মানসিকভাবে অবমাননাকর সম্পর্কের কিছু সতর্কীকরণ নিদর্শন

অপব্যবহার অর্থ সবসময় শারীরিক আঘাত কিংবা মৌখিক আক্রমণ নয়। এমনকি এটা খুব সূক্ষ্ম এবং প্রচ্ছন্ন অবস্থায়ও থাকতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বর্তমান সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিজেকে খুব দ্বিধান্বিত মনে হতে থাকে। আবেগের অপব্যবহার এমন এক ধরনের অপব্যবহার, যার শিকার প্রায়ই একজন মানুষ হতে পারে এবং সে সম্পর্কের ব্যাপারে আরো সুরক্ষিত আচরণ করতে পারে।
আবেগের অপব্যবহার তখনই ঘটে, যখন সম্পর্কের একপক্ষ অন্যপক্ষের সম্পর্কিত তথ্যগুলো নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই ব্যক্তির বাস্তবতাকে নিজের মতো করে পরিচালনা করতে চায়। এতে প্রায়ই খুব শক্তভাবে মানসিক কার্যক্রম পরিচালনা করার বিষয়টি জড়িত থাকে এবং অপর পক্ষকে আবেগের অপব্যবহারকারীর ইচ্ছাপূরণের জন্য জোর করা হয়।
সবধরনের আবেগের অপব্যবহার আত্ম-বিশ্বাসের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। অপব্যবহারের শিকার ব্যক্তি অসহায় এবং নিরাশ বোধ করতে শুরু করে। এর পাশাপাশি বেশির ভাগ আবেগের অপব্যবহারকারী অপরপক্ষকে এটা মানতে বাধ্য করে যে, সকল প্রকার দোষ অপব্যবহারের শিকার ব্যক্তিটির। যেভাবেই হোক, অপব্যবহারের শিকার ব্যক্তিটি ঘটনার জন্য দায়ী।
আবেগের অপব্যবহার প্রায়ই “গ্যাসলাইটিং” বলে অভিহিত করা হয়। এটি ঘটে যখন অপব্যবহারের শিকার ব্যক্তির নিজের স্মৃতি, পর্যবেক্ষণের উপর সন্দেহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করা হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আবেগের অপব্যবহারকারী পূর্বের অপব্যবহারের ঘটনা অস্বীকার করে এবং অপরপক্ষকে দ্বিধান্বিত করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
আবেগের অপব্যবহারের একটি সাধারণ ধরন হলো, খুব সূক্ষ্ম বুদ্ধিমত্তার সাথে বিভিন্ন আবেগপূর্ণ শব্দের ব্যবহার। অপব্যবহারকারী এই শব্দগুলো (ভালোবাসা, বিশ্বাস) বারবার ব্যবহারের মাধ্যমে আরো বলীয়ান হয়ে ওঠে এবং অপরপক্ষকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। এমনকি মাত্রাতিরিক্ত আন্তরিক আচরণ, খারাপ আচরণকে মিটিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা প্রায় সব অবমাননাকর সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এমনকি অপরপক্ষ এই আশায় সম্পর্ক চালিয়ে নিতে থাকে, কখন এমন ঘটনা ঘটবে এবং অপব্যবহারকারী জানতে পারবে।
আবেগের অপব্যবহার নিম্নোক্তভাবে হতে পারে-

  • অপমান এবং বিব্রত করা।
  • বারবার অপরপক্ষকে নীচু দেখানো।
  • অতিরিক্ত সমালোচনা করা।
  • যোগাযোগে অসম্মতি।
  • এড়িয়ে চলা অথবা বিভিন্ন বিষয়ে বর্জন করা।
  • বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক।
  • বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সাথে উত্তেজক আচরণ করা।
  • প্রতিনিয়ত সার্কাজম করা এবং অপ্রীতিকর স্বরে কথা বলা।
  • অহেতুক ঈর্ষাবোধ।
  • অতিরিক্ত মেজাজ প্রদর্শন।
  • অপরপক্ষকে নিয়ে নীচু মানের কৌতুক করা।
  • সম্পর্কের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ করা।
  • কর্তৃত্ব প্রদর্শন এবং নিয়ন্ত্রণ করতে চাওয়া।
  • অপরাধী মনে করানো।
  • সবকিছুতে অপরপক্ষকে দায়ী করা।
  • পরিবার এবং বন্ধুদের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা।
  • নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সম্পদের ব্যবহার
  • আত্মহত্যার ভয় দেখানো।

আবেগের অপব্যবহারের শিকার ব্যক্তিটিকে মনে রাখতে হবে যে এটি তার দোষ নয়। অপব্যবহারকারী নেতিবাচকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে থাকে এবং এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যেন অপরপক্ষ তার ভুলের জন্যই এরূপ আচরণ পাচ্ছে। অপব্যবহারকারী জানে, সবারই দুর্বলতা আছে এবং সেটাকে তারা ব্যবহার করে। এমনকি জনসম্মুখে এবং ব্যক্তিগত পরিস্থিতিতে তাদের আচরণে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
তথ্যসূত্র: সাইকসেন্ট্রাল ডটকমে প্রকাশিত Marni Feuerman এর রচনা অবলম্বনে লিখেছেন সুপ্তি হাওলাদার।
লিংক: https://psychcentral.com/blog/21-warning-signs-of-an-emotionally-abusive-relationship/?li_source=LI&li_medium=popular17

Previous articleবিশ্বকাপ দেখার মনো-সামাজিক কারণ
Next articleমানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যের সাথে অঙ্গীভূত করতে হবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here