মানসিক রোগী ও তার পরিবারকে সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে

0
51
মানসিক রোগী ও তার পরিবারকে সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে

আমরা স্বাস্থ্য বলতেই শুধু শারীরিক সুস্থতাকেই বুঝি। কিন্তু শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশী মানসিকভাবে সুস্থ থাকাটাও অত্যন্ত জরুরী। আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে গুরুত্ব খুবই কম দেওয়া হয়। সামাজিক ভ্রান্ত ধারণা থেকেই, আমাদের সমাজে মানসিক রোগীদেরকে হেয় করা হয়ে থাকে। এ থেকে বেরিয়ে আসতে প্রয়োজন খোলাখোলি আলোচনা করা এবং মানসিক রোগ সম্বন্ধে জানা।

মানসিক সমস্যা বুঝতে পারবো কিভাবে ?
মানসিক রোগের দুই ধরনের উপসর্গ আছে। মানসিক উপসর্গ এবং শারীরিক উপসর্গ। মানসিক উপসর্গের লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে- অস্বাভাবিক আচরণ, অস্বাভাবিক কথা-বার্তা, ভয় পাওয়া, সন্দেহ করা, স্মরণশক্তি কমে যাওয়া, ভুলে যাওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া, শুচিবায়ুগ্রস্ততা, ভ্রান্ত বিশ্বাস, অলীক বিশ্বাস, খিটখিটে মেজাজ, মন খারাপ থাকা, কাজে-কর্মে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, আত্মহত্যা প্রবণতা, দুশ্চিন্তা, বিষণ্ণতা ইত্যাদি।

শারীরিক উপসর্গের মধ্যে রয়েছে- ঘুমের ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, অস্থিরতা, খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার প্রবণতা, খাওয়ার অরুচি, ওজন কমে যাওয়া, মাদকাসক্তি এসব।

এইসব উপসর্গের জন্য ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত ও সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হলেই তাকে আমরা মানসিক রোগী বলি।

মানসিক সমস্যায় পারিবারিক ও সামজিক উদ্যোগ কি হতে পারে?

উপরোক্ত সমস্যাগুলি পরিবারের কারো মধ্যে আছি কিনা, তা চিহ্নিত করাই পারিবারিক উদ্যোগের প্রথম কাজ। যদি পরিবারের কোন সদস্যের মাঝে উপসর্গ লক্ষ্যণীয় থাকে তাকে জ্ঞান-সম্মত চিকিৎসার আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং এই রোগীর স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদীসহ ও সকল চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। পূর্ণমেয়াদী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। রোগী হিসেবে যত্ন নিতে হবে। চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। একজন মানসিক রোগীর ক্ষেত্রে পরিবার বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। তাই সবার আগে তাদের এগিয়ে আসতে হবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানসিক রোগ এখনো কুসংস্কার, ভ্রান্ত ধারণার মধ্যেই আবদ্ধ। সমাজকে প্রথমে এই কুসংস্কারের ভয়াল গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সমাজের একটা লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো- মানসিক রোগীদের হেয় করা। মানসিক রোগী ও তার পরিবারকে সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে। মানসিক রোগ ও চিকিৎসা সম্বন্ধীয় কার্যক্রম বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মধ্যে চালিয়ে যেতে হবে।

মানসিক স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে?

বর্তমানে মানসিক রোগ চিকিৎসাকে তৃতীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য সেবা অর্থাৎ বিশেষায়িত হাসপাতাল, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু মানসিক রোগের চিকিৎসাকে প্রাইমারী(উপজেলা), সেকেন্ডারি(জেলা) পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।

তাছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত সকল ধরনের লোকবল বাড়াতে হবে। নার্স, সমাজকর্মী, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিষ্টদের সংখ্যা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য সেবায় জড়িত সকলের মধ্যে মানসিক রোগ সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে হবে।

বাংলাদেশের শিক্ষায় স্নাতক (এমবিবিএস কারিকুলাম) পর্যায়ের মানসিক রোগ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সঠিক রেফারেল সিষ্টেম নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সকল মানসিক রোগী সঠিক চিকিৎসার আওতায় আসতে পারে।

সাক্ষাৎকার দিয়েছেন,

অধ্যাপক ডা. সুষ্মিতা রায়

মনোরোগবিদ্যা বিভাগ

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪
Previous article শিশুদের অমনোযোগিতার রোগে করণীয়
Next article১ লাখ ৩শ ৬ জন যুক্তরাষ্ট্রে বেশি মাদক নেওয়ায় মারা গিয়েছেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here