শিশুদেরকে ভীতি প্রদর্শন নয়, সঠিক তথ্য প্রদান জরুরি

শিশুদেরকে ভীতি প্রদর্শন নয়, সঠিক তথ্য প্রদান জরুরি

ছোট্ট বেলায় জুজুর ভয়ে ভীত ছিল না, এমন মানুষ মনে হয় কমই পাওয়া যাবে। আসলে শিশুদের এই জুজুুর ভয় দেখিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হয়েছে সবসময়। পাঁচ বছরের রাফির ব্যাপারটাই ধরুন-কিছুদিন ধরেই রাতে ঘুমের মধ্যে কী-সব স্বপ্ন দেখে চিৎকার করে করে উঠছে। সাথে আছে প্রায়শই বিছানা ভেজানো, অথচ তার ব্লাডার কন্ট্রোল বেশ ভালো। তার মা বেশ চিন্তিত। এমনিতেই করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত চারিদিক। ভয় আর হতাশার ধোঁয়া সবদিকে। লকডাউন আর কর্মহীনতা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে সবাইকে। যেখানে বড়োরাই মানসিক চাপ নিতে পারছে না, সেখানে বাসায় আটকে থাকা বাচ্চাদের কথা সহজেই অনুমেয়। ‘কোনো সমস্যা আছে কিনা’-প্রশ্নটি অনেকক্ষণ ধরে জিজ্ঞেস করার পর রাফি বলেছে তার ভয় লাগে, কারণ ‘বিশাল বিশাল শিংওয়ালা করোনা ভূত‚’ তাকে ধরতে আসে রাতের বেলা এবং বাসার সাহায্যকারী মিনা তাকে বলেছে, বাসার বাইরে গেলেই শিংওয়ালা করোনা ভূত‚ তাকে ধরে ফেলবে এবং সবাইকে মেরে ফেলবে। কথাটা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল রাফির মায়ের, কিন্তু মিনাকে দোষ দিয়েও লাভ নেই, সে রাফিকে বাইরে গিয়ে খেলা থেকে আটকাতে সেই প্রাচীন জুজুুকেই বেছে নিয়েছে। সচেতন মা হিসাবে রাফির মা বুঝতে পারছেন, তিনি একটা বড়ো ভুল করে ফেলেছেন। তার উচিত ছিল আগেই বাচ্চার সঙ্গে এই মহামারি নিয়ে সঠিক তথ্য দিয়ে কথা বলা। তাই তিনি এবং তার স্বামী মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন রাফির সঙ্গে কথা বলবেন এই করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ নিয়ে। রাফির বাবা-মা শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও অনেকেই ভেবে থাকেন, ‘বাচ্চারা কী বুঝবে’, ‘সব কথা বাচ্চাদের বোঝার দরকার নেই’ ইত্যাদি।

আসলে এই কথাগুলো সঠিক নয়। বাচ্চারাও উদ্বেগ, অবসাদ এবং উৎকণ্ঠায় ভুগে থাকে, কিন্তু সেটা বড়োদের মতো প্রকাশ করতে বা বলতে পারে না। ফলে সহজেই বিরক্ত হওয়া, রাগ, অস্থিরতা, ভয় পাওয়া, বিছানায় প্রস্রাব করা ইত্যাদি হয় তাদের প্রকাশ মাধ্যম।

যেহেতু বড়োদের পাশাপাশি বাচ্চারাও করোনাভাইরাস নিয়ে নানামুখী কথা শুনছে বা টিভিতে-ইন্টারনেটে বিভিন্ন খবর দেখছে, সেটা বড়োদের মতো করে বোঝা তার জন্য কঠিন। কিন্তু পৃথিবীব্যাপী এই ভাইরাস নিয়ে যে মাতামাতি সেটা নিয়ে বড়োদের মতো শিশুদের মধ্যেও উদ্বেগ কাজ করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বাবা-মা সন্তানের সঙ্গে খোলাখুলিভাবে সহায়তার মনোভাব নিয়ে আলোচনা করলে তা তাদের বিষয়গুলো বুঝতে, কঠিন এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং অন্যদের জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে।

কোভিড-১৯: শিশুকে তথ্য দেবেন কীভাবে?

