দুঃখের অনুভূতি প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই আসে। সময়ে সময়ে সবাই দুঃখ অনুভব করে। দুঃখ একটি স্বাভাবিক আবেগ যা সাময়িকভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হওয়া বা যন্ত্রণার কারণ হতে পারে। কিন্তু বিষণ্ণতা আলাদা বিষয়।
জীবনের এক বা একাধিক ঘটনায় মানুষ দুঃখ বোধ করতে পারে। যেমন চাপ অনুভব করা, হঠাৎ ব্যক্তিগত ব্যর্থতা বা প্রিয়জনের মৃত্যু। অন্যান্য আবেগের মতো, দুঃখ অস্থায়ী এবং সাধারণত সময়ের সাথে সাথে দূর হয়ে যায়।
কিন্তু যখনই এটা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয় তখনই এটা বিষণ্ণতায় রুপ নেয়। যারা দুঃখী তারা হয়তো কান্নাকাটি করে, তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলে, অথবা হাস্যরস ব্যবহার করে নিজেদের প্রফুল্ল করে কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু যদি বিষণ্ণতা পেয়ে বসে তখন আর ওই ব্যক্তি নিজের স্বাভাবিক কাজকর্ম ঠিক রাখতে পারে না।
এজন্য বিষণ্ণতা যাতে নিজেকে গ্রাস করতে না পারে তাই দুঃখকে মোকাবেলা করতে হবে। দুঃখকে স্থায়ী হতে দেয়া যাবে না। দুঃখিত হওয়ার সময়টাকে কাটিয়ে উঠতে হবে। দুঃখের অনুভূতিকে প্রশমিত করতে হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক কীভাবে দুঃখকে মোকাবেলা করা যায় :-
দুঃখ প্রকাশ করুন : আপনি যদি কোনো কারণে দুঃখ অনুভব করেন তবে সেটা প্রকাশ করা উপায় খুঁজে বের করুন। নিজের দুঃখের কথা কারো কাছে বলতে পারলে মন হালকা হয়, দুঃখ প্রশমন হয়। এটা বিষণ্ণতা এড়াতে কাজ করে।
দুঃখকে অনুমতি দিন : দুঃখ এমন একটা বিষয় যা স্বাভাবিক এবং অনিবার্য। এটাকে আটকে রাখলে তা আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে। দুঃখিত হয়েও সুখের ভান না করে কিছু সময় দুঃখকে অনুভব করুন। রিফ্রেশ করুন নিজেকে। ভালো লাগবে তাহলে।
দুঃখকে মেনে নিন : দুঃখ পাওয়ার মতো কিছু ঘটে গেলে সেটাকে মেনে নিন। কান্না করুন কারো সাথে নিজের দুঃখকে ভাগ করে নিন। মন খুলে কাউকে বলুন দুঃখিত হওয়ার কথা। পেতে পারেন এমন কোনো শান্তনা যা আপনার দুঃখকে প্রশমিত করবে।
দু:খ অনুভবের সময় নির্ধারণ করুন : দুঃখ অনুভব করার জন্য কোনো একটা সময় নির্ধারণ করুন। পরিকল্পনা করুন ওই সময় দুঃখকে অনুভব করবেন, প্রশ্রয় দিবেন। সেটা হতে পারে চিন্তা, মেডিটেশন বা কিংবা কোথাও ঘুরতে যাওয়ার মাধ্যমে। এভাবে দুঃখের বোধ কমিয়ে আনতে বা এড়িয়ে যেতে পারেন।
চিন্তা করুন : দুঃখের কারণ কী হতে পারে সে সম্পর্কে চিন্তা করুন। কেন আপনি দুঃখ পেলেন ভবিষতে তার থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজুন। প্রয়োজনে লিখে রাখুন। দুঃখিত হওয়ার ঘটনার পেছনের কারণ ও প্রেক্ষাপট বুঝতে পারলে নিজেকে শান্তনা দেওয়ার সূত্র খুঁজে পাবেন এবং সুখের অনুভূতি খুঁজার রাস্তা পাবেন।
প্রকৃতিতে হাঁটুন : প্রকৃতিতে কিছু সময় হাঁটুন। শুধু হাঁটবেন না, ভাববেনও। যেকোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে পারেন। সবুজ ঘাস, খোলা বাতাসের সাথে প্রকৃতিতে থাকা এবং কিছু শান্ত সময় আপনার দুঃখ দূর করতে সাহায্য করবে।
নিজের প্রতি সদয় থাকুন : নিজের প্রতি সদয় হোন। দুঃখের কারণে নিজেকে আঘাত করবেন না বা দোষারোপ করবেন না তাহলে দুঃখ আরো বেড়ে যাবে। যখন দুঃখ অনুভব করবেন তখন শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। নিজেকে কন্ট্রোলে রাখুন। নাওয়া-খাওয়া ও ঘুম ছেড়ে দিবেন না। তাতে দুঃখ আরো বাড়বে। বরং এ সময় নিজের প্রিয় খাবার খেতে পারেন।
জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করুন : আপনার জীবনের লক্ষ্যগুলো স্থির করুন। এটা করতে পারলে কখনো বড় কোনো দুঃখ পেলেও লক্ষ্যে পৌঁছার তাড়না আপনাকে হতাশ হতে দিবে না। এতে আপনার দুঃখ হ্রাস পাবে। দুঃখ আপনাকে কখনোই গ্রাস করতে পারবে না।ৎ
সাইকোলজি (simplypsychology.org/) অবলম্বনে শাহনূর শাহীন
আরো পড়ুন…..
দুঃখ ও বিষণ্ণতার পার্থক্য : বিষণ্ণতায় আক্রান্ত কিনা যেভাবে বুঝবেন
বিষণ্ণতার কারণ, লক্ষণ ও প্রকারভেদ
এটাও পড়ুন….
ওসিডি বা খুঁতখুঁতে রোগ কী? : (প্রথম পর্ব)
www.simplypsychology.org তে প্রকাশিত Olivia Guy-Evans এর লেখা মূল নিবন্ধ পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
/এসএস