মনোতরী ও ঘাটের খবর

“কোনো কোনো মা বোনেরা কয়, শাক সবজি খাইলে নাকি পেটের ব্যারাম হয়”। একদম বাজে কথা, শাক ভালো করে ধুয়ে রাধলে পেটের অসুখ হয়না। রোগ বালাই তো আছে দুনিয়ায়, ভালো থাকার আছে যে উপায়।“

পুরানো এ টিভি বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল অনেকের মনে আছে নিশ্চয়। জনপ্রিয় এ বিজ্ঞাপন সাধারণ মানুষের মাঝে অবশ্যই সচেতনতা বাড়িয়েছে। বর্তমানে দেশের বেশীরভাগ মানুষ স্বাস্থ্য সচেতন। হাত ধোয়া, নখ কাঁটা, নিয়মিত ব্যায়াম, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা, শাক সবজি ফল মূল খাওয়া, