যে ভাবে শিশুকালের ট্রমা পরিণত বয়সে প্রভাব ফেলে

যদি আপনি ছোট বয়সে পরিবারের কারো কাছে মানসিক বা শারীরিকভাবে অবহেলা ও নির্যাতনের শিকার হন, তবে তা আপনার পরিণত বয়সেও প্রভাব ফেলবে।
শিশুরা তার সাথে ঘটা পরিস্থিতির একটা অর্থ বা চিত্র তৈরি করে নেয় তার মানসপটে পৃথিবীটা আসলে কেমন। এটা তাকে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে। যদি শিশুরা বড় হওয়ার সাথে সাথে তাদের মানসিক চিন্তার পরিবর্তন না হয়, তবে অতীত অভিজ্ঞতাগুলো পরিণত বয়সের কার্যক্ষমতাকে বাধাগ্রস্থ করে।
১। নিজের সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা: প্রত্যেক শিশুই চায় তার পিতামাতা তাকে ভালবাসবে, কিন্তু যখন তারা আদর করে না, তখন বাচ্চারা মা-বাবাকে খুশি করার কাজগুলো করে। এতে তাদের সত্যিকারের আবেগ, অনুভূতিগুলো নষ্ট হয়ে যায়। যখন নিজের অনুভুতিগুলোকে মেরে ফেলা হয় তখন সে খুবই চিন্তিত থাকে যে, তার নকল রূপের বদলে আসলটা যদি বের হয়ে আসে, তবে কেউ বুঝি তাকে ভালবাসবে না, মেনে নিবে না। এই অবস্থায় যদি কেউ থাকে, তাকে শিশু ট্রমা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
২। আক্রান্ত হওয়ার চিন্তাভাবনা: আমরা নিজের সম্পর্কে যা ভাবি বা বিশ্বাস করি, তা-ই আমাদের আত্ম-সমালোচনা। যদি আমাদের আত্ম-সমালোচনা ইতিবাচক হয় তবে তা আমাদের সাহস দেয়, অপরদিকে নেতিবাচক চিন্তা আমাদের হতাশাগ্রস্ত করে। নেতিবাচক চিন্তা আমাদের এমনভাবে পরিচালিত করে যে, আমরা ভাবি, আমাদের জীবনের উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই; কিন্তু এটা ঠিক নয়, আমরা শিশু বয়সে আক্রান্ত হয়েছি কিন্তু আমরা এখন আর শিশু নই, আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা আছে।নিজেদের ভিক্টিম না ভেবে এটা মনে করা উচিত যে, আমরা এখন বড় হয়েছি, চারপাশের পরিবেশের উপর আমাদের আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ আছে এবং আমরা এখন পরিস্থিতি আরো ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পারবো।
৩। নিস্ক্রিয়-আক্রমণাত্মক: যখন আপনি এমন একটা পরিবারে বড় হন, যেখানে রাগ প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয় এবং এটাকে একটা অসুস্থ আবেগ হিসেবে দেখা হয়, তখন আপনি রাগকে চেপে রাখেন। কিন্তু এই অপ্রকাশিত আবেগ আপনার অনেক ক্ষতি করে, কারণ আপনি অনেক সময় রাগ চেপে রাখতে পারেন না, আবার সঠিকভাবে প্রকাশও করতে পারেন না, তখন আপনি নিষ্ক্রিয় আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। কিন্তু এমন করা উচিত নয়, কারণ রাগ একটা সুস্থ ও স্বাভাবিক আবেগ, এটা ভালোভাবে প্রকাশ করা উচিত।
৪। নিষ্ক্রিয়তা: যখন আপনি ছোটবেলায় অবহেলার শিকার হন, তখন আপনি আপনার ভয় বা রাগ অনুভুতিগুলোকে মেরে ফেলেন, যেন পরবর্তীতে কেউ আপনাকে অবহেলা না করতে পারে।বাচ্চারা যখন এমন করে, তখন তারা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং নিজেদের অনুভূতিগুলোকে ও সম্ভাবনাগুলোকে নষ্ট করে দেয়। সে এটা বলে যে, আমি জানি কি করতে হবে কিন্তু আমি করব না।
যখন আমরা অনুভূতিগুলোকে নষ্ট করে ফেলি, তখন আমরা ভুলে যাই আমি নিজে কে। যখন আমরা ছোট ছিলাম, তখন এই ব্যাপারটা আমাদের সাহায্য করে কিন্তু বড় হয়ে আমাদের এটা বলা উচিত।
তথ্যসূত্র: সাইকোলজি টুডে-তে প্রকাশিত এর রচনা থেকে অবলম্বণে লিখেছেন সুস্মিতা বিশ্বাস।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/us/blog/mindful-anger/201706/4-ways-childhood-trauma-impacts-adults?utm_source=FacebookPost&utm_medium=FBPost&utm_campaign=FBPost

Previous articleবাসা থেকে বাইরে কোথাও গিয়ে থাকতে পারেন না?
Next articleবিএসএমএমইউ তে শিশুর মনস্তত্ত্ব নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here