মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়ে। কিন্তু সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন কুসংস্কার এবং অসচেতনতা আমাদের এই সেবা গ্রহণের পথে বিড়ম্বনার সৃষ্টি করে। এসব প্রতিকূলতা দূর করে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সবার জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।
অনেকেই আছেন যারা নিজেদের শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও বেশ সচেতন। যে কোন মানসিক সমস্যাকে তারা যেমন লুকিয়ে রাখেনা তেমনি প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা বা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণেও দ্বিধাবোধ করেনা। কিন্তু এর বিপরীত দৃশ্যও একদম কম নয়। বরং মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে অনুৎসাহী বা অসচেতন মানুষের সংখ্যাই আমাদের চারপাশে অধিক। তারা তাদের সমস্যা যেমন নিজেরা সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারেনা, তেমনি এসব অন্যদের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখে নিজের সমস্যাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আপাত দৃষ্টিতে তাকে সুস্থ এবং স্বাভাবিক মনে হলেও ধীরে ধীরে তার সমস্যা প্রকট হয়, যা তার শরীর ও আচার আচরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে এবং এক সময় অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করে। তাই মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে সবাইকে উৎসাহিত এবং সচেতন করতে হবে যেন তারা নিজের সমস্যাকে লুকিয়ে না রেখে বরং এর সমাধানের প্রয়াস করে এবং স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করে।
অনেকেই মনে করে বিষণ্ণতা, হতাশা, অবসন্নতা, দুশ্চিন্তা এগুলো খুবই সাধারণ ঘটনা। হ্যাঁ, অবশ্যই এগুলো আমাদের অন্যান্য অভিব্যক্তি বা অনুভূতির মতোই স্বাভাবিক কিন্তু সেটি যদি মাত্রা অতিরিক্ত হয় যা আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে বাঁধা দেয় তাহলে কখনোই সেটিকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। অনেকেই ভাবে এগুলোর ফলে আমাদের জীবনে যে অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি হয় সেই সমস্যা অন্যদের কাছে প্রকাশ করলে তারা আমাদের সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করবে। আমাদের কাছের মানুষদের সাথে আমরা স্বাভাবিক ভাবে মিশতে পারবোনা এবং তারা আমাদের পাগল বা উন্মাদ মনে করবে। এসব চিন্তাভাবনা আমাদেরকে মানসিক সমস্যাগুলিকে লুকিয়ে রাখতে বাধ্য করে এবং এর ফলে আমরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ি। এ কারণে প্রথমত যে কাজটি করতে হবে সেটি হল কোনভাবেই নিজের সমস্যাকে লুকিয়ে রাখা চলবেনা। নিজের সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে দ্বিধাহীনভাবে কথা বলতে হবে কারণ মানসিক সমস্যাও শারীরিক সমস্যার মতোই স্বাভাবিক ঘটনা যা সবার সাথেই হতে পারে। সমস্যা সমধানে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে এবং সুস্থ জীবন যাপনের প্রয়াস করতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে একজন মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল বিষয়। নিজের সমস্যা নিয়ে আমরা যদি নিজে সজাগ না হই তাহলে কখনোই সেই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব না। নিজের মাঝে আত্মবিশ্বাস এবং সাহস থাকলে তবেই চারপাশের পরিবেশটা বদলানো সম্ভব এবং সবাইকে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণে উৎসাহিত করা সম্ভব।
যখন একজন মানুষের মাঝে দুঃখ, হতাশা, ক্রোধ ইত্যাদির ফলে মানসিক চাপের সৃষ্টি হয় তখন সেটি সাথেই সাথেই অবমুক্ত করা প্রয়োজন। কখনোই পুষে রাখা উচিৎ নয়। কারণ, নিজের মাঝে সেসব অভিজ্ঞতার স্মৃতি যদি আপনি পুষে রাখেন যা আপনাকে প্রতিনিয়ত কষ্টের অনুভব করায় তাহলে কখনোই সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিকতা লালন করা সম্ভব হয়না। আবার অনেক ক্ষেত্রেই নিজের সমস্যা নিজেই সমাধান করার প্রচেষ্টায় অনেকে এসব সমস্যাকে হেলাফেলা করেন যার ফলাফল হয় ভয়াবহ। তাই যে কোন প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণের বিষয়ে আমাদের ইতিবাচক মানসিকতা লালন করতে হবে। নিজের সমস্যাকে লুকিয়ে না রেখে তুলে ধরতে হবে।
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ এখনো আমাদের দেশে প্রায় অপ্রচলিত একটি বিষয়। কিন্তু সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের মাঝে এই সেবা গ্রহণে উৎসাহ বৃদ্ধি করতে হবে। সবাইকে বোঝাতে হবে যে শুধু শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকাকেই পরিপূর্ণ সুস্থতা বলেনা। বরং শারীরিক ও মানসিক উভয় প্রকারেই আমাদের সুস্থ থাকতে হবে। আর এ লক্ষ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা আরও সম্প্রসারিত ও সহজলভ্য করতে হবে।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে