মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা এবং এর সুষ্ঠু বিকাশে দৈনন্দিন যে সব ইতিবাচক কাজ করতে বলা হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যদের উপকারের মান দেওয়া বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ একটি অন্যতম কাজ। যে ব্যক্তি নিয়মিত কৃতজ্ঞতা বোধের চর্চা করতে পারে তার মাঝে খুব সহজেই অন্যান্য ইতিবাচক মানসিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটে।
মনস্তত্ত্ববিদগণ সাধারণত সে সব কাজ বেশী করে করতে বলেন যেগুলো আমাদের মধ্যে ইতিবাচক অনুভূতির বিকাশ ঘটায়। প্রতি দিন আমাদের সাথে যত রকম ভালো ঘটনা ঘটে বা যে বিষয় গুলো আমাদের ভাললাগে সেগুলো লিখে রাখার পরামর্শ তারা প্রদান করেন। কারণ, যে কোন কিছু লিখে রাখলে সেটি আমাদের মনে দীর্ঘস্থায়ীত্ব লাভ করে আর ইতিবাচকএবং ভাললাগার বিষয় যত বেশী দীর্ঘস্থায়ী হবে, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচার আচরণেও তার ইতিবাচক প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হবে। ঠিক একইভাবে, যখন আমরা আমাদের প্রতি অন্যদের ইতিবাচক কাজ, চিন্তাভাবনা, মানসিকতার প্রশংসা করি এবং সেগুলো মনে রাখি, সেই ব্যক্তির প্রতি আমাদের ইতিবাচক ধারণা বজায় থাকে এবং আমরাও খুশি থাকি। সব মানুষের মাঝেই ভালো মন্দ উভয় গুণাবলী রয়েছে। কিন্তু আমরা যদি মানুষের নেতিবাচক দিকগুলোর প্রতি খেয়াল না করে বরং তাদের ইতিবাচক দিকগুলোকে মনে রাখি, তাদের তিক্ত কথাকে নয় বরং সহমর্মী মনোভাবকে মনে রাখি এবং সেগুলোর প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, তাহলে আমাদের নিজেদের মধ্যে যেমন মানসিক অশান্তি থাকবেনা তেমনি অন্যদের সাথে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক সৌহার্দও আরও বৃদ্ধি পাবে। আর এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আমাদের নিজেদের সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং শারীরিক সকল ধরণের বিষণ্ণতার হার কমাতে সহায়তা করে। নিচে এটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
১) কৃতজ্ঞতা বোধের চর্চা আমাদের সামাজিক ভাবে ভালো থাকতে সহায়তা করেঃ
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সামাজিক জীবনে অন্যান্যদের ইতিবাচক চিন্তাভাবনা, কাজকর্ম ইত্যাদির প্রতি বেশী মনযোগী হওয়া এবং দৈনন্দিন জীবনে এগুলোকে সংরক্ষণ করা আমাদের সামাজিকভাবে ভালো থাকতে সহায়তা করে। এটি একজন মানুষের মাঝে নৈতিক দায়িত্ব বাড়ায় এবং তাকেও অন্যদের প্রতি সদয় আচরণ ও চিন্তাভাবনায় অনুপ্রাণিত করে। এতে করে অন্যদের সাথে তার সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয় এবং সামাজিকভাবে সবার মাঝে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটে এবং সবাই ভাল থাকে। যেমন, কৃতজ্ঞতা বোধের মানসিকতা শিক্ষার্থীদের দায়িত্বশীল আচরণে উৎসাহিত করে। আবার শ্রমিকদের প্রতি মালিকের কৃতজ্ঞতা বোধ তাদের মাঝে কর্ম স্পৃহা বাড়িয়ে তাদের দৈনন্দিন কর্ম দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
২) কৃতজ্ঞতা বোধের চর্চা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ
গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধের প্রকাশ এবং ইতিবাচক মানসিক অবস্থা যেমন, সুখানুভূতি, মানসিক সন্তুষ্টি, এবং মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া ইত্যাদির ইতিবাচক যোগসূত্র রয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, কৃতজ্ঞতা বোধ একজন মানুষের মাঝে আত্ম সন্তুষ্টির অনুভূতি সৃষ্টি করে। আবার আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, এটি মানুষকে অন্যদের প্রতি ইতিবাচক আচরণে উদ্বুদ্ধ করে। আর এগুলো মানুষের ইতিবাচক মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলেই সম্ভব হয়।
৩) কৃতজ্ঞতা বোধের বিকাশ আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটায়ঃ
অগণিত গবেষণায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশের চর্চা এবং আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের মধ্যাকার সম্পর্ক, যেমন, কার্ডিও ভাসকিউলার হেলথ, মানসিক চাপ, বেদনার ধারণা এবং নিদ্রা ইত্যাসদি নিয়ে ইতিবাচক ফলাফল উঠে এসেছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মানসিকতা আমাদের ডায়াস্টলিক রক্ত চাপের উন্নতি ঘটায়। আবার অন্য কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমানোর পূর্বে যে সব ব্যক্তি নিজের সাথে ঘটে যাওয়া সারা দিনের ভালো অভিজ্ঞতা গুলোর কথা মনে করে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাদের রাতের ঘুম ভালো হয় এবং চিত্ত শান্ত থাকে। তাছাড়া যারা নিয়মিত এগুলোকে লিখে রাখার চর্চা করে তাদের মাথা ব্যাথা কম হয়, ত্বকের সমস্যা কম হয়, হজম ভালো হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে।
আমাদের সবার জীবনেই সুলখের সাথে সাথে সমস্যা আছে, দুঃসময়ও আছে। মতের অমিল হলে বা কোন কারণে কারও দ্বারা কষ্ট পেলে আমরা মানসিক ভাবে একদম ভেঙ্গে পড়ি। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলি, হতাশ হই। কিন্তু আমরা যদি দৈনন্দিন জীবনে আমাদের সাথে ঘটে যাওয়া ভালো ঘটনা গুলি এসময় স্মরণ করি, কষ্ট দিয়ে ফেলা মানুষ গুলোর করা ভালো কাজ গুলোর কথা ভাবি তাহলে আমাদের এই মানসিক চাপ, মন খারাপ খুব সহজেই কমে যাবে। আমরা সবাইকে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারবো এবং কৃতজ্ঞতা বোধ আমাদের মাঝে ইতিবাচক মানসিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটাবে।
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে