শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের খেলার মাঠ থাকা জরুরি

প্রতিটি মা-বাবা চান তাদের সন্তানকে পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট জিনিসগুলো দিতে। সাধ্যকে অতিক্রম করেও তারা সন্তানের ভালো’র দিকে নজর রাখেন। কিন্তু আমাদের এই প্রিয় দেশটাতে ভালো’র ভেতর সন্তানকে বড় করা কতটা কঠিন সেটা মা-বাবা মাত্রই জানেন। জন্মের পর থেকেই তারা সন্তানকে দিতে চান ভালো (বা ভেজালমুক্ত) খাবার। তিন চার বছর পরই তাদের কপালে চিন্তার ঘাম ঝরে ভালো শিক্ষার (বা সুশিক্ষা) অন্বেষণে। আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও অভিভাবকের ভাবনাই আমাদের আজকের আলোকপাতের বিষয়। এই বিষয়ে কথা বলতে মনের খবরের মুখোমুখি হয়ে­­­­­­ছেন ভিকারুন্নেসা নুন কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক সীমা শারমিন।
পেশাগত জীবনে আপনি কী করছেন?
পেশাগত জীবনে আমি একজন প্রভাষক।
আপনার কয়টি সন্তান?
আমার একটিই সন্তান। ছেলে ওর নাম ‘সাম্য’।
বয়স কত?।
আমার ছেলের বয়স পাঁচ বছর।
ও কি স্কুলে যায়?।
হ্যাঁ ও স্কুলে যায়।
কোনস্কুলে?
‘কিডস টিউটোরিয়াল’-এ।
[int-quote]একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তার মানসম্মত শিক্ষাপ্রদানের পূর্বশর্ত হচ্ছে তার অবকাঠামো। প্রথমে একটি পরিপাটি শ্রেণিকক্ষ, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ অর্থাৎ পরিমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী, আলোবাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকাটা জরুরি। সমানভাবে এগুলোর পাশাপাশি অবশ্যই একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের খেলার মাঠ থাকা জরুরি এবং শিক্ষকদের হতে হবে সহনশীল। তাহলেই একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আমি আমার সন্তানের জন্য যথোপযুক্ত হিসেবে গ্রহণ করব।[/int-quote]
ওর পড়াশুনা বা স্কুল নিয়ে আপনাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা কী?
ওর পড়াশুনা নিয়ে আমার খুব দুশ্চিন্তা হয়, ঢাকা শহরের স্কু্লগুলোর যা অবস্হা! ইচ্ছা আছে সাম্যকে ক্যাডেট কলেজ এ ভর্তি করার।
ক্যাডেট কলেজকে কেন অগ্রাধিকার দিচ্ছেন?
নিয়মকানুন নিয়ে তুষ্ট। শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে তুষ্ট। শিক্ষক নামক অশিক্ষকদের দৌরাত্ম্য নেই। কোনো বিষয়ে কারো হস্তক্ষেপ নেই- এসব কারণে।
‘ঢাকা শহরের স্কুলগুলোর যা অবস্থা’- বলতে আপনি ঠিক কোন অবস্থাটার ইঙ্গিত করছেন?
ঢাকা শহরের স্কুলগুলোর সবগুলোতে অবকাঠামো যথাযথ না। অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আবার আমাদের নিজেদেরও অনেক সমস্যা আছে।
স্কুলগুলোর কী ধরনের সীমাবদ্ধতার কথা আপনি বলতে চাচ্ছেন? আর ‘নিজেদের সমস্যা’ বলতেই বা কোন সমস্যাগুলোকে বোঝাতে চাইছেন?
প্রথমত আমি যেটা অনুভব করি, ঢাকা শহরে অজস্র স্কুল আছে যেখানে খেলার মাঠ নেই। খেলার মাঠ ছাড়া একটা স্কুলে শিশু যদি কেবল পড়ার মধ্যে আটকে থাকে আমার মনে হয় তার পরিপূর্ণ বিকাশ হবে না। বা ঘাটতি থাকবে। এছাড়াও অনেক স্কুলে রয়েছে পড়ার বাড়তি চাপ। যা আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। আর আমাদের সমস্যা হলো আমরা শিশুর মানসিক বিকাশের দিকে নজর দিতে অনেক সময় ভুলে যাই। আমরা নিজেরাও সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে অতিরিক্ত পড়ার চাপটাকেই শ্রেয় মনে করি।
বাচ্চার স্কুলে ভর্তি নিয়ে কি আপনাদেরকে কোনোরকম হয়রানি বা মানসিক চাপের মুখোমুখি হতে হয়েছে?
