ট্রেস এর পরিমাণঃ অনেক বেশি মাত্রার স্ট্রেস অল্প সময় বা অল্প মাত্রার স্ট্রেস বেশি সময় দুটোই স্ট্রেস এর পরিমাণ বেশি এবং এর প্রভাব বেশি
২. Magnitude of reactivity বা প্রতিক্রিয়ার বিস্তারঃ কোনো একটি উদ্দিপনার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া যত বেশি হয়, শরীরের পরিবর্তনও তত বেশি হয় বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
৩. Rate of recovery বা ভালো হওয়ার হারঃ স্ট্রেস প্রতিক্রিয়া যত দ্রুত ভালো হয়ে যায় দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির হার ততই কম। লম্বা সময় নিয়ে বসলে ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয় বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
৪. Resource restoration বা সম্পদের পুনরস্থাপনঃ স্ট্রেস মোকাবেলায় যে সম্পদ চলে যায় সেটা যত তাড়াতাড়ি পুনরুদ্ধার করা যায় ততই দীর্ঘ মেয়াদী পরিণতি কমার সম্ভাবনা দেখা যায়।
চলবে…
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।