সুখী হোন বিবাহিত জীবনে: দাম্পত্য সম্পর্কে সহিংসতা ও শান্তি- পর্ব ৪

0
32

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতে দেখা যায়। নানা কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতের অমিল হলে, একজন আরেকজনকে ভুল বুঝলে, দুজনের মধ্যে কেউ কোনো ভুল বা অন্যায় কাজ করলে এবং আর্থিক সংকটের কারণে ঝগড়া কিংবা মারামারি হতে পারে।
ঝগড়া বা মারামারির ফলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক খারাপ হয়, পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা থাকেনা, শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, এমনকি সংসার ভেঙেও যেতে পারে।
স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যকে বিশ্বাস করে, ভালোবেসে ,শ্রদ্ধা করে এবং বেশ কিছু কৌশল অবলম্বন করে নিজেদের ভেতর ঝগড়া বা মারামারি বন্ধ করতে পারেন। স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে  ঝগড়া-মারামারি বন্ধের জন্য যেসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং যে সব বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে হবে সেগুলো হলো-
– ঝগড়া বা মারামারির পরে ওই বিষয়ে বারবার চিন্তা করে নিজেকে অসুখী না করা। কারণ, অন্যায় আচরণ করে একবার কষ্ট দেওয়ার পর স্ত্রী যদি বারবার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করেন তবে স্বামীর দেওয়া কষ্টকে তিনি নিজেই কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তাই একটা কষ্টের বা দুঃখের কথা বারবার চিন্তা করে নিজের কষ্টকে বাড়ালে বা ধরে রাখলে নিজেরই কষ্ট হয়।
-ঝগড়ার সময় এমন কোনো কথা না বলা যা কাউকে হাত তুলতে বা মারতে প্ররোচিত করে। যেমন- ‘কাজের মধ্যে কাজ একটাই তো পারো আমার উপর বেটাগিরি দেখানো’ এ ধরনের কথা না বলা।
-সমস্যা নিয়ে কথা বলার সময় স্বামী বা স্ত্রী যে কোনো একজন যদি বেশি উত্তেজিত হয়ে যান তবে উত্তেজনা না বাড়িয়ে যে কোনো একজনের কাজ হবে ওই জায়গা থেকে সরে যাওয়া। অন্য সময় যখন সে শান্ত থাকবে তখন প্রসঙ্গটি আবার বলা।
এমন কথা না বলা, যা পূর্বের কোনো মারামারির সাথে সম্পৃক্ত। (যেমন- তুমি ভেবেছ আমি আগের কথা ভুলে গেছি না ! পরশু দিন তুমি কি বলেছ এখনই ভুলে গেছ?)।
– কেউ মারতে গেলে দ্রুত জায়গা থেকে সরে যাওয়া।
মারার সময় বা পরে চিৎকার করে লোক ডাকাডাকি করা বা কান্নাকাটি করে অভিযোগ করলেও মারামারির তীব্রতা বেড়ে যায়। কারণ আশপাশের লোকজন এমন কথা বলতে পারে যাতে করে যে মারছে তার রাগ আরও বেড়ে যায়। তাই এ বিষয়টি এড়িয়ে চলা।
যে মারছে তার মারার স্বভাবকে সহজে গ্রহণ না করে বরং পারিবারিক ভাবে অথবা সালিশের মাধ্যমে মারামারি বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া।
  শিশুরা যখন বাবা-মাকে ঝগড়া বা মারমারি করতে দেখে তখন তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। যা শিশুর সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠার অন্তরায়। তাই উচিত ছেলে-মেয়ের সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার কথা চিন্তা করে ঝগড়া বা মারামারি বন্ধ করা।
পরিবারে মারামারি বন্ধের আরেকটি উপায় হলো গণতান্ত্রিক আচরণের চর্চা করা। অর্থাৎ যে কোনো বিষয়ে একজন সিদ্ধান্ত না নিয়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেওয়া। তাতে কোনো সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একজন আরেকজনকে দোষারোপ করতে পারেনা বরং সিদ্ধান্ত ভুল হওয়ার দায়িত্ব সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়।
– ঝগড়া-মারামারি বন্ধ হওয়ার আরেকটি উপায় হলো পরিবারের সবাই মিলে এক সঙ্গে বেশি বেশি ভালো সময় কাটানো। যেমন সবাই মিলে গল্প করা, সবাই মিলে বিশেষ রান্নার প্রস্তুতি নেওয়া, একসাথে খাওয়া ( প্রতিদিন অন্তত একবার), পরিবারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত সবাই মিলে নেওয়া, ছেলে-মেয়েদের সারাদিনের নানা কথা বাবা-মাকে বলার সুযোগ পাওয়া, সবাই মিলে বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি।

স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-মারামারির পরে পরিস্থিতি সামলানোর জন্য যে সব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং যে সব দক্ষতা বাড়াতে হবে সেগুলো হলো-
– স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটার পর খুব সহজেই সব কিছু মিটে যাবে এমন প্রত্যাশা না করা। তাদের উভয়কেই পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার সময় দিতে হবে।
ঝগড়া-মারামারির পরে এ ঘটনা নিয়ে অতিরিক্ত আলাপ আলোচনাও ঠিক নয়। এতে আসল ঘটনার ডালপালা গজিয়ে  সত্যের সঙ্গে অনেক মিথ্যা তথ্য যোগ হয়।
– স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলা মেটানোর ক্ষেত্রে শ্বশুর-শাশুড়িরা বা পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের একটা ভালো ভূমিকা রয়েছে। যে বেশি অন্যায় করেছে তাকে ব্যাপারটা বুঝতে দিয়ে যে নির্যাতিত হয়েছে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারে। এক্ষেত্রে সব সময় একজনকে ক্ষমা চাইতে না বলে সমন্বয় করতে হবে। অর্থাৎ কখনও বউকে ছেলের কাছে ক্ষমা চাইতে বলতে পারেন আবার ছেলেকেও বউ এর কাছে ক্ষমা চাইতে বলতে পারেন।
স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে ঝগড়া যদি মারাত্মক পর্যায়ে যায় তবে তাদের সাময়িক ভাবে নিরাপদ দূরত্বে রাখা। এক্ষেত্রে অন্য ঘরে বা অন্য বাড়িতে রাখা যেতে পারে।
ফরিদা আক্তার
মনোবিজ্ঞানি
এ প্রসঙ্গে লেখকের অন্যান্য লেখা-
সুখী হোন বিবাহিত জীবনে – পর্ব ১
সুখী হোন বিবাহিত জীবনে – পর্ব ২
সুখী হোন বিবাহিত জীবনে: দাম্পত্য সম্পর্কে সহিংসতা ও শান্তি – পর্ব ৩


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleমানসিক রোগের ভুল ধারণা : পর্ব – ৪
Next articleমানসিক রোগীদের পাগল বলার দিন ফুরাচ্ছে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here