বিষণ্ণতা বলতে আপনি যা ভাবছেন সেটা কি আদৌ সঠিক?

0
110
বিষণ্ণতা বলতে আপনি যা ভাবছেন সেটা কি আদৌ সঠিক?

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিষণ্ণতা বিষয়ে সার্বজনীন যে ধারণা প্রচলিত আছে সেটি সঠিক নয়। বিষণ্ণতা শুধু মন খারাপ বা অসুখী জীবনযাপন নয়; বরং আরও বিষদ কিছু।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষণ্ণতা হল মনের এমন এক অবস্থা যা ভাষায় প্রকাশ করা খুবই কঠিন। বিষণ্ণতা মানে শুধু মন খারাপ, দুশ্চিন্তা বা অসুখী জীবন যাপন করা নয়। এটি হল মনের এমন এক নিগূঢ় অবস্থা যা ধীরে ধীরে একজন ব্যক্তিকে অস্বাভাবিক জীবন যাপনে বাধ্য করে এবং এর চূড়ান্ত পর্যায়ে ব্যক্তি এতোটাই মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে যে তার মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

মানুষের সাময়িক নিরাশা ধীরে ধীরে বিষণ্ণতায় রূপ নেয়। যারা নিরাশায় ভোগেন তারা মাঝে মধ্যেই  অকারণ বিষাদ বা দুঃখের মধ্য দিয়ে দৈনন্দিন জীবন যাপন করেন। তাদের দৈনন্দিন কাজ কর্ম, অন্যদের সাথে মেলামেশা, চাকরী করা, নিজের চাহিদা গুলো মেটান বা অন্যান্য স্বাভাবিক সব কাজকর্মই চলতে থাকে। বলা যায় তাদের সমস্যা চূড়ান্ত পর্যায়ে তখনও পৌঁছে পারেনি। তারা ভাবেন যে কোন এক সময় তাদের এই দুঃখের সময় শেষ হবে এবং তারা মানসিক প্রশান্তি লাভ করবেন।

এভাবেই বিষাদের সাথে তাদের জীবনের সময় অতিবাহিত হয়। কিন্তু বিষণ্ণতা এর থেকে অনেক গুরুতর এক মানসিক অসুস্থতা। যে ব্যক্তি বিষণ্ণতায় ভোগেন তিনি চলমান উদ্বেগ এবং শঙ্কার এক গভীর সংকটাপন্ন অবস্থার মধ্য দিয়ে যান। তার কাছে মনে হয় পৃথিবীতে তিনিই সব থেকে বেশী পীড়ার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছেন এবং তার জীবন অন্যান্য সবার থেকে আলদা। তাদের মনে হয় অন্যান্যদের কাছে তারা মূল্যহীন, তুচ্ছ, নিরাশ, এবং এসব সমস্যা সমাধানের অযোগ্য।

যারা বিষণ্ণতায় ভোগেন তাদের ঘুমের ঘাটতি দেখা দেয়। তারা গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকেন, ফলে সকালে ঘুম ভেঙ্গে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করেন। আবার অনেকে অনেক বেশী পরিমাণ ঘুমিয়েও বিশ্রান্ত অনুভব করতে পারেন না। এটা মনস্তাত্ত্বিক এমন এক অবস্থা যেখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া খুবই দুরূহ।

যারা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত তাদের কাছে শুধু  নিজেকে অন্য সবার থেকে বিচ্ছিন্নই মনে হয় তা নয়, তারা প্রকৃতপক্ষে অন্যদের থেকে পৃথক আচরণও করেন। যারা বিষণ্ণতা মুক্ত জীবন যাপন করেন, কোন বিপদের সম্মুখীন হলেও তারা জানেন যে এটাই শেষ নয়। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় অবশ্যই আছে। কিন্তু যারা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত তাদের আত্মবিশ্বাসের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায় থাকে। তারা প্রতিনিয়ত এই দুশ্চিন্তায় থাকে যে তাদের দ্বারা কোন ভুল যেন না হয়ে যায়।

এই দুশ্চিন্তা বাতিক তাদের বিষণ্ণতার মাত্রা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। তারা সারাক্ষণ ভাবতে থাকেন, তারা যা করছেন তা সঠিক নয়। সব কিছু সঠিক ভাবে করার এই দুষ্প্রবণতা তাদের সব স্বাভাবিক কাজকর্মকে ব্যাহত করে, তারা গুরুতর সমস্যার মধ্য দিয়ে দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করেন এবং দুর্ভাগ্যবশত অনেক সময় তাদের মানসিক স্থিতি এতোটাই গুরুত্বর হয় যে তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন।

এটি ব্যক্তিকে এক অসাড় জীবনের দিকে ঠেলে দেয়। ব্যক্তি শুধু শারীরিক ভাবেই শক্তিহীন হয়ে পড়ে তা নয় বরং তার মনস্তাত্ত্বিক দশাও অসাড় হয়ে যায়। মানসিক পিড়া যেন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে। তাই বলা যায়, বিষণ্ণতা এক মানসিক, শারীরিক, সামাজিক, এবং আত্মিক ব্যাধি, আক্রান্ত না হলে যার দুষ্প্রভাবের মাত্রা অনুমান করা খুব কঠিন।

অনেকেই ভেবে বসেন এর কোন চিকিৎসা বা এর থেকে পরিত্রাণের কোন উপায় নেই। আবার অনেকে চিকিৎসার ইচ্ছে থাকলেও শুধুমাত্র সামাজিক সম্মানহানীর ভয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে আপত্তি করেন। আমাদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই এখনও বিষণ্ণতা সহ অন্যান্য মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাযুক্ত একজন মানুষকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেন। এটাই মূল সমস্যা যে কারণে অনেকেই এই সমস্যা নিজের মাঝে সুপ্ত রাখেন যা ধীরে ধীরে তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। এই আধুনিক যুগে আমাদের সবার উচিৎ বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ান। তাদের রোগ মুক্তির লক্ষে সহায়তা করা। তারা যে পাগল বা উন্মাদ নয়, এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে তাদের এই মানসিক অস্থিরতা যে পূর্ণরূপে নিরাময় হয় এই সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। সুস্থ সুন্দর একটা জীবন সবার অধিকার।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleমানুষ কেন ভয় পায়?
Next articleমাদকাসক্তি প্রতিরোধে পরিবারের ভূমিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here