করোনাভাইরাস: নিঃশ্বাস ও কথা বলার মাধ্যমেও ছড়াতে পারে

0
11
করোনাভাইরাস: ভুল ধারণা নিয়ে যা বলছে ডব্লিউএইচও
করোনাভাইরাস: ভুল ধারণা নিয়ে যা বলছে ডব্লিউএইচও

বেশ কয়েক মাস ধরেই পৃথিবীজুড়ে লাশের মিছিল সৃষ্টি করছে করোনাভাইরাস। তবে এতো মৃত্যুর পরও এই ভাইরাসের অনেক বৈশিষ্ট্যই এখনও জানা বাকি। একটা ব্যাপার নিশ্চিত যে ভাইরাসটি প্রচণ্ড সংক্রামক।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)’র পরিচালক ডা. রবার্ট রেডফিল্ড বলেছেন, “করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা ‘ফ্লু’য়ের চাইতেও তিনগুন বেশি।”
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি’র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এই ভাইরাস কতটা সহজে ছড়াতে পারে সে সম্পর্কে উঠে এসেছে নতুন তথ্য।
২৩ জানুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত সময়ে সংক্রমণের শিকারদের, বিশেষত, সিঙ্গাপুরের সাতটি ‘ক্লাস্টার’য়ের ‘প্রিসিমটোম্যাটিক’দের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন করা হয়।
‘প্রিসিমটোম্যাটিক’ হলেন সেসব মানুষ যারা কোভিড-১৯’য়ে আক্রান্ত রোগীর মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছেন কিন্তু এখনও তাদের মাঝে কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি।
এই মানুষগুলোর মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে, যার কারণে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
ডা. রেডফিল্ড বলেন, “একাধিক গবেষণার মাধ্যমে একটি বিষয়ে আমরা অনেকটাই নিশ্চিত যে ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হওয়া মানুষের এই বড় অংশেরই কোনো উপসর্গ দেখা দেয় না। এই অংশটি প্রায় ২৫ শতাংশ হতে পারে।”
করোনাভাইরাস সংক্রমণ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে তা শ্বাসতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসা লালার কণার সঙ্গে মিশে থাকে, যা আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে বাতাসে মেশে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির ৬ ফিটের মধ্যে থাকলে কিংবা করোনাভাইরাস আছে এমন স্থান স্পর্শ করার পর নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করলে সুস্থ ব্যক্তিও সংক্রমণের শিকার হবেন।
এগুলো ছাড়াও কথা বলা, গান গাওয়া, এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও তা ছড়াতে বলে ধারণা করছে সিডিসি।
সিডিসি’র মতে, “প্রিসিমটোম্যাটিক ট্রান্সমিশন হতে পারে লালা কণার পাশাপাশি পরোক্ষভাবেও। কথা বলা এবং অন্যান্য স্বরতন্ত্রের কর্মকাণ্ড যেমন- গান গাওয়ার মাধ্যমে বাতাসে মিশতে পারে এমন উপাদান তৈরি হয়, যার মাত্রা বাড়ে গলার আওয়াজ যত বেশি হবে সেই অনুপাতে।”
অর্থাৎ, কোভিড-১৯’য়ের উপসর্গ না থাকলেও যাদের শরীরে এই ভাইরাস আছে তাদের উচ্চস্বরে কথা বলা এবং গান গাওয়ার মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ভ্যান্ডারবেল্ট ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের অধ্যাপক এবং সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. উইলিয়াম স্ক্যাফনার বলেন, “এই তথ্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি সুস্থ বোধ করা মানেই যে আপনি ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হননি একথা জোর দিয়ে বলা সম্ভব নয়। আবার যে সুস্থ মানুষটির সঙ্গে আপনি কথা বলছেন বা যার গান শুনছেন সে মানুষটিও যে নিরাপদ সেটাও বলা যাবে না।”
সিডিসি’র প্রতিবেদনে না থাকলেও বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ‘হোয়াইট হাউজ’য়ের কর্মকর্তাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে ভিন্ন এক গবেষক দল। আর তা হল শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে করোনাভাইরাস।

বর্তমানে ঠিক এই বিষয় নিয়ে গবেষণার পরিধি সীমিত হলেও অন্যান্য গবেষণা এই তথ্যকে সমর্থন করে।
‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সাইন্স’য়ের এক কমিটির চেয়ার‌ম্যান এবং পিএইচডি ডিগ্রিধারী চিকিৎসক ডা. হার্ভি ফাইনবার্গের লেখা এবং আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা সিএনএন’য়ের সংগ্রহ করা এক চিঠিতে এই তথ্য উঠে আসে।
ডা. স্ক্যাফনারও এই তথ্যের সঙ্গে একমত, তবে অন্যান্য প্রমাণীত সংক্রমণ মাধ্যমগুলোর তুলনায় এই নতুন মাধ্যমগুলো ঠিক কতটা নতুন রোগীর জন্ম দিতে পারে তা বলা কঠিন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে তিনি স্বীকার করেন যে, যাদের মাঝে সংক্রমণ বা রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে না, তাদের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
করণীয়
ডা. স্ক্যাফনার বলেন, “সকলেরই উচিত হবে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা। এতে আপনি কোনো নিরাপত্তা পাবেন না ঠিক। তবে আপনার হাঁচি, কাশি, কথা বলা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের কারণে আপনার শরীরে থাকা ভাইরাস অন্য কাউকে সংক্রমিত করতে পারবে না। এই মাস্কগুলো কাপড়ের হতে পারে, থাকতে পারে একাধিক পরত। তবে খেয়াল রাখতে হবে শ্বাস নিতে যেন অসুবিধা না হয় এবং তা প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে।”
সিডিসি বলছে, “সাধারণ মানুষের মেডিকাল মাস্ক কেনা উচিত হবে না, কারণ তা চিকিৎসকদের জন্য জরুরি এবং তা পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই।”
মাস্ক পরে অন্যান্য সতর্কতার কথা ভুলে গেলে চলবে না। হাত ধোয়ার কোনো বিকল্প নেই। অসুস্থতা থাকুক বা না থাকুক সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরে থাকুন। নিত্য ব্যবহার্য অনুষঙ্গ পরিষ্কার রাখুন।

Previous articleকরোনা থেকে বাঁচাতে সন্তানকে আদর করার সময় খেয়াল রাখবেন যেসব বিষয়
Next articleচাকরি থেকে অবসরে গেলেন অধ্যাপক ডা. মামুন হুসাইন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here