বিনোদন যখন শিক্ষার মাধ্যম

0
35

শিশুদের বেড়ে ওঠার সময়ে খেলাধুলা, বিনোদন ইত্যাদি অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই শিশুর প্রারম্ভিক শিক্ষা শুরু হয় নানা ধরনের শিক্ষামূলক খেলা এবং বিনোদনের মাধ্যমে। বিনোদন শব্দের অর্থই হলো আনন্দ প্রদান। যে কাজে আনন্দ পাওয়া যায় সে কাজে শিশুর মনোযোগ থাকবে বেশি এটাই স্বাভাবিক। মনোযোগ থাকা মানে সেই বিষয়টা তার মনে থাকবে সহজেই। তাই বাচ্চাদের যেকোনো কিছু শেখানোর জন্য বিনোদনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলে তা অনেক বেশি ফলপ্রসূ হয়- এমনটাই জানা গেছে বিভিন্ন গবেষণায়।

আমাদের খুব পরিচিত একটি উদাহরণ দিলেই এর কার্যকারিতা সহজে বোঝা যাবে। ভীষণ জনপ্রিয় কার্টুন মীনা। মীনাকে চেনে না এমন ছেলে- মেয়ে বোধ করি বাংলাদেশে খুব কম। আমাদের ছেলেবেলার সময় থেকে শুরু করে এখনকার প্রজন্মও মীনা দেখে শিখছে- মেয়েদের সমান অধিকার, মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা, বাল্যবিবাহের কুফল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং ডায়রিয়া থেকে বাঁচার উপায়সহ আরো অনেক বিষয় যা শুধু মাত্র নীরস তত্ত্ব কথার বদলে বিনোদনের উৎস হিসেবে শিশুদের কাছে কত সহজে উপস্থাপিত হচ্ছে। কিন্তু যতটা সহজ ভাবা হয় এরকম শিক্ষামূলক কার্টুন বানানো অতটাও সহজ নয়, এর পেছনে রয়েছে বিভিন্ন পেশা এবং মেধার সমন্বয় যারা রীতিমতো গবেষণা করেন এই বিষয় নিয়ে।

এরকমই একটি গবেষণার কথা এখানে উল্লেখ্য, যে গবেষণার প্রারম্ভে দেখা হয়েছে- যে বিষয়টা নিয়ে অ্যানিমেটেড কার্টুন বানানো হবে তা নিয়ে স্কুলে যাওয়া বাচ্চাদের মধ্যে কতটুকু জ্ঞান বা কী রকমের ধারণা, বিশ্বাস, অভ্যাস প্রচলিত। বিষয়টা ছিল ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং কৃমি সংক্রমণ সংক্রান্ত। এই প্রারম্ভিক গবেষণা থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে অ্যানিমেশন কার্টুনে স্বাস্থ্যবিষয়ক কোন মেসেজ বা সংবাদটা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। দ্বিতীয় ধাপ ছিল রকম একটা কার্টুন তৈরি করা এবং পাইলট টেস্টিং হিসেবে ৮টি নির্দিষ্ট স্কলের শিক্ষার্থীদের এটা দেখানো। এই কার্টুন তৈরির জন্য একটি দল গঠন করা হয় যেখানে ছিলেন এপিডেমিওলজিস্ট, সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, সমাজবিজ্ঞানী, স্থানীয় স্কুলের শিক্ষক এবং ছিল শিক্ষার্থীবৃন্দ।

বাচ্চাদের পূর্ব বিশ্বাস বা ধারণা ছিল বেশি বেশি মিষ্টি খাবার খেলে, হাত না ধুয়ে খাবার খেলে এবং নষ্ট-বাসী খাবার খেলে কৃমির সংক্রমণ হয়। এর ফলে তাদের হতে পারে পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, ক্ষুধা-মন্দা, শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত এবং অতিরিক্ত দূর্বলতা ইত্যাদি। এগুলো থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে যে তথ্য সম্বলিত কার্টুনটি তাদের দেখানো হয় তা তারা অত্যন্ত পছন্দ করেছে এবং তাদের মধ্যে দৈনন্দিন অভ্যাস কীভাবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে বদলে ফেলা যায় তা নিয়েও ব্যাপক উৎসাহ পরিলক্ষিত হয়েছে। গবেষকেরা তাই সুপারিশ করেছেন এরকম কার্যকর বিনোদনের মাধ্যমকে স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তাহলে শিক্ষার কাজ যেমন সহজ হয় তেমনি দীর্ঘস্থায়ী এবং ফলপ্রসূ হয়।

প্রাসঙ্গিকভাবেই উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে জনসচেতনতায় বারবার হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখার শিষ্টাচার, আক্রান্ত ব্যক্তিকে ঘরে থাকার থাকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ইউনিসেফ, বাংলাদেশ মীনা কার্টুনের মাধ্যমে বাচ্চাদের বোধগম্য উপায়ে এই বিষয়গুলো প্রচার এবং সচেতনতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালিয়েছে। এই প্রচেষ্টা শিশুদের মনোজগৎকে প্রভাবিত করতে ভূমিকা রেখেছে।

ডা. সাদিয়া আফরিন
রেসিডেন্ট এমডি (চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলসেন্ট সাইকিয়াট্রি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleমানসিক চাপ সামলে চাই আত্মবিশ্বাসী নেতৃত্ব
Next articleমানসিকভাবে ভালো থাকতে প্রয়োজন মাইন্ড ডায়েট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here