বিশেষজ্ঞগণ ছাড়াও আন্তর্জাতিক সংস্থা, যেমন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ ইত্যাদি শিশুদের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করা এবং মানসিক চাপ কমাতে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে। দেখে নেয়া যাক, সেটা কীভাবে?

১. খোলাখুিল প্রশ্ন করুন ও দেখুন সে কতটুকুু জানে বর্তমান মহামারি বিষয়টি নিয়ে সন্তানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করুন। বোঝার চেষ্টা করুন তারা বিষয়টি নিয়ে কতদরূ জেনেছে এবং কী কী বিধিনিষেধ অনুসরণ করছে। খুব ছোটো হলে (যেমন প্রি-স্কুল বাচ্চা) এবং এখনো রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে না জেনে থাকলে তাদের কাছে বিষয়টি সম্পূর্ণ তোলার দরকার নেই-তার মধ্যে ভয় না ছড়িয়ে শুধু যথাযথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার স্বাস্থ্যবিধিগুলো তাদের মনে করিয়ে দিন। নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করুন এবং আপনার সন্তান যেন স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে সেই সুযোগ তৈরি করে দিন। ছবি আঁকা, গল্প বলা বা অন্য কোনো কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে তার সঙ্গে আলোচনাটা শুরু করা যায়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, তাদের উদ্বেগের বিষয়গুলোকে কখনোই খাটো করে না দেখা বা এড়িয়ে না যাওয়া। তাদের অনুভূতি-উপলব্ধিকে মেনে নিন এবং তাদেরকে বোঝান যে, এসব বিষয়ে ভয় পাওয়াটাই স্বাভাবিক। আপনার আচরণে এটা প্রকাশ করতে হবে যে,  ‍পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে আপনি তার কথা শুনছেন এবং চাইলেই যেন আপনার ও তার শিক্ষকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে পারে সেই আত্মবিশ্বাস তাদের দিতে হবে।

২. সৎ থাকনু: শিশুবান্ধব পদ্ধতিতে সত্যটা তুলে ধরুন বিশ্বজড়ে যা চলছে সে বিষয়ে জানার অধিকার শিশুদেরও রয়েছে। তবে বড়োদেরও দায়িত্ব রয়েছে তাদের মানসিক যন্ত্রণা থেকে দূরে রাখার। তাদের বয়স অনযুায়ী কথা বলুন, তারা কী প্রতিক্রিয়া দেখায় তা খেয়াল করুন, তাদের উদ্বেগের মাত্রা অনুধাবনের চেষ্টা করুন ও তাদের প্রতি সংবেদনশীল হোন। তাদের কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে না পারলে কোনো কিছ বানিয়ে বলবেন না। এটাকে ধরে নিন সবগুলো প্রশ্নের একসঙ্গে উত্তর দেয়ার সুযোগ হিসেবে। ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ওয়েবসাইট এ সম্পর্কিত তথ্যের বড়ো উৎস। করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুজব প্রচলিত, শিশুরা এসব গুজবে সহজেই প্রভাবিত হতে পারে। তাই তাদের বুঝিয়ে বলুন যে, অনলাইনে যত তথ্য পাওয়া যায় তার সবটাই সঠিক নয়। তাই এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যের ওপর নির্ভর করাই সবচেয়ে নিরাপদ।

৩. ছেলে-মেয়েরা নিজেদের ও তাদের বন্ধুেদর কীভাবে রক্ষা করতে পারে, তা দেখিয়ে দিন ছেলে-মেয়েদের করোনাভাইরাস ও অন্যান্য রোগ থেকে নিরাপদ রাখার সবচেয়ে ভালো উপায়গুলোর একটি হচ্ছে নিয়মিত সঠিকভাবে হাত ধোয়া। শিশুর কাছে এ বিষয়ক শিক্ষাকে আনন্দদায়ক করতে গান বা নাচের মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। হাঁচি-কাশির সময় কীভাবে হাত ভাঁজ করে কনুই দিয়ে নাক-মুখ ঢাকতে হয় তা আপনি ছেলে-মেয়েদের দেখাতে পারেন। তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে যে, যাদের এসব উপসর্গ আছে তাদের কাছে না যাওয়া এবং জ্বর, কাশি বা শ্বাসকষ্ট বোধ করলে তারা যেন সেটা সঙ্গে সঙ্গে জানায়।

