যানজটে বাড়ে মানসিক অসুস্থতা, হতে পারে বিচ্ছেদও

0
65

সকালে ঘুম থেকে দ্রুতই উঠলেন, গোসল শেষে আটটার আগেই রেডি হয়ে গেলেন। দ্রুত অফিস যেতে হবে। দশটায় মিটিং, বের হলেন আটটায়। গন্তব্য বনানী। ধানমন্ডি থেকে বনানী যেতে কত মিনিটইবা আর লাগে। তবুও বেশ কিছু সময় হাতে নিয়েই বের হলেন। কিন্তু দেখলেন মহাখালী পার হতেই দশটা পার হয়ে গেল। তীব্র জ্যাম। রাজধানী ঢাকার বর্তমান চিত্র এমনটাই। আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের সবচেয়ে মানসিক চাপের ১০টি শহরের মধ্যে একটি ঢাকা, যার প্রধানতম কারণ বলা হচ্ছে যানজট। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার অসহনীয় যানজট কেবল নগরবাসীকে মানসিকভাবে অসুস্থই করছে না, সেই সঙ্গে অপরাধপ্রবণ করে তুলছে।

কানাডার সেন্টার ফর ড্রাগ অ্যাডিকশন অ্যান্ড মেন্টাল হেলথের পরিচালক ডা. কাওমি ম্যাকেনজি তাঁদের একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলেন, যানজট এমন একধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে, কেউ যদি এই চাপ নিয়মিত গ্রহণ করে তবে তার অস্থিরতা তিনগুণ বেড়ে যায়, বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ে ৫০ শতাংশ এবং যানজটের বিরক্তির প্রভাব পরিবারের ওপর পড়ে বলে সংসার ভাঙার ঝুঁকিও বেড়ে যায় ৫০ শতাংশ।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গবেষণা বলছে, যানজটে মানসিক চাপ এতটাই বেশি থাকে, কেউ যদি এই চাপের মধ্য দিয়ে ১০ বছর পার করে তবে তার মানসিক অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।

এসব গবেষণার ফলাফল যে কতটা প্রাসঙ্গিক তা ঢাকাবাসী ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারেন। কেন না তাদের এখন প্রতিদিনই প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকতে হয় যানজটের কারণে।

প্রতিদিনের যানজটের অভিজ্ঞতার কথা বলেন কয়েকজন যাত্রী। এক যাত্রী বলেন, ‘প্রেসার বেড়ে যায়। প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ি বাসায় গিয়ে।’ আরেকজন বলেন, ‘যখন বাসে উঠি মনে হয় হাসপাতালে আছি।’ তৃতীয় যাত্রী বলেন, ‘আমার প্রতিদিন কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টা হয়। এটার জন্য আমার প্রতিদিন চার ঘণ্টা আরো বাড়তি খরচ করতে হয়।’

এক নারী যাত্রী বলেন, ‘চরম বিরক্তিকর অবস্থা থাকে, কখন জ্যামটা পার হব আর কখন বাসায় যাব এরকম লাগে।’ আরেকজন বলেন, ‘এটা আসলে সহ্য করার মতো না, অসহ্য।’

যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি বাণিজ্যিক সংস্থা জিপজেট-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে মানসিক চাপের শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান সপ্তম, যার মূল কারণটি বলা হয়েছে যানজট। ঢাকার যানজটজনিত এমন মানসিক চাপের বিষয়টি আরো আগেই টের পেয়েছেন মানসিক হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

এ প্রসঙ্গে একজন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা যে রোগীগুলি পাই, হতাশা অথবা আগ্রাসী স্বভাব বা অন্যান্য বিরক্তিকর ইয়ে নিয়ে আসতেছে। তখন কিন্তু আমরা রোগ ডায়াগনসিস করি এবং আমরা তার পারসোনাল হিস্ট্রিগুলো চাই। আমরা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, অনেকের কাছ থেকেই জানতে পারি, একটা প্রধান অন্যতম কারণ হচ্ছে যানজট। এ কারণে তারা বিপর্যস্ত, হতাশাগ্রস্ত এবং ত্যক্তবিরক্ত।’

তিনি আরও আরো বলেন, ‘যানজটের কারণে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে বিরক্তি। লক্ষ করবেন যে, আমাদের সমাজে মানুষ খুব বেশি আগ্রাসী হয়ে যাচ্ছে। তারা আগের মতো ধৈর্যশীল বা শান্ত থাকতে পারছে না। এটার একটা অন্যতম কারণই হচ্ছে, মানে এ ধরনের বিরক্তির অভিজ্ঞতা প্রতিদিনই হতে থাকা—যানজটের কারণে।’

মানসিক অসুস্থতার অন্যতম প্রধান কারণ মানসিক চাপ। এই মানসিক চাপের উৎস নানা কিছুই হতে পারে। তবে যানজট থেকে সৃষ্ট মানসিক চাপ তুলনামূলক অনেক বেশি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন গবেষক ও চিকিৎসকরা।

যে মাত্রার চাপ যানজট থেকে সৃষ্টি হয়, তা একদিন-দুদিন নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঢাকারবাসীর মতো যদি সেটা প্রতিদিনই নিতে হয় তবে তা কেবল মনের ওপর নয়, শরীরের ওপরও মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।

এ বিষয়ে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যানজট যেটা আমি চোখের সামনে দেখছি, এত স্ট্রেসড হয়ে যাচ্ছে যে, তার ব্লাডপ্রেসার বেড়ে যাচ্ছে। এই যে স্ট্রেস ফ্যাক্টর, এই স্ট্রেসের কারণে একটা মানুষ অফিসে একটা ভালো কথা শুনল, তার কর্মক্ষেত্রে, তার পরিবারের সাথে ভালো কথা শুনলেও দেখা যাচ্ছে সে উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছে। এই উত্তেজনার কারণে তার ব্রেইন স্ট্রোক করতে পারে। এই উত্তেজনার কারণে তার হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।’

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous articleমানসিক চাপের সময় কিভাবে নিজেকে সামলে রাখবেন
Next articleঅনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব ঘুম দিবস নিয়ে ওয়েবইনার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here