“ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু”…. কবি ক্লান্তির জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন।আসলে এই অলসতা,কিংবা এই ক্লান্তি সেই অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত কখনোই আমাদের ছেড়ে যায় নি।বরং বর্তমান সময়ে আমাদের যেন আরো বেশী করে জেঁকে বসে আছে। ছেলে কিংবা বুড়ো সবার মুখেই যেন একটা কথাই কমন, “আলসে লাগে” বা “এত ক্লান্ত লাগে”।
কেন আলসে বা ক্লান্তি লাগে এতক্ষণে পূর্বের লেখগুলো থেকে আপনারা জেনে ফেলেছেন নিশ্চয়ই।
তারপরও অলসতা কাটানোর উপায় বলার আগে ছোট্ট করে জেনে নেই,কেন অলসতা হয়।
অলসতা, বা আলসেমি সাধারণত “ক্লান্তি” বা “দূর্বল লাগা” এই লক্ষণ দ্বারাই চিহ্নিত করা হয়, যা কি না শারীরিক এবং মানসিক উভয় ক্ষমতাকে নির্দেশ করে। যদিও মাঝে মাঝে দীর্ঘ পরিশ্রমের পর,বা দীর্ঘ সময় কর্মহীণ থাকাও অলসতার একটি কারন। তাছাড়া অন্য কারনে ও ক্লান্তি আসতে পারে।
তবে দীর্ঘস্থায়ী অলসতা কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য হতে পারে,তাই এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিৎ। এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।সাধারণত অপর্যাপ্ত ঘুম,দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস,খারাপ খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ না করার কারনে আসতে পারে অলসতা।
এছাড়াও রক্তশূন্যতা, থাইরয়েডজনিত সমস্যা, ডায়াবেটিস, যে কোনো সংক্রমণ বা ক্রনিক শারিরীক রোগ, ডিপ্রেশন,উদ্বেগ ইত্যাদি কারনেও অলসতা বা ক্লান্তি বোধ করা স্বাভাবিক।তাই নিজের অলসতা বা ক্লান্তির কারন খুঁজে বের করুন,এবং অলসতা ঝেড়ে ফেলে সুস্থ থাকুন।
আসুন এবার জেনে নেই,পেশাগত জীবনে অলসতা কাটানোর উপায়।আমরা যারা কর্মজীবি, তারা দিনের একটা বড় অংশই কাটাই আমাদের কর্মস্থলে। কর্মস্থলে অলসতা অফিসের কাজে ও ব্যাক্তিগত জীবনেও বেশ নেগেটিভ প্রভাব ফেলে।তাই অলসতা কিভাবে ঝেড়ে ফেলবেন,আসুন দেখি।
➤আপনি দীর্ঘদিন যাবৎ অলসতায় ভুগলে একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিন,জেনে নিন আপনি কোনো রোগে ভূগছেন কি না।এবং সেই মতো চিকিৎসা নিন।
➤ যদি দেখেন শারীরিক বা মানসিক কারন নয়,আপনার দৈনন্দিন জীবনাচরণের কারনে কিংবা অলসতা আপনার অভ্যাস হয়ে গেছে,তখন কিভাবে দূর করবেন অলসতা,জেনে নিন:
১। পর্যাপ্ত ঘুমানোর অভ্যাস করুন: প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দিনে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন, দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুমের অনিয়মে আপনার শরীরে দানা বাঁধতে পারে রোগ, অলসতা তার একটা লক্ষন তখন। তাই পর্যাপ্ত ঘুমান।
২। নিয়মিত প্রচুর পানি করবেন।খাদ্য তালিকায় সুষম খাবার,সাথে প্রচুর ফলমূল (যেটা সহজে পাওয়া যায়) ও সব্জি খাবেন।
৩। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন। সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন।
৪। আপনি নিজে এবং আপনার চারপাশ, সেটা বাড়ি হোক বা আপনার কর্মক্ষেত্র, সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। এতে আপনি কাজ করতে আনন্দ পাবেন,ফ্রেশ লাগবে।
৫। প্রতিটি দিনের শুরু করুন ইতিবাচক প্রেরণা দিয়ে। নিজেকে নিজে বলুন, আমি পারবোই। আপনার মধ্যকার পজিটিভ দিকগুলো ভাবুন।এটি আপনাকে ফুরফুরে মেজাজে থাকতে সাহায্য করবে।
৬। আশপাশের একঘেয়ে পরিবেশ একটু বদলে ফেলুন। সবুজ গাছগাছালি, প্রিয় কোনো চিত্রকর্ম কিংবা কোনো শোপিস সাজিয়ে মোহনীয় করে তুলতে পারেন নিজস্ব জায়গা।
৭। ইতিবাচক মানুষের সঙ্গে মিশতে চেষ্টা করুন সব সময়। এমন মানুষের সঙ্গে মিশুন যিনি আপনাকে অনুপ্রেরণা, সাহস ও ভালোবাসা দিবেন।নেগেটিভ চিন্তার মানুষ থেকে দূরে থাকুন।
৮। কর্মতালিকা প্রণয়ন করুন। কোন কাজটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেটি নির্ণয় করার চেষ্টা করুন। এবার সে অনুযায়ী কাজ করুন। সহজ কাজটি দিয়ে কাজ করা শুরু করুন। কঠিন ও জটিল বিষয়গুলো সময় নিয়ে ধীরে-সুস্থে করুন।মনে রাখবেন,যে কোনো বিষয় সহজভাবে নিলে মানসিক চাপ কম বোধ হয়,কাজ করাটা সহজ হয়।
৯। সময়ের মূল্য দিন। অবসর সময়টাও আপনার কোনো পছন্দের কাজ করে কাটান, সেটি হতে পারে আপনার প্রিয় বই পড়া, লেখালিখি করা কিংবা ছবি আঁকা।
১০। নিজের প্রত্যেকটি কাজের একটি নির্দিষ্ট টার্গেট বা সময়সীমা ঠিক করুন। এক কাজের সময়ে অন্য কাজ করে কখনো সে সময়টি নষ্ট করবেন না। মনে রাখবেন, প্রত্যেকটি মুহূর্তই মূল্যবান।
১২। নিজেকে ট্রিট দিন।
গবেষণায় দেখা গেছে, তাৎক্ষণিক পুরষ্কার বা রিওয়ার্ড কঠোর পরিশ্রম বা কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে।
আপনি আপনার কর্মক্ষেত্রে কাজগুলো করার জন্য কাজকে ছোট ছোট টার্গেটে ভাগ করুন।প্রতিটি টার্গেট পূরণ হলে নিজেকে ট্রিট দিন।হতে পারে সেটা আপনার প্রিয় কফি,কোনো কসমেটিকস, কোনো খাবার ইত্যাদি।এতে পরবর্তী টার্গেট পূরণে উৎসাহ বাড়ে।
ডা.রেজওয়ানা হাবীবা
সহকারী অধ্যাপক, মনোরোগবিদ্যা বিভাগ
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, সিলেট।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনেরখবর-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য মনেরখবর কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।
সিরিয়ালের জন্য ভিজিট করুন- এপোয়েন্টমেন্ট
আরও দেখুন-