৪. আশ্বস্ত করুন যখন আমরা টেলিভিশন বা অনলাইনে প্রচুর মন খারাপ করা ছবি দেখি তখন মনে হতে পারে যেন সংকট আমাদের চারপাশেই। শিশুরা স্ক্রিনের ছবি এবং নিজেদের বাস্তবতাকে গুলিয়ে ফেলতে পারে এবং ভাবতে পারে তারা আসন্ন বিপদের মুখে। এসব ক্ষেত্রে সম্ভব হলে খেলাধুলা ও মনোবল চাঙা করার অন্যান্য কর্মকান্ডের সুযোগ তৈরি করে আপনি আপনার শিশুকে মানসিক চাপ মুক্ত রাখতে পারেন। যতটা সম্ভব তার জন্য সময় দিন। আপনার সন্তান অসুস্থ’ বোধ করলে বোঝাতে হবে যে, তার ঘরে থাকা বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নিজের ও বন্ধুেদর জন্য বেশি নিরাপদ। তাদের বোঝাতে হবে যে, এই সময়টা কঠিন (ভীতিকর, এমনকি বিরক্তিকরও) হবে, কিন্তু এই নিয়মগুলো মেনে চললে সবাই নিরাপদ থাকবে।

৫. খতিয়ে দেখতে হবে তারা স্টিগমার শিকার হয়েছে বা ছড়াচ্ছে কি না করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বর্ণবৈষম্যের ঘটনা ঘটেছে বলে অনেক খবর প্রকাশ হয়েছে। তাই আপনার সন্তানও এ ধরনের বিদ্বেষের শিকার হচ্ছে কিনা বা তা ছড়াতে ভূমিকা রাখছে কিনা তা খতিয়ে দেখা গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে যে, কোনো মানুষ দেখতে কেমন, সে কোথা থেকে এসেছে বা কোন ভাষায় কথা বলে, তার সঙ্গে করোনাভাইরাসের কোনো সম্পর্ক নেই। যদি তারা এ ধরনের আচরণের শিকার হয় তাহলে যেন সংকোচ না করে তাদের আস্থাভাজন বড়ো কাউকে বিষয়টি সম্পর্কে জানায়।

৬. বিপদে এগিয়ে আসা লোকজনের দিকে নজর দিন এটা শিশুদের জানা গুরুত্বপূর্ণ যে, এই সংকটকালে অনেক মানুষ সহমর্মিতা ও উদারতার হাত নিয়ে একজন আরেকজনের পাশে দাঁড়াচ্ছে, সহায়তা করছে। রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ও কমিনিউটিকে নিরাপদ রাখতে স্বাস্থ্যকর্মী, বিজ্ঞানী ও তরুণসহ অন্য যারা কাজ করছেন তাদের কথা শিশুদের সঙ্গে গল্প করুন। সহৃদয় লোকজন যে তাদের সাহায্যের জন্য প্রস্তুত আছে সেটা জানতে পারলে তারা অনেকখানি স্বস্তি ও সাহস পাবে।

৭. নিজের যত্ন নিতে হবে এই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে পারলেই আপনি সন্তানদের সব ধরনের সাহায্য করতে পারবেন। এসব খবরে আপনার কী প্রতিক্রয়া ঘটে, তার থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করবে আপনার সন্তান। তাই এই পরিস্থিতিতে আপনি সুস্থ ও শান্ত আছেন দেখলে তারাও স্বস্তি অনুভব করবে। নিজের যত্ন নিন, নিজের আনন্দের কাজগুলো করুন। উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠায় ভগুলে কথা বলুন নিকটজনের সঙ্গে।

