স্বামীর চেয়ে এগিয়ে যখন স্ত্রী

0
154

আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে স্বামী অধিক শক্তি বা যোগ্যতা সম্পন্ন হবে, এমনটা দেখে বা ভেবেই সবাই অভ্যস্ত। অর্থনৈতিক, সামাজিক, চাকরিগত দিক, শারীরিক ক্ষমতা, এমনকি বাকশক্তির দিক থেকেও সবাই আশা করেন পুরুষের অবস্থান হবে নারীর চেয়ে উচ্চে। অনদিকে, সৌন্দর্য্যে এবং সংসার কর্মদক্ষতায় স্ত্রী এগিয়ে থাকবে স্বামীর তুলনায়। তাহলে সারমর্ম দাঁড়ায়, নারী বা স্ত্রীদের রূপ ও গুণের (সংসার ও সন্তান পালন) আধিক্য থাকাই যথেষ্ট, অন্য সবদিকের আধিক্য পুরুষের জন্য বরাদ্দ। যদি কখনও এর ব্যতিক্রম দেখা দেয়, তবেই যেন বিপত্তি।

খুবই কম সংখ্যক স্বামী আছেন যারা স্ত্রীর সাফল্য, নাম-যশ, উঁচু পদমর্যাদাকে সম্মান করতে পারেন এবং মন থেকে খুশি হতে পারেন। যারা নিজের স্ত্রীর বেলায় খুশি হতে পারেন না, তারা কিন্তু অন্যের স্ত্রীর সাফল্যে ঐ স্বামীকে বাহবা দিতে ছাড়েন না। কেউ কেউ স্বামীকে স্ত্রীর বিরুদ্ধে উসকানীমূলক বাক্যবাণেও পিছপা হন না। এই স্বামীদের অবস্থা হয়ে দাঁড়ায় অদ্ভুত এক অনুভূতিতে, ‘আমি কি আকাশে আছি নাকি মাটিতে?’, ‘আমার কি খুশি হওয়া উচিত নাকি আত্মগ্লানিতে কাঁদা উচিত’। কিছুই সে মনস্থির করতে পারেনা। এমতাবস্থায় দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে একদিন জয়ী হয় নেতিবাচক মনোভাবের। স্ত্রীর তুলনায় নিজের সামান্য এই অনুভূতি মনের ভেতর পদচারণা শুরু করে। স্ত্রীর প্রতি হিংসা, রাগ, দুঃখ, সন্দেহ মনের ভেতর বাসা বাঁধে। স্ত্রীর উচ্চ পদমর্যাদা বারবার তাকে মনে করিয়ে দেয়, স্বামী হিসেবে সে কত তুচ্ছ, কতটা সামান্য হয়ে বেঁচে আছে। নিজের বেঁচে থাকার প্রতিও চলে আসে ধিক্কার। একে বলা হয়, ‘বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়’।

আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি যখনই কেউ তার সামনে স্ত্রীর প্রশংসা করে তখনই মনের ভেতর জ্বলে উঠে হিংসার আগুন। হিংসা থেকে রাগ, রাগ থেকে হয় শাস্তি দেয়ার বাসনা। হিংসা ও রাগের ফলাফল যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তার অসংখ্য উদাহরণ আমরা খবরের কাগজ এবং আমাদের আশপাশ থেকেই জানতে পারি।

স্বামীর পদোন্নতি, প্রশংসা, সাফল্যে যদি স্ত্রী খুশি হতে পারে, তাহলে স্বামী কেন পারবেনা না? স্বামীর কারণে স্ত্রী যদি অহংকারী হতে পারেন, তবে স্বামী কেন পারেন না? স্বামীর অর্থ প্রাচুর্য যদি স্ত্রীকে শক্তিশালী করতে পারে, তবে স্ত্রীর অর্থ প্রাচুর্য কেন স্বামীকে দুর্বল করে দেয়? এর উত্তর কী? পুরুষ শাসিত সমাজে আমাদের বসবাস, তার উপর কী নির্ভর করছে উত্তর? নাকি স্বামীর পুরুষত্ব আঘাত প্রাপ্ত হয়? নাকি নিছক হিংসা?

