মানসিক চাপ কী? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিষয়ের প্রফেসর ক্যাথলিন গুন্থার্ট মন্তব্য করেন, “মানসিক চাপ তখন সৃষ্টি হয় যখন একটি চ্যালেঞ্জ এবং তা মোকাবেলা করার মত যোগানের মধ্যে ভারসাম্যের তারতম্য ঘটে।”
এই মানসিক চাপকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেতিবাচকভাবে দেখা হয়। কিন্তু সহনশীল মাত্রার মানসিক চাপ অনেক সময় আমাদের জন্য ইতিবাচক। ২০১৩ সালে সাইকোনিউরো এনডোক্রিনোলোজি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণার ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, অল্পমাত্রার মানসিক চাপের কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে। প্রতিদিনের সহনশীল মাত্রার মানসিক চাপ (ইউস্ট্রেস) বয়স বেড়ে যাওয়া এবং বিভিন্ন রোগের অনুঘটক হিসেবে পরিচিত ‘অক্সিডেটিভ ডেমেজ’এর বিরুদ্ধে কাজ করে।
গবেষকরা দুই ধরণের মানসিক চাপ চিহ্নিত করেছেন- একটি হলো নেতিবাচক মানসিক চাপ বা ডিস্ট্রেস (যেমন ব্রেক আপ) এবং অন্যটি ইতিবাচক মানসিক চাপ বা ইউস্ট্রেস (নতুন চাকরী শুরু করা)। অল্পমাত্রার মানসিক চাপের কিছু অপ্রত্যাশিত সুফল রয়েছে। তা হলো-
মানসিক চাপ কর্ম প্রেরণা বৃদ্ধি করে
প্রচণ্ড মানসিক চাপ যেমন আপনার কর্ম উদ্যম ধ্বংস করে দিতে পারে, ঠিক তেমনি সহনশীল মাত্রার মানসিক চাপের ফল হতে পারে উল্টো। অর্থাৎ ইউস্ট্রেস আপনার মধ্যে জাগিয়ে তুলবে কর্মক্ষুধা। আবার, মাঝারি মাত্রার মানসিক চাপ আমাদের উদ্যমী করে তোলে। যেমন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো কাজ শেষ করার তাগিদের ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপ মানুষকে আরও বেশি কাজে মনোনিবেশ করতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে
সব থেকে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, মানসিক চাপ আমাদেরকে আন্তঃ ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে সাহায্য করে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়- মানসিক চাপের জন্য মানুষ যখন সাহায্য কেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের ব্যাপারে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলেন তখন তাদের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ফলে একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতার সৃষ্টি হয় এবং মস্তিষ্কে একটি বিশেষ ইতিবাচক হরমোনের ক্ষরণ ঘটে।
এছাড়াও বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার-পরিজনের কাছে নিজের মানসিক চাপের কথা ভাগ করে নেয়ার মধ্য দিয়ে সম্পর্কগুলো আরও মজবুত হয়ে ওঠে। মনোবিজ্ঞান গুন্থার্ট এ বিষয়ে মন্তব্য করেন যে, “আমরা যদি কঠিন সময়গুলিতে পরস্পরের পাশে না দাঁড়াতাম, তাহলে আমাদের বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কগুলো এতো সুন্দর হতো না।”
মানসিক চাপ অর্থপূর্ণ জীবনের অংশ
মানসিক চাপহীন জীবন যে খুব ভালো হবে তেমন কোনো কথা নেই। সহজ কথায় বলতে গেলে তাগিদ না থাকলে ভালো কিছু করা যায় না। উদাহরণ হিসেবে ছাত্র জীবনের কথা বলা যেতে পারে। পড়াশুনার চাপ, পরীক্ষার চাপ, কোর্স ওয়ার্কের চাপ প্রভৃতি বিভিন্ন চাপের ফলে সৃষ্ট মানসিক চাপ প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীকেই অনুভব করতে হয়। এই মানসিক চাপ তাদেরকে প্রতিযোগিতায় আরও ভাল ফলাফল করতে সাহায্য করে এবং জীবনে বড় কিছু অর্জনে সক্ষম করে তোলে।
এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞান গুন্থার্ট মন্তব্য করেন, “সব শেষে আমরা যখন ভালো কিছু অর্জন করি, তখন আমরা গর্ববোধ করি। জীবনে আমরা সেসব বিষয় নিয়েই সব থেকে বেশি গর্ব করে থাকি, যেসব অর্জন করা তুলনামূলকভাবে কঠিন। আমরা যদি জীবন থেকে মানসিক চাপ মুছে ফেলি তাহলে একইসঙ্গে জীবনের অনেক অর্থই মুছে যাবে।”