৮. সতর্কতার সঙ্গে আলোচনায় সমাপ্তি টানা এটা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য খবুই গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের সন্তানদেরকে আমরা মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে রাখছি না। আলোচনা শেষ করার সময় তাদের শরীরী ভাষা দেখে, স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে কিনা এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক আছে কিনা তা দেখে তাদের উদ্বেগের মাত্রাটা বোঝার চেষ্টা করুন। সন্তানদেরকে মনে করিয়ে দিন, যেকোনো সময় আপনার সঙ্গে তাদের আরো গুরুতর কোনো বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। তাদেরকে বুঝিয়ে দিন, আপনি তাদের প্রতি যত্নশীল, তাদের কথা শুনছেন এবং তারা যখনই উদ্বিগ্ন হবে তখনই আপনার সঙ্গে তা নিয়ে বিনা সংকোচে কথা বলতে পারবে।

শিশুর সাথে কোভিড-১৯ নিয়ে খোলামেলা আলাপ ছাড়াও এই দীর্ঘ ঘরবন্দি সময়ে করোনা ভয়ে ভীত শিশুদের মানসিক চাপ মোকাবেলায় তার বাবা-মা ও পরিবারের দায়িত্ববান সদস্যদের কিছু করণীয় আছে।

শিশুর মানসিক চাপ কমাতে করণীয়

  • শিশুদের ভয় এবং দুঃখের মতো অনুভূতি প্রকাশের ইতিবাচক উপায়গুলো খুঁজতে সহায়তা করুন। প্রতিটি শিশুরই আছে আবেগ প্রকাশ করার নিজস্ব উপায়। যেমন: কোনো সুজনশীল কাজ, যেমন ছবি আঁকা, খেলা ইত্যাদির মাধ্যমে হতে পারে। শিশু যদি তার অনুভূতি কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারে, তবে সে স্বস্তি এবং নিরাপদ বোধ করবে।
  • প্রতিকল‚ পরিবেশে শিশু একটু বেশি মনোযোগ চায়। তাই তাকে একটু বেশি সময় দিন, তার কথা মন দিয়ে শুনুন, আশ্বস্ত করুন, তার প্রতি সদয় হোন। মাঝে মাঝে জড়িয়ে ধরে বলুন যে আপনি আছেন তার পাশে।
  • যতটা সম্ভব দৈনন্দিন জীবনে পরিচিত রুটিনগুলো বজায় রাখুন অথবা পরিবর্তিত পরিবেশে নতুন রুটিন তৈরি করুন শিশুকে সঙ্গে নিয়ে।
  • যেহেতু বাবা-মা এবং পরিবারের বড়ো সদস্যরা এখন বাসায়ই অবস্থান করছেন তাই শিশুদের কোয়ালিটি টাইম দিন। বাচ্চাদের বয়স উপযোগী ইনডোর গেইম প্ল্যান করুন, কিছু শরীরচর্চা করাতে পারেন যেমন: স্কিপিং।

জুজুুর ভয় দিয়ে শুরু করেছিলাম। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে চলে আসা ‘জুজুু’ যে আসলেই কে বা কী সেটা শিশুর বাবা-মাও হয়ত জানেন না। কিন্তু অনেক শিশুর ক্ষেত্রেই এই ভয়কে বয়ে বেড়াতে হয় আজীবন। তাই শিশুকে ভয় দেখিয়ে নয়, বয়স উপযোগী সঠিক তথ্য দিলেই শিশু ভয়কে নিজেই জয় করতে পারবে। তার মানসিক বিকাশ হবে স্বতঃস্ফূর্ত। ভালো থাককু পৃথিবীর সকল শিশু।

সূত্র: লেখাটি মনের খবর মাসিক ম্যাগাজিনে প্রকাশিত

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

Previous articleকরোনায় মৃত্যুর সঙ্গে সূর্যের আলোর যোগসূত্র পেয়েছেন গবেষকরা
Next articleকরোনাকালে মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দূর করতে হবে মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বিভ্রান্তি
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here