‘হিংসা’ শব্দটি বরাবরই নারী জাতীর জন্য প্রযোজ্য বলে আমরা মনে করি। হিংসুটে, খুনসুটি এইগুলো যদি নারীদের চরিত্রগত বৈশিষ্ঠ্য হয়ে থাকে, তবে এই বিশেষ ক্ষেত্রে (নারীর উচ্চাবস্থা) পুরুষ কি ব্যতিক্রম হতে পারছে?

মূলত নিজের প্রতি হীনমন্যতার কারণেই স্বামীরা স্ত্রীর প্রতি সহিংস হয়ে উঠেন। তবে নারীর অর্থ প্রাচুর্য বা উচ্চ পদমর্যাদার উপর যদি স্বামী নির্ভরশীল থাকেন, সে ক্ষেত্রে হয়তো স্বামী সমস্যা মনে করে না। এক ধরনের নতি স্বীকার করে বসবাস করে। কিন্তু নতি স্বীকারের বিষয়ও এটি নয়। নারী সমাজ ক্রমশই সবদিক থেকে প্রশংসনীয় অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছে। দেশে-বিদেশে সব জায়গাতেই নারীরা আজ তাদের কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতার বিশেষ প্রমাণ তৈরি করছে। যে সকল নারীরা সফলতার আকাশ ছুঁতে পেরেছেন তাদের সঙ্গী হিসেবে অবশ্যই তাদের স্বামীদের অবদান রয়েছে। স্বামীর সাহায্য, সহযোগিতা ও উৎসাহ ছাড়া স্ত্রীর এগিয়ে যাওয়া শুধু কষ্টকরই নয় বরং অনেক ক্ষেত্রে অসম্ভব। তাহলে নারীর সাফল্য এক অর্থে পুরুষের সাফল্য। প্রত্যেক পুরুষের সাফল্যের পেছনে যদি একজন নারীর ভূমিকা থাকতে পারে, তবে স্ত্রীর সাফল্যের পেছনেও স্বামীর ভূমিকা থাকে। তা না হলে বেগম রোকেয়া নারীদের পথপ্রদর্শক হতে পারতেন না। আর বেগম রোকেয়া শুরু করেছিলেন বলেই নারীরা সফলতার যাত্রা শুরু করতে পেরেছিলো।

স্ত্রীর উচ্চাবস্থান মেনে নিতে কী খুব বড় মন মানসিকতার প্রয়োজন আছে? নাকি নারী-পুরুষ সম অধিকার মানসিকতার দরকার আছে? ভাই যদি বোনের উন্নতিতে খুশি হতে পারে, বাবা-মা যদি মেয়ের কারণে গর্বিত হতে পারেন, দেশ যদি কোন দেশের কন্যার উন্নতিতে মাথা উঁচু করে বিশ্ব দরবারে দাঁড়াতে পারে তবে স্বামী স্ত্রীর কারণে কেন নয়?

কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যাদের কথা উল্লেখ না করলে স্বামীরা দোষী অনুভব করবেন হয়তো। যে সকল স্ত্রী নিজের উন্নতির কারণে অহংকারী হয়ে উঠেন, স্বামীকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য অবহেলা করা শুরু করেন, আচার ব্যবহারের মাধ্যমে কেবল নিজের বড়ত্বটাই প্রমাণ করতে থাকেন, এমন কি নিজের ‘স্ত্রী’ নামক ভূমিকাটি ভুলে যান সে সকল নারীদের কথা আলাদা। তারা হয়তো এ সকল আচরণের মাধ্যমে দিনকে দিন স্বামীর সাথে তাদের দূরত্ব বাড়াতে থাকেন, স্বামীর রাগ, ঘৃণা ও হিংসার পাহাড়টিকে উচ্চ থেকে সুউচ্চ করে থাকেন।

নিজের আত্মপরিচয় ভুলে গেলে চলবেনা। সব কিছুর আগে আমি একজনের সঙ্গিনী, তার প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য, বিশ্বাস রক্ষা এবং সর্বোপরি ভালোবাসার বিষয়টি বজায় রাখতে জানতে হবে। তবেই না সফল স্ত্রী।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনেরখবর-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য মনেরখবর কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।

Previous articleস্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে এবং নারীর মন
Next articleছেলে নিজেকে হিরো ভাবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here