সাম্য’র স্কুল নিয়ে আমাদের কোনোরকম হয়রানি হয় নি। কিন্তু মানসিক চাপের মধ্যে ছিলাম আমরা। খেলার মাঠ ছাড়া কোনো স্কুল আমাদের পছন্দ না। আবার আমাদের সাধ্যের মধ্যে আমাদের কাছাকাছি পছন্দমত স্কুলও একেবারেই পাচ্ছিলাম না। তাই কিছুটা অস্বস্তির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।
গুটিকয় ‘ভালোস্কুল’-এ ভর্তি নিয়ে অভিভাবক ও তাদের সন্তানদের যুদ্ধের বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
বিষয়টি আমি পুরোপুরি সমর্থন না করলেও কিছুটাতো করতে হয়। এত অল্পবয়সে একটা শিশুকে এমন ঘৃণ্য প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে শিশুটি তার জীবনের মূল্যবান শৈশবের অনেকটুকু আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়। এখানে কিন্তু অভিভাবকদেরও কিছু করার নেই। আমাদের দেশে শিক্ষার যে পদ্ধতি ও পরিবেশের মধ্য দিয়ে যেতে হয় শিশুদের তাতে একটা ভালোমানের স্কুলে সুযোগ না পেলে তো বাচ্চার পুরোজীবনের উপর এর একটা প্রভাব রয়ে যাবে।
কেন কিছু স্কুল বা কলেজ বরাবর অভিভাবকদের আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রে থাকে বলে আপনি মনে করেন?
একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একদিনে তার সাফল্যের চূড়ায় আসতে পারে না। তার জন্য কর্তৃপক্ষকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে সামনে এগুতে হয়। আমাদের দেশের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে অভিভাবকদের সে আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পেরেছে। তাই অভিভাবকগন তাদের সন্তানদের তুলনামূলক ভালো দিকনির্দেশনার জন্য কিছুসংখ্যক প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নেন বলে আমার মনে হয়।
একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কী কী বৈশিষ্ট্য থাকলে আপনি সেটিকে আপনার সন্তানের জন্য বেছে নেবেন?
একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে তার মানসম্মত শিক্ষাপ্রদানের পূর্বশর্ত হচ্ছে তার অবকাঠামো। প্রথমে একটি পরিপাটি শ্রেণিকক্ষ, শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ অর্থাৎ পরিমিত সংখ্যক শিক্ষার্থী, আলোবাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকাটা জরুরি। সমানভাবে এগুলোর পাশাপাশি অবশ্যই একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের খেলার মাঠ থাকা জরুরি এবং শিক্ষকদের হতে হবে সহনশীল। তাহলেই একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আমি আমার সন্তানের জন্য যথোপযুক্ত হিসেবে গ্রহণ করব।
আপনাকে ধন্যবাদ
ধন্যবাদ আপনাকেও।
ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে আমরা আমাদের স্বভাবসিদ্ধতায় পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের দিকেই দৃকপাত করে থাকি। আর তাই পঞ্চম শ্রেণির একটা পাবলিক পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেও নাস্তানাবুদ হতে হয় শিশুদের। কিন্তু শিক্ষা কি কেবল পরীক্ষার ফল? ভালো বিদ্যালয় কি কড়া শিক্ষক, নিত্যদিন খাতা বোঝাই হোমওয়ার্ক, উপর্যুপরি ক্লাস পরীক্ষা- এইসবব? এগুলো পুরোনো প্রশ্ন। তবুও এই প্রশ্নগুলোর ওপর দাঁড়িয়েই খুঁজতে হবে আমাদের ভবিষ্যত সন্তানদের উপযোগী শিক্ষাঙ্গন-শিক্ষার পরিবেশ। আর কে না জানে ভাবনার বিস্তৃতিই খুঁজে দিতে পারে নতুন পথের মুখ।
সাদিকা রুমন, বিশেষ প্রতিবেদক
মনেরখবর.কম

Previous articleসিলেট এম.এ.জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে 'সেক্সুয়াল মেডিসিন আপডেট' শীর্ষক সভা অনুষ্ঠিত
Next articleঅটিজম আক্রান্তদের মঞ্চায়নে নৃত্যনাট্য 'মানচিত্রের জন্য'

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here