শ্রমবাজারে নারীর মানসিক চাপ

0
21
শ্রমবাজারে নারীর মানসিক চাপ

দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের মানুষ কভিড-১৯ মহামারি প্রত্যক্ষ করছে। কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হলে শরীরের তো ক্ষতি হয়ই, পাশাপাশী মহামারীর কারণে আর্থিক সংকটের মুখেও পড়তে হচ্ছে। সবমিলিয়ে মানসিক একটা ধাক্কাও কাটিয়ে উঠতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে উদ্বেগজনক হারে। একটি গবেষণা বলছে, দেশটির ৮০ শতাংশ কর্মী তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত। সম্প্রতি ইয়াহু ফাইন্যান্সের এক কনফারেন্স বোর্ডের জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ১ হাজার ৮০০ কর্মীর ওপর চালানো এ জরিপে দেখা যায়, শারীরিক স্বাস্থ্যের চেয়ে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েই বেশি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। কনফারেন্স বোর্ডের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট রেবেকা রে বলেন, গত এপ্রিলেও আমরা নিউ নরমাল বা নতুন ধরনের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিয়ে অনেক বেশী আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, নিউ নরমাল যাওয়াটা এত সহজ নয়। যে প্রক্রিয়ায় মানুষ কর্মক্ষেত্রে ফিরছে সেটি তার মনের ওপর তীব্র প্রভাব ফেলছে।

জরিপে দেখা যায়, প্রতি ১০ জনে আটজন কর্মী তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। ৭৭ শতাংশ বলছেন, মানসিক চাপ ও বার্নআউটকে মোকাবেলাই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এপ্রিলেও এ হার ছিলো ৫৫ শতাংশ। একটি বড় অংশের কর্মীরা এ সমস্যার কারণ হিসেবে বাড়তি কাজের চাপকে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, মহামারীর পর এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাজের চাপ অনেক বেড়েছে।

আর এর কারণ হিসেবে রেবেকা রে বলেন, মহামারী চলাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে গিয়ে বেশির ভাগ কর্মীকেই বাড়িতে বসে কাজ করতে হয়েছে। আর এতে তাদের ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাগত জীবনের মধ্যে সীমারেখা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। পাশাপাশী বেড়েছে কাজের চাপ। তার ওপর সবসময় নিজের বা পরিবারের কারো কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। সব মিলিয়েই দারুণ মানসিক চাপ তৈরী হয়েছে কর্মীদের ওপর।

সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপ অনুভব করছেন নারীরা। জরিপটিতে নারী ও পুরুষ কর্মীরা অংশ নেন। সেখানে দেখা যায়, কাজের চাপও লিঙ্গভেদের ভিন্ন রকম হয়। দেখা গেছে, পুরুষদের তুলনায় তাদের কাজের চাপ ও মানসিক চাপ দুটোই অনেক বেশি বেড়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ৬০ শতাংশ নারী মহামারীকালে মানসিক ও কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এ হার ৪৮ শতাংশ। দেখা গেছে, সম্প্রতি অনেক বেশি নারী কাজ ছেড়ে দিয়েছেন বা তুলনামূলক উন্নতি হয়নি তাদের পেশাজীবন।

গত আগষ্টে ২০ বছরের বেশি বয়সী ৪১ হাজার কর্মী কাজ ছেড়ে দিয়েছেন বা শ্রমবাজার থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল উইমেন্স সেন্টারের তথ্য বলছে, গত বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৬ লাখ নারী কাজ ছেড়েছেন। এ প্রসঙ্গে রেবেকা রে বলেন, এর মূল কারণ হলো পরিবারগুলোতে শিশু ও বয়স্কদের দেখাশোনার দ্বায়িত্ব কেবল নারীদের বলে ধরে নেওয়া হোয়। ফলে এর সঙ্গে যখন অফিসের কাজের চাপ যুক্ত হয় হয় তখন তা নারীর জন্য বাড়তি বোঝা হিসেবে তার জীবনে আবির্ভূত হয়। বাড়িতে বসে কাজ করতে গিয়ে তার নিজের জীবন আর পেশাগত জীবনের মধ্যে আর কোনো পার্থক্য থাকে না। ফলে নারীর ওপরই চাপটা বেশি পড়ে।

যেহেতু সময়ের সঙ্গে শ্রমবাজারে কাজের চাপ বাড়ছে, নতুন নতুন চ্যালেঙ্ক যুক্ত হচ্ছে, তাই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এখন কর্মীর মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অনেক বেশি জোর দেয়া উচিৎ। এতে করে কাজের মান ভালো হবে, মানসিকভাবে সুস্থ একজন কর্মীর পক্ষে প্রতিষ্ঠানের জন্য নিজের র্সবোচ্চটুকু দেয়া সম্ভব, দিনশেষে যা প্রতিষ্ঠানের জন্য মঙ্গলই বয়ে আনবে।

সুত্রঃ ইয়াহু ফাইন্যান্স

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

 

 

Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে উদাসীন বিশ্ব
Next articleযৌন আসক্তি মানসিক ব্যাধি, আসক্তদের যে ধরনের লক্ষণ দেখা যায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here