সুস্থ সম্পর্কের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

সুস্থ সম্পর্কের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

ব্যক্তির পারস্পরিক সুস্থ সম্পর্ক যেমন মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যও আবার ব্যক্তির পারস্পরিক সুস্থ সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

অর্থাৎ এক ব্যক্তির সঙ্গে অন্য ব্যক্তির সম্পর্ক কেমন হবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে তার মানসিক অবস্থার ওপর। যেমন- অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার ইত্যাদি মানসিক রোগের কারণেও সম্পর্কের ওপর ভীষণ রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

সুতরাং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা ও মানসিক রোগ সারিয়ে তোলার জন্য সুস্থ সম্পর্ক প্রয়োজন এবং সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্যও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

শৈশব ও কৈশোরের সম্পর্কগুলো ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যের ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারে। সুতরাং ছোটবেলা থেকেই সম্পর্কগুলোর প্রতি যত্ন নিলে এর সুফল অবশ্যই পাওয়া যাবে। পারস্পরিক সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে অনেকের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ একাকিত্বে ভোগেন। অথচ চাইলেই এই একাকিত্বকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়। এ জন্য নিজের চেষ্টা থাকাটা জরুরি।

প্রথম বিষয় হলো ব্যক্তি কী ধরনের সম্পর্কের মধ্যে আছে এবং সে কী ধরনের সম্পর্কের মধ্যে থাকতে চায়, তা খুঁজে বের করা। নানা উপায়ে সামাজিক সংযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে একাকিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। যেমন: নতুন নতুন সম্পর্ক তৈরি করা, সাংস্কৃতিক ক্লাবের সদস্য হওয়া, খেলাধুলায় অংশ নেওয়া, সমাজসেবামূলক কাজ করা, আত্মীয় ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা বা যোগাযোগ রাখা, প্রতিবেশীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা এবং যাদের সঙ্গে আগে থেকেই কোনো না কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে আছে, তা দৃঢ় করা।

সর্বোপরি সুস্থ থাকতে হলে শরীরের মতো মন ও সম্পর্কের যত্ন নিতে হবে। একটা চারাগাছকে যত্ন দিয়ে বড় করলে তবেই সেটা ফল দেয়। অন্যদিকে অযত্নে অবহেলায় সেটা মরেও যায়। তেমনি সম্পর্কের বেলায়ও যত্ন নিলেই সুস্থ সম্পর্ক তৈরি হয় আর অবহেলায় ও অযত্নে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। এতে করে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।

পারস্পরিক সম্পর্কগুলোর উন্নতি করা যায় সচেতনতা ও যত্নের মাধ্যমে। যেমন- সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা থাকলে তা খুঁজে বের করা এবং তিরস্কার না করে, কারও ক্ষতি না করে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে তা সঠিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা। যাতে করে উভয় ব্যক্তি স্বস্তি অনুভব করতে পারে। একে অন্যের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতাবোধ প্রকাশ করা, বিশ্বস্ত থাকা, ভালো কাজের প্রশংসা করা ও সঠিক ভাষার ব্যবহার করা।

সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়ানোর জন্য কোয়ালিটি টাইম দেওয়া, খোঁজখবর নেওয়া, বিপদে সাহায্য করা, সহমর্মিতা ও সহানুভূতি প্রকাশ করা, কোনো ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষমা করার প্র্যাকটিস করা। কাজ, পরিবার ও অন্য সম্পর্কগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দরকারি আলোচনা করা, একসঙ্গে খাওয়া, টিভি দেখা ও গল্প করার মাধ্যমে সময় কাটানো, মনোযোগের সঙ্গে তাদের কথা শোনা।

আবেগপ্রবণ সম্পর্কগুলোর প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া, সহকর্মী ও অন্যদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা ইত্যাদি। মূলত পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মাধ্যমে সম্পর্কের দৃঢ়তা বাড়ানো যায়।

সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য নিজের প্রতিও যত্নবান হতে হবে। নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার মানে যে খুব বিলাসিতা করা তা নয়। দৈনন্দিন ছোট ছোট বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হওয়ার মাধ্যমেও নিজের মনের প্রতি যত্ন নেওয়া যেতে পারে। যেমন- হতে পারে মনের মতো করে একটা বিকেল কাটানো, কোনো বন্ধুর সঙ্গে চায়ের মগ হাতে আড্ডা, পছন্দের কোনো বই পড়া, মুভি দেখা।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানো, হাঁটতে যাওয়া, ব্যায়াম করা, পরিমিত খাবার খাওয়া ও ঘুমানো, বাগান করা বা শখের কোনো কিছু করা, প্রতিদিন কিছু না কিছু ইতিবাচক কাজ করা, নিজের দক্ষতাগুলো খুঁজে বের করা, নিজেকে প্রশংসা করা, বাজে অভ্যাস দূর করা ইত্যাদি।

রিলাক্সেশন ও মাইন্ডফুলনেস থেরাপি (মনোবৈজ্ঞানিক কৌশল) অনুশীলনের মাধ্যমেও মনের যতœ নেওয়া যায়। যা মনকে শান্ত রাখে, উদ্বেগ কমায়, বর্তমানের প্রতি মনকে নিবদ্ধ করে এবং কাজের প্রতি মনোযোগী হতে সহযোগিতা করে। সুস্থ সম্পর্ক ও নিজের মনের যত্ন একত্রে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। যা ব্যক্তির মানসিক ও শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

সর্বোপরি সুস্থ থাকতে হলে শরীরের মতো মন ও সম্পর্কের যত্ন নিতে হবে। যদি কারও পারস্পরিক সম্পর্ক অনেক বেশি অবনতি হয়, যা তাদের পক্ষে ঠিক করা সম্ভব নয়, তাহলে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিতে হবে। যারা নিরপেক্ষভাবে সমস্যা সমাধান করতে ও সুস্থ সম্পর্ক তৈরি করতে নির্দেশনা ও পরামর্শ দিতে পারবেন। নিজে ভালো থাকুন এবং অন্যকেও ভালো রাখুন।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleজীবনসঙ্গী ও অন্তরঙ্গতা নিয়ে আমাদের কিছু ভুল ধারণা
Next articleআমার স্ত্রী অস্থির প্রকৃতির

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here