ডা. শাহরিয়ার ফারুক
সহকারী অধ্যাপক
এডাল্ট সাইকিয়াট্রি, ওএসডি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা।
মানসিক অস্থিরতায় কখনো ভুগেননি এরকম মানুষ পাওয়া কঠিন। উদ্বিগ্নতা, বিষণ্ণতা, অতি উত্তেজনা এমনকি হতাশাতেও মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। মানসিক অস্থিরতা অনেক সময়ই খুবই কষ্টকর। তাই কখনো অস্থিরতা অনুভব করলে তা কমানোর জন্য কিছু কাজ করা যেতে পারে যেমন:
১। কী কারণে আপনার অস্থিরতা হচ্ছে তা খুঁজে বের করা খুবই জরুরি। সাধারণত চলমান কোনো মানসিক চাপ, জীবনের লক্ষ্যহীনতা এমনকি লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থতাও মানসিক অস্থিরতার কারণ হতে পারে। বর্তমান সময়ের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ অর্থাৎ স্ক্রিনের অতিমাত্রায় ব্যবহার। গবেষণায় দেখা যায়, অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। এছাড়া কিছু কিছু শারীরিক অসুস্থতাতেও মানসিক অস্থিরতার লক্ষণ দেখা দেয়। তাই অস্থিরতা দূর করতে প্রথমে আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে যে কেন আপনার অস্থিরতা হচ্ছে।
২। মানসিক অস্থিরতা দূর করার জন্য আপনি কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন, যেমন: মেডিটেশন, মাইন্ড ফুলনেস ট্রেনিং কিংবা ব্রিদিং এক্সারসাইজ বা নিশ্বাসের ব্যায়াম। নিয়মিতভাবে এই পদ্ধতিগুলো চর্চা করলে মানসিক অস্থিরতা থেকে অনেকাংশেই মুক্তি পাওয়া যায়।
৩। শরীর এবং মন একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই মানসিক অস্থিরতা দূর করার একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে শারীরিকভাবে সচল থাকা। নিয়মিত ব্যায়াম অথবা হাঁটাহাঁটি বা অন্য কোনো শারীরিক পরিশ্রম আপনাকে মানসিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি দিতে পারে।
৪। অগোছালোভাবে কাজ করা কিংবা কোন কাজের পর কোন কাজ করতে হবে তা ঠিকমতো বুঝে উঠতে না পারা মানসিক অস্থিরতার একটা বড়ো কারণ। তাই সব সময় চেষ্টা করুন গুছিয়ে কাজ করার। এটা অনেকটা অভ্যাসেরও বিষয় বটে। তাই যদি আপনার এই অভ্যাস না থেকে থাকে, তাহলে শুরু করুন। দৈনন্দিন কাজের একটি তালিকা তৈরি করুন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সেই তালিকা দেখুন। এরপর সেই তালিকা ধরে ধরে সারাদিনের কাজকর্ম শেষ করার চেষ্টা করুন। তালিকার সব কাজ হয়ত আপনি শেষ নাও করতে পারেন, যেগুলো শেষ হবে না সেগুলো আবার পরের দিনের তালিকায় যোগ করুন, দেখবেন মানসিক অস্থিরতা অনেকাংশই কমে যাবে।
৫। অস্থিরতা কমাতে বই পড়তে পারেন। পছন্দের বইয়ের তালিকা তৈরি করুন, তারপর একটি একটি করে পড়তে শুরু করুন। চাইলে ডায়েরি লিখতে পারেন, গল্প লিখতে পারেন কিংবা এমনিতেও মনের কথা লিখে রাখতে পারেন। কোনো বিষয় নিয়ে অস্থিরতা হলে তাও কাগজে লিখতে পারেন। লেখার মাধ্যমেও মনের অস্থিরতা কমতে পারে।
৬। মানসিক অস্থিরতা কমানোর জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুম অত্যন্ত জরুরি। ঘুমের সমস্যা হলে প্রথমে “স্লিপ হাইজিন” মেনে চলুন। তারপরেও যদি সমস্যা হয় সেক্ষেত্রে মানসিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে মানসিক অস্থিরতা কমাতে কিংবা ঘুমের পরিমাণ বাড়াতে নিজের ইচ্ছামতো ঘুমের ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৭। সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। শর্করা বা চিনি জাতীয় খাবার পরিমাণে কম খান, শাকসবজি ফলমূল বেশি খান। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। ধূমপান ও অন্যান্য নেশা জাতীয় দ্রব্য থেকে দূরে থাকুন এগুলো আপনাকে সাময়িক কিছু মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে তবে দীর্ঘমেয়াদে এগুলি মানসিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৮। সামাজিক যোগাযোগ বৃদ্ধি করুন। সামাজিক যোগাযোগ বলতে ফেসবুক বা অন্য সোশ্যাল মিডিয়া নয় বরং বাস্তবে মানুষের সাথে কথা বলুন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করুন, তাদের সাথে কথা বলুন, দেখা করুন। প্রতিবেশীর সাথে দেখা করুন, তাদের বাসায় যান কিংবা তাদেরকে নিজের বাসায় আমন্ত্রণ করুন। মনে রাখবেন, অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহার আপনাকে অসামাজিক করে তুলতে পারে যা আপনার মানসিক অস্থিরতা বাড়াবে বৈ কমাবে না।
৯। ধর্মীয় কাজে সময় ব্যয় করুন। পাশাপাশি নিজের শখের কাজের জন্যও একান্ত কিছু সময় আলাদা করুন। মানসিক অস্থিরতা কমাতে এই কাজগুলোও বেশ উপকারী।
অতিরিক্ত মানসিক চাপ কী? কাদের অতিরিক্ত মানসিক চাপ হয়। আসুন জেনে নেই:
আরও দেখুন-