দাম্পত্য কলহ ও মানসিক রোগ : কমিয়ে আনুন মনের দূরত্ব

0
161

শত শত জাতিগোষ্ঠী, পরিবার-সমাজ, রাষ্ট্র মিলে এই পৃথিবী। পৃথিবীর প্রত্যেক প্রান্তে রয়েছে মানবসমাজ। যা নানান রকম সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছে। তারমধ্যে একটা হলো দাম্পত্য সম্পর্ক।

সম্ভবত পৃথিবীতে সবথেকে জটিল ভঙ্গুর এবং একই সাথে মজবুত সম্পর্ক দাম্পত্য। নেই কোনো রক্তের বন্ধন, তারপরও একসঙ্গে কেটে যায় যুগের পর যুগ। মানুষের জীবনের সবচেয়ে আনন্দময় এবং কষ্টের অংশ হয়ে ওঠে এই দাম্পত্য সম্পর্ক।

নানা কারণে এই সম্পর্কে কখনো কখনো কলহও হয়। সেই কলহ থেকে হয় বিচ্ছেদ, পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা এবং তৈরী হয় মানসিক অসুস্থতার মতো সমস্যা। আবার সুন্দর এই সমাজটা টিকে আছে এই সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করেই।

কেউ কেউ বলতে চান ভালোবাসাহীন দাম্পত্য জীবনের চেয়ে একা থাকা ভালো। কিন্তু কেউ একা থাকতে পারে না। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে একাকীত্ব পেয়ে বসে মানুষকে। মানুষ আসলে সঙ্গী ছাড়া ভালো থাকতে পারে না। এজন্যই মূলত দাম্পত্য সম্পর্কে মানুষ নানা চাওয়া-পাওয়া ও মতের অমিল সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত কেউ কাউকে ছেড়ে যেতে চায় না।

তারপরও কখনো ছেড়ে যেতে হয়। কমবেশি কলহ সব পরিবারেই হয়। এসব কলহ থেকে বেশ কিছু মানসিক সমস্যা তৈরী হতে পারে। এই যেমন : বিষণ্ণতা, অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা, ফোবিয়া, হিস্টিরিয়া, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি। সুতরাং এই সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখতে হলে পরিচর্য করতে হবে। দাম্পত্য কলহ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক দাম্পত্যে কেন কলহ হয়?

দাম্পত্য কলহের কারণ

মতপার্থক্য : খুবই স্বাভাবিকভাবেই দু’জন মানুষের পারস্পরিক মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু একসঙ্গে থাকতে হলে, মতপার্থক্য এড়িয়ে পারস্পরিক মতের প্রতি সহনশীল এবং দ্বন্দ্ব সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। এতে দু’জনকেই ছাড় দিতে হবে। যতটা সম্ভব মতপার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে। কেননা মতের সংঘর্ষ চলতে থাকলে দাম্পত্যে অশান্তি তৈরী হবে।।

পরিবারকে ডমিনেট করা : পরিবারকে ডমিনেট করবে। আমাদের সমাজে সাধারণত পুরুষরা Dominate করে। আজকের যুগে উচ্চশিক্ষিত স্বাবলম্বী অনেক মেয়ে তা মেনে নিতে পারছে না। এতে দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। একজনকে এখানে নমনীয় হতে হবে। ইগো একটি মারাত্মক বিষয়। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যার বুদ্ধি সামান্য বেশি থাকে, তার Dominate বেশি হবে।

আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং বাস্তবতার পার্থক্য : বিয়ের আগে অনেক বড় বড় স্বপ্নে বিভোর, বাস্তব জীবনে এসে দেখে অন্য চিত্র। বিয়ের আগে অতিরিক্ত আবেগ কাজ করে। অনেকেই ভেবে চিন্তে জীবনসঙ্গী বাছাই করতে পারে না। পরবর্তীতে আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং বাস্তবতার বিশাল পার্থক্য, মানসিক চাপে, দ্বন্দ্বের কারণ হয়।

যৌন জীবনে অতৃপ্তি : দীর্ঘদিন ধরে যৌন জীবনে অতৃপ্ত থাকলে, সম্পর্কের ভয়াবহ অবনতি ঘটে। বিশেষ করে স্ত্রীরা তা প্রকাশ করতে পারে না।

অতিরিক্ত ব্যস্ততা : এটা সম্পর্ক অবনতির একটা বিরাট কারণ। অনেক ক্ষেত্রে সময় না থাকলেও জীবনসঙ্গীর ওপর অতিরিক্ত এবং অযৌক্তিক চাপ প্রয়োগও দাম্পত্য কলহের কারণ। কাজের বাইরে যেটুকু সময় আছে তা পরিবারকে দেয়া উচিত এবং দিতে পারলে সম্পর্কের উন্নতি ঘটে।

শেয়ারিংয়ের অভাব : অনেক স্বামী-স্ত্রী তাদের মনের সুখ দুঃখগুলো নিজেদের মধ্যে শেয়ার করতে পারে না। শেয়ারিং না থাকলে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে, সমাধান বের হবে না।

দাম্পত্যবহির্ভূত সম্পর্ক : বর্তমানে অনেকেই দাম্পত্য বা বিবাহবহির্ভূত অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে। যা ভয়াবহতম দাম্পত্য দহনের কারণ। এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন না করলে পরনারী পরপুরুষে আসক্তি দাম্পত্য জীবনে ফাটল তৈরি করবে এবং শেষ পর্যন্ত তা ভেঙে যাবে।

স্বামী বা স্ত্রীর শারীরিক বা মানসিক রোগ : দাম্পত্য দহনে লিপ্ত দায়ী স্বামী বা স্ত্রী যে কোনো একজন বা দু’জনই মানসিক রোগে আক্রান্ত থাকতে পারে। আপনার জীবনসঙ্গীর অস্বাভাবিক আচরণের কারণ হতে পারে মানসিক রোগ।

নেশাদ্রব্যে আসক্তি/ইন্টারনেট Facebook আসক্তি : যারা নেশা করে, তারা তাদের পার্টনারকে অমূলক সন্দেহ করে, শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন করে। শুরুতে বন্ধু পরে পরিণত হয় অবৈধ প্রেমে।

যৌথ পরিবার : যৌথ পরিবার দাম্পত্য কলহের কারণ হতে পারে অনেক ক্ষেত্রে। এর যেমন সুবিধা আছে, তেমনি অসুবিধাও কম নয়। এ ক্ষেত্রে ব্যালেন্স করা বেশ কঠিন বিশেষ করে মেয়েদের।

কীভাবে দাম্পত্য কলহ দূর করবেন : মতামতের পার্থক্য কমিয়ে আনা, দায়িত্ব পালন, পরনারী বা পরপুরুষে সম্পর্কে না জড়ানো, শারীরিক মানসিক নির্যাতন না করা, পার্টনারকে পর্যাপ্ত সময় দেয়া। প্রয়োজনে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে Couple Therapy নিতে হবে। দু’জনকেই Co-Operative হতে হবে। সব চেয়ে বড় কথা হলো মনের দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারলেই দাম্পত্য কলহ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভাব।

সূত্র : ইন্টারনেট (সংযোজিত এবং পরিমার্জিত)

/এসএস/মনেরখবর/

Previous articleঢাবিতে চলছে ‘পজিটিভিটি এন্ড হ্যাপিনেস’ ওয়ার্কসপের রেজিস্ট্রেশন
Next articleবাংলাদেশে প্রথমবার রেটিনা দিবস পালিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here