গত বছরের মার্চের যাতায়াতই দেশে ছড়িয়েছিল করোনাভাইরাস: গবেষণা

করোনাভাইরাস এর কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর ঢাকা ছাড়ার হিড়িক পরে। ছবিঃ চায়না মর্নিং

দেশে গত বছরের মার্চে মহামারীর প্রাদুর্ভাবের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর ঢাকা থেকে চতুর্দিকে যে যাতায়াত হয়েছিলবাংলা, তাতেই করোনাভাইরাস সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পাশাপাশি আইসিডিডিআর,বিসহ বেশ কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে গবেষণা চালিয়ে এই চিত্র দেখতে পেয়েছে।

মঙ্গলবার আইসিডিডিআর,বি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই গবেষণার বিষয়ে আরও বলা হয়, গত বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছিল।

বিস্তারিত কিছু সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়নি।

এতে বলা হয়, “২০২০ সালের মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগৃহীত করোনাভাইরাসের ৩৯১টি নমুনার জিনোম বিশ্লেষণ করা হয়। ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম উদ্ভব হয়।”

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআর গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছিল। তার ১০ দিন পর আসে প্রথম মৃত্যুর ঘোষণা।

দেড় বছর গড়িয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশে শনাক্ত হয়েছে ১৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪৪০ জন কোভিড রোগী। আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছে ২৭ হাজার ৭ জন।

 

করোনাভাইরাস এর কারণে দেয়া কঠোর বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করেই মানুষ বাড়ির পথে। ছবিঃ বাংলা ট্রিবিউন

প্রাদুর্ভাবের পর গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। তখন অফিস, আদালত, যান চলাচল সবই বন্ধ করা হয়েছিল।

সরকারি ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঢাকা ছাড়ার হিড়িক নেমেছিল। আর সেই ছুটি বাড়তে বাড়তে জুন অবধি গিয়ে ঠেকেছিল।

আইসিডিডিআর,বি বলছে, সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম থেকে সংগৃহীত ফেইসবুক এবং মোবাইল ফোন অপারেটরদের তথ্য অনুযায়ী মার্চের ২৩ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে মানুষের ঢাকা ত্যাগ করার তথ্যের সঙ্গে কোভিড-১৯ এর জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

“মার্চের ২৩ থেকে ২৬ তারিখের মধ্যে ঢাকা বহির্মুখী যাতায়াতই মূলত দেশব্যাপী করোনাভাইরাস বিস্তারের প্রাথমিক কারণ হিসেবে বলছেন তারা।”

আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবি, আইদেশি, বাংলাদেশ সরকারের এটুআই প্রোগ্রাম, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্যাঙ্গার জিনোমিক ইনস্টিটিউট, হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ, এবং ইউনিভার্সিটি অব বাথ-এর বিজ্ঞানীদের যৌথ উদ্যোগে ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিড-১৯ নিয়ে দেশব্যাপী বিস্তৃত গবেষণা শুরু করে।

একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে বিভিন্ন সময়ে লকডাউন এবং জনসাধারণের গতিবিধির ভূমিকার উপর ভিত্তি করে একটি বিশ্লেষণধর্মী গবেষণাপত্র প্রকাশ করা হয়।

গত ৪ সেপ্টেম্বর গবেষণাপত্রটি বিজ্ঞান সাময়িকী নেচার-এ প্রকাশ হয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি।

ওই গবেষণাপত্রেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রথম ছড়িয়ে পড়ার কারণ উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরীন বলেন,সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসাধারণের চলাচল নিষিদ্ধ করা, পরিবহন এবং যানবাহন চলাচলে সীমাবদ্ধতা আনা, বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন এবং যেসব দেশে উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট ছিল সেখান থেকে আগত ভ্রমণকারীদের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আলাদা রাখা এবং সময়মতো লকডাউন সিদ্ধান্ত বা প্রয়োজনবোধে আন্তর্জাতিক চলাচল সীমাবদ্ধ করা।

লকডাউন বা সাধারণ ছুটি থেকে বর্তমানে দেশে সবকিছু আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। যদিও দেশে মাত্র দুই কোটির কিছু উপরে মানুষ প্রথম ডোজের টিকা গ্রহণ করেছেন। প্রথমদিকে শুধু ষাটোর্ধ মানুষকে টিকার আওতায় নেয়া হয়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে সেই বয়সসীমা কমে আসে। বর্তমানে অনেকেই টিকার এসএমএসের অপেক্ষা থেকে রয়েছেন।

মাঝে বেশকিছুদিন টিকার স্বল্পতা ছিলো বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়। এরমধ্যে সরকার থেকে গণটিকা কর্মসূচী চালু করেন। সেখানে টিকা নিয়া নানারকম বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। অনেকেই টিকা নিতে এসেও না পেয়ে ফেরত চলে যান। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও জন প্রতিনিধিদের প্রতি অভিযোগ রয়েছে। বেশকিছু এলাকায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে বিপদে আছেন রেজিস্ট্রেশন করা ব্যক্তিরা। কারও কারও দুইমাস আগে রেজিস্ট্রেশন করা থাকলেও এখনও প্রথম ডোজের এসএমএস পান নি। এরইমধ্যে শুক্রবার চীন থেকে আরও ৫০লাখ ডোজ টিকা এসেছে ।

এনিয়ে সব মিলিয়ে সিনোফার্মের মোট ২ কোটি ৪৯ লাখ ডোজের বেশি টিকা পেল বাংলাদেশ।

সিনোফার্মের ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনতে চুক্তি করেছে সরকার। এছাড়া কোভ্যাক্স থেকেও বাংলাদেশ সিনোফার্মের টিকা পাচ্ছে বিনামূল্যে।

দেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান এখন সিনোফার্মের টিকার উপর নির্ভর করেই চলছে।

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও সিনোফার্ম ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার টিকা প্রয়োগ হয়েছে বাংলাদেশে।

সরকার চেষ্টায় আছে টিকা দিয়ে ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে রাকাহার। এর মধ্যে গত ১২ই সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজেওও খুলে দেওয়া হয়ছে।

 

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪
Previous articleনিজেকে ভাগ্যবান ভাবলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে
Next articleদুই সন্তানের মাঝে আদর্শ সময় পাঁচ বছর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here