মানসিক স্বাস্থ্যকে আর অবহেলা নয়

যখন কেউ মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করে তখন লাখো মনস্তাত্ত্বিক সংজ্ঞা মনে আসে। মানসিক অসুস্থতার ধারণায় একটি ভাল উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে, কোনো বিষণ্ন অথবা উদ্বিগ্ন মানুষকে তার চিন্তা চেতনা থেকে বের হয়ে আসতে বলা এবং এমন ধারণা সৃষ্টি করা যেন আপনি তার সব সমস্যা সমাধান করে দিতে পারবেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময় মানুষ ভুলে যায় যে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা গুলো থেকে বের হয়ে আসা এতটা সোজা না যে বলার সাথে সাথেই কেউ এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসবে।
যেহেতু কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের অভিভূত হওয়ার মত চাপ সৃষ্টিকারী বিষয় রয়েছে সেহেতু এটা সহজ যে তারা তাদের উদ্বিগ্নতাকে পাত্তা দেয় না অথবা আবেগের জায়গাগুলো থেকে পালিয়ে আসে এবং মানসিক সমস্যা গুলো এড়িয়ে যায়।
এটি নিয়ে বৈজ্ঞানিক পড়াশুনা এবং মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা রয়েছে যা প্রমাণ করে যে, কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ভঙ্গুর এবং উৎসৃষ্ট। নিজেকে সে অনুমতি দিয়ো না যেন তুমি তোমার মানসিক সমস্যাকে পাত্তা না দিয়ে স্কুল অথবা কলেজের যাবতীয় কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখো এবং কলেজের দায়িত্ব পালন করে থাক।
মানসিক স্বাস্থ্য একটি দানবিক বিষয়, বিভিন্ন গবেষণার এলাকা, আলোচনার এলাকা এবং যারা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এর পরিমাণ খুবই বিশাল। এ নিয়ে চিন্তা করাও একটি বিশাল ব্যাপার। যাই হোক কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য একটি গুরত্ব দেয়ার মত বিষয়। সব বয়সের মানুষের মধ্যে দেখা যায় কলেজের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্যকে অন্যান্য কাজের জন্য পাত্তা দেয়া হয় না। activeminds.org একটি সাইট যেখানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে যত ধারণা আছে সেখানে গুরত্ব দেয়া হয় তাদের মতানুসারে, “কলেজের প্রায় এক তৃতীয়াংশ ছাত্র ছাত্রীর প্রতিবেদন তারা বিষণ্নতায় ভুগে যে তারা কাজ করার সময় সমস্যায় পড়ে”। এই সাইট টি এর সাথে আরো জানায় যে ছাত্র ছাত্রীরা মানসিক সমস্যাকে পাত্তা দেয় না কারণ তাদের উপর রেজাল্ট ভাল করার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়, তাদেরকে বেশি গ্রেড পয়েন্ট তোলার জন্য এবং ভবিষ্যত লক্ষ্যের প্রতি অগ্রসর হওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের আত্নহত্যা সচেতন বিষয়ক পাতা বলে যে, প্রতি বছর প্রায় ১০০০ ছাত্র ছাত্রী কলেজ প্রাঙ্গণে আত্নহত্যা করে এবং আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন এন্ড দ্যা সুইসাইড প্রিভেনশন রিসোর্চ সেন্টার এই তথ্যটির সাথে একমত পোষণ করেছে।
এগুলো শুধু কাগজে করা পরিসংখ্যান নয়। এরা বাস্তব মানুষ এবং বাস্তব সমস্যা যা আমরা একটি প্রতিযোগিতামুলক পড়াশুনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মুখীন হয়ে থাকি। একে অন্যের সাথে প্রতিযোগিতা করা চাপ, পরীক্ষার ফলাফল ভাল করার চাপ অথাবা মা বাবাকে খুশি করার চাপ বড় ধরনের মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে যেমন, বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা এমনকি মনস্তাত্ত্বিক ভাঙন।  এটি বুঝা যায় যে একজন ছাত্রের জন্য তার ফলাফল ধরে রাখা, বাব মা কে খুশি করা, ভবিষ্যত লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়া একসাথে এত কিছু করা কঠিন। যাই হোক এই সবকিছু একসাথে ধরে রাখতে গিয়ে অনেক ছাত্র ছাত্রী জীবন নিয়ে বিরূপ মনোভাব তৈরি করে। যদি তুমি কোনো ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগে থাক যেমন বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা যে কোনো ধরনের মানসিক সমস্যা মনে রাখবে তুমি একা নও। ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য আরো বলে যে, ১০ জন কলেজ ছাত্রের মধ্যে একজন ছাত্র আত্নহত্যার পথ বেছে নেয়। তার মানে প্রতিদিন ১৫৯৮ জন ছাত্র এই পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার জন্য লড়াই করে।
মাঝে মাঝে ঠিক না থাকাও ঠিক। লড়াই করা ঠিক, নিজেকে একা ভাবা ঠিক। কিন্তু তোমার সমস্যা তোমার ভয়ে তুমি একা এটা ভাবা ঠিক নয়। মাঝে মাঝে কলেজের ছাত্র ছাত্রীরা খুবই ভয়ে থাকে যদি তারা তাদের ঠিক করা লক্ষ্যে না পৌঁছাতে পারে। এবং এই ভয় থেকে তৈরি হয় নিজেকে ছোট করা, নিজের প্রতি বিশ্বাস হারানো এবং নিজেকে দূরে সরিয়ে নেয়া। এসব দিকগুলো নিয়ে কাজ করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। যেমন বেইলর এর কাউন্সেলিং সেন্টার যা ১২ জন কাউন্সেলর নিয়ে পরিচালিত যাদের লাইসেন্স রয়েছে যারা তোমার সব কথা শুনবে এবং তোমাকে পরামর্শ দিবে। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আগে থেকে সময় নেয়ার প্রয়োজন হয় না। এছাড়া যেকোনো সাহায্যের জন্য তাদের ওয়েবসাইটে যাওয়া যায় যেহেতু তারা তাদের পেইজে বলে থাকেন তারা সবসময় সাহায্যের জন্য এগিয়ে আছেন।
সুতরাং যারা বিষণ্নতা, উদ্বিগ্নতা এছাড়া যেকোনো ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন আমরা বুঝি আমরা জানি তুমি জেনে রাখ তুমি একা নও ।
তাদের জন্য যাদের আত্নীয় প্রিয়জন মানসিক সমস্যায় ভুগছে যুদ্ধ করছে তাদের বুঝিয়ে দাও তারা একা নয় তুমি আছ তাদের পাশে, তবে নিজ থেকেই তাদের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবে না। অন্যের মানসিক সমস্যার সমাধান করতে পারব ভাবাটা একদমই ঠিক না কারণ ব্যাপারটি অতটা সহজ নয়।
যাদের মানসিক সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য ব্যাপারটি এমন নয় যে তারা হঠাৎ উঠে দাঁড়াবে, তাদের সমস্যাগুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিবে এবং সব সমস্যা পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবে। এই সমস্যাটির সাথে যুদ্ধ করা নিজেকে বারবার চোরাবালি থেকে টেনে হিঁচড়ে তোলা, যখনই তুমি ভাববে তুমি সরে এসেছ আবার এমন কিছু হবে যে তুমি আবার আগের জায়গায় পৌঁছে যাবে। সমর্থন, ভালবাসা, যত্ন এসব তুমি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে যুদ্ধ করা একজন মানুষকে দিতে পার কিন্তু তুমি তাকে সমাধান দিতে পার না।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা কলেজ ছাত্র ছাত্রীদের জন্য বিছানার নিচে লুকিয়ে থাকার মত দৈত্য। আমরা হেরে যাওয়াকে ভয় পাই, আমরা বিচারকে ভয় পাই, আমরা তুলনাকে ভয় পাই এবং আমরা অপর্যাপ্ততাকে ভয় পাই। কিন্তু আসলে আমাদের ভয় পাওয়া উচিৎ জীবনকে ভুলে গিয়ে যুদ্ধকরে বেঁচে থাকাকে।
তথ্যসূত্র-
(http://baylorlariat.com/2017/02/14/mental-health-cannot-be-ignored-anymore/)
রুবাইয়াত মুরসালিন, আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মনেরখবর.কম

Previous articleআমার সমস্যা মাথা ব্যথা কিন্তু সবাই আমাকে মানসিক ডাক্তার দেখাতে বলছে
Next articleঋণ সমস্যা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here