আত্ম-অনুরাগের মূলসূত্র

“It’s surprising how many persons go through life without ever recognizing that their feelings toward other people are largely determined by their feelings toward themselves, and if you’re not comfortable within yourself, you can’t be comfortable with others.”
– Sidney J. Harris
আপনাকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসবে, এমন সঙ্গী খুঁজে পাওয়া আসলেই কঠিন, যদি না আপনি নিজেকে ভালোবাসেন। আপনি নিজের কাছে সুখী না হলে অন্য কারো সাথে সুখী হতে পারবেন না। নিজেকে ভালবাসা হলো নিজের কাছে নিজের স্বীকৃতি, সহানুভূতি ও ভালো ধারণা। কারো কাছে নিঃশর্ত ভালোবাসা পাওয়া প্রায় অসম্ভবই। একটি ভালোবাসাময় পরিণত সম্পর্কের ভিত্তিই হলো নিজেকে ভালোবাসা। কিন্তু কেন? কারণ আপনি যদি নিজেকে না ভালোবাসেন, তবে অন্যদের কাছে ভালোবাসা আশাও করতে পারেন না।
তবে নিজেকে ভালোবাসা মানে অবশ্যই স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিকতা বা আত্মমুগ্ধতা বোঝায় না। এটা অনেকটা যোগ্যতা স্বীকার করে নেওয়ার মতো। এর অর্থ হলো, আপনি ওই যোগ্যতাগুলোর প্রতি যত্নশীল হবেন। আত্ম-অনুরাগ বা নিজেকে ভালোবাসাই অন্যদের কাছে স্নেহ ও আকর্ষন পাওয়ার বুনিয়াদ।
আত্ম-অনুরাগের মূলভিত্তি ৭টিঃ
১।নিজের যোগ্যতায় বিশ্বাস রাখুনঃ কেউই কম প্রেমে জন্মায় না। আপনার সব ভালো ও খারাপ অভিজ্ঞতাগুলোই নিজেকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা রাখে। ভালো সংবাদ হলো, আপনার অন্তস্থল যে সত্যিই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য, এটা বিশ্বাস করাই নিজেকে ভালোবাসা। আর নিজের সম্পর্কে যে অপ্রিয় বিষয়গুলো জেনেছেন, সেগুলো চেষ্টা ও প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে অবশ্যই পরিবর্তন করা সম্ভব।
২। ভালোবাসার উপযোগী থাকতে চেষ্টা করুন: গবেষকগণ বারবার দেখিয়েছেন যে, স্পষ্ট আত্মমর্যাদা ধরে রাখার জন্য অবশ্যই ভালো কাজের সাথে যুক্ত থাকতে হবে। যতটা পারবেন পৃথিবীর জন্য ভালো কিছু করে যান, সেটা কঠিন হয়ে দাঁড়ালে অল্প করেই শুরু করুন। প্রায় প্রতিদিন কারো জন্য ভালো কিছু করুন, স্বেচ্ছাশ্রম দিন। এতে আপনার নিজের ওপর বিশ্বাস বাড়বে এবং এটি সেই অপ্রিয় বিষয়গুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
৩। নিজের জন্য অপছন্দনীয় বিষয়গুলোর প্রতি দায়িত্ববান হোন: মনে রাখবেন, আপনার অন্তস্থল ভালোবাসার যোগ্য। যে বিষয়গুলো এতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সেগুলো নিয়ে কাজ করুন। কারো সাথে ভুল করে থাকলে ক্ষমা চেয়ে নিন ও সম্পর্কগুলো ভালো রাখুন। ভালোবাসা পাবার মত আচরণ করুন। শুরুতে এটা নকল মনে হলেও একই আচরণ বারবার করতে থাকলে একসময় এটি আসলই মনে হবে।
৪। উপযুক্ত না হওয়ার নিজেকে ছাড় দিনঃ কোনো মানুষই নিখুঁত নয়। ভালোবাসা পাবার জন্য যে নিখুঁত হতে হবে এমনটা না। যারা নিজেদের নিখুঁত ভাবে, তারা অতিরিক্ত আত্মমুগ্ধ হয়ে থাকে। নিজেকে ভালোবাসা মানেই হলো, আপনি আসলে যেমন তেমনই গ্রহণ করা। আপনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করাটাই মূখ্য বিষয়।
৫। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুনঃ আপনি যে অন্যের ভালোবাসা পাবার যোগ্য সেটা বোঝানোর অন্যতম ভালো, সহজ ও শক্তিশালী পন্থা হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। চাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রকাশ করতে পারেন। নিজেকে আরো গ্রহণযোগ্য করে তোলার আরেকটি উপায় হলো, একটি সুস্থ খাদ্যাভ্যাস, কিছু ব্যায়াম আর পর্যাপ্ত ঘুম। এগুলোই আপনাকে নিজের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলবে।
৬। হাসিমুখে থাকুন: ১৫০ বছর আগে কবি  Ella Wheeler লিখেছিলেন, “হাসো, পৃথিবী তোমার সাথে হাসবে। কাঁদো, তুমি একাই কাঁদবে।বিজ্ঞানীরাও বলেন, হাসিই মানুষকে সুস্থ রাখতে পারে, নিজেকে আরো ভালোভাবে উপস্থাপন করতে সাহায্য করে।
৭। একটু থামুন এবং জীবনের স্বাদ নিনঃ ছন্দহীন কর্মময় জীবন আপনাকে নিস্তেজ করে দেয়। খেয়াল রাখুন, আপনার কাজ যেন আপনার আনন্দের সময়গুলো কেড়ে না নেয়। আপনার শখ, বাইরের কাজ, সময় উপভোগ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে মনোযোগ দিন।
অন্যদের কাছে ভালোবাসা চাওয়াটা ভুল। এরকম হলে নিজেকে অনেকটা বিলিয়ে দেয়ার মতো হয়ে যায়। আপনার ক্ষমতা আছে, আপনি সেটা প্রয়োগ করবেন। নিজের অন্তস্থলকে আপনিই সমৃদ্ধ করতে পারেন। আত্ম-অনুরাগ ও গ্রহণযোগ্যতার ব্যবহার যত বাড়াবেন, ততটাই ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে পারবেন, ততই মানুষ আপনাকে ভালোবাসবে।
তথ্যসূত্র: সাইকসেন্ট্রালে প্রকাশিত  Marie Hartwell-Walker -এর লেখা থেকে ভাষান্তর করেছেন সাদিয়া শামস।
লিংক: https://psychcentral.com/blog/the-basics-of-self-love/

Previous articleশিশু একাডেমী সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মোহিত কামাল
Next articleমনোরোগবিদ্যায় উচ্চশিক্ষা নিয়ে স্বর্ণপদক অর্জন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here