মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ফান্ড গঠনের আবেদন

নতুন মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্যের দেখাশুনা এবং যে কোনো সমস্যা থেকে রক্ষা করার জন্য একটি তহবিল গঠনের আবেদন করা হয়েছে। ম্যাটারনাল কেয়ার একশন গ্রুপ-এর একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, গর্ভধারণকালীন সময়ে মা বাবার নানা ধরনের বিষণ্নতা ও উদ্বিগ্নতার দেখা দেয় যা ‘প্যারেন্টাল ডিপ্রেসন এন্ড এংজাইটি’ নামে পরিচিত। ধাত্রীদের এই ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই অথবা যা ধারণা রয়েছে এতে প্রচুর পরিমাণে ফাঁক ফোকর রয়েছে।
গবেষক ক্রিস্টিনা প্যাটারসন জরিপে পেয়েছেন যে শতকরা ৬৩ ভাগ মা তাদের গর্ভধারণকালীন সময়ে বিষণ্নতার প্রাথমিক পর্যায়ে থাকেন। অথবা যে কোনো মানসিক সমস্যার শুরু তখন হয়ে থাকে। ঐ মায়েদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ দেখা যায় যতদিন পর্যন্ত তাদের সন্তান না হয় তারা কোনো ধরনের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেন না। জরিপে অংশগ্রহণ করা শতকরা ৯৬ ভাগ মায়েরা প্রসব পরবর্তী বিষণ্নতায় ভোগে। আর শতকরা ৭২ ভাগ মায়েদের ক্ষেত্রে তার ধাত্রীরা প্রসব পরবর্তী বিষণ্নতার ব্যাপারটি মুল্যায়ন করেননি। প্যাটারসন বলেন, “এই বিষণ্নতার প্রভাব শুধু মায়েদের উপর পড়ে না, পুরো পরিবারের উপর পড়ে। আর এই বিষণ্নতার কারণে মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে”।
তিনি আরো বলেন, “একজন মা হওয়া মানে তার সন্তানের জন্য তার আবেগ বৃদ্ধি পাওয়া, নানা দিক থেকে তার জ্ঞান বৃদ্ধি পাওয়া, এমনকি ভবিষ্যতে একটি অনিরাপদ সংযুক্তির ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়া। মায়ের যে কোনো ধরনের মানসিক সমস্যার কারণে পরবর্তীতে সন্তানের কোনো কিছু শেখার ক্ষমতায় ব্যাঘাত ঘটে, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে, নেশাগ্রস্ত হতে পারে, কর্তব্যে অবহেলা, এমনকি আত্মহত্যার ঝুঁকিও থাকতে পারে।
প্যাটারসন বলেছেন, এটি ধাত্রীদের কোনো আচরণগত সমস্যা নয়, এটি তাদের জ্ঞানের সমস্যা। কেননা তাদের ধাত্রীবিদ্যা নিয়ে জ্ঞান সীমিত। তারা জানে না কীভাবে একটা সমস্যা খুঁজে বের করতে হয় এবং কীভাবে অন্যকে জানাতে হয়। ধাত্রীরা হয়ে থাকে গর্ভধারণকালীন সময়ে মায়েদের জন্য সবচেয়ে বড় ডাক্তার। মায়েরা ধাত্রীদের পেশাদার ডাক্তার মনে করে থাকেন।
তিনি বলেন, “গর্ভবতী মায়েরা এন্টিনাটাল ক্লাসে যেতে পারেন সেখানে তারা পেরিনাটাল ডিপ্রেসন সম্পর্কে সব ধরনের জ্ঞানলাভ করতে পারেন। কিন্তু যদি তিনি একজন ধাত্রীর কাছে যান তাহলে এই ধরনের কোনো জ্ঞান লাভ করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। কেননা ধাত্রী নিজেই হয়ত এই সম্পর্কে কিছু জানেন না। গর্ভবতী মায়েদের কমপক্ষে এতটুকু জানতে হবে যে সমস্যা কোন পর্যায়ে গেলে তাদের সাহায্য চাইতে হবে”।
প্যাটারসন বিশ্বাস করেন যে এই ধরনের সমস্যা হওয়ার অথবা বৃদ্ধি পাওয়ার একমাত্র কারণ হলো গর্ভবতী মায়েদের জন্য কোনো মানসিক স্বাস্থ্য তহবিল নেই। তিনি বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সর্বদাই শারীরিক স্বাস্থ্য সমস্যার গরীব খালাতো কিংবা মামতো ভাই”।
ধাত্রীবিদ্যা জুডীথ এইউটি এর প্রধান ম্যাক আরা কুপার বলেন, “মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আমাদের কর্মীদের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দুইভাবেই অনেক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি এখানে আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার চাইতে বড় সমস্যা হলো আমরা যখন কোনো মাকে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে বলি তখন তাদের নানা সমস্যার কারণে সাহায্য পায় না। অর্থ এক্ষেত্রে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। এই ক্ষেত্রেই ধাত্রীরা মনে করেন তাদের শুধু বাচ্চাটি ধরে রাখার জন্য আনা হয়ে থাকে। তাদের এই দিকটি দেখতে হয় যেন মা সুস্থ থাকেন। এবং মা ও হাসপাতালের সেবার মধ্যে সে যোগসূত্র স্থাপন করেন। ধাত্রীরা শেষ পর্যন্ত তাদের পাশে থাকেন এবং সমর্থন দেয়ার চেষ্টা করেন”।
কুপার বলেন, “মেটারনাল মেন্টাল হেলথ টিম এর দায়িত্ব মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় পর্যাপ্ত সাহায্য করা আমাদের না। আমরা মায়েদের সমর্থন করতে পারি। আর এজন্য উচিৎ গর্ভবতী মায়েদের জন্য একটি ফান্ড তৈরি করা। যদি মায়েরা তাদের প্রয়োজনীয় সেবা পেয়ে থাকেন তাহলে এই ব্যাপারটি ধাত্রীদের জন্য অনেক বড় আনন্দ এবং চিন্তামুক্তির ব্যাপার হবে”।
মেটারনাল মেন্টাল হেলথ টিম এই বছর একটি পিটিশন করছে যার আবেদন মায়েদের পেরিনাটাল ডিপ্রেসন এবং এংজাইটির জন্য এই বছরের বাজেটের খাতে একটি খাত রাখা।
তথ্যসূত্র-
(http://www.newstalkzb.co.nz/news/health/plea-to-protect-new-mothers-mental-health/)
রুবাইয়াত মুরসালিন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম

Previous articleআমি ছয় বছর ধরে ওসিডি-তে ভুগছি
Next articleসবকিছুর কথা চিন্তা করে দেড় মাস যাবৎ ড্রাগস নেয়া বন্ধ করে দিয়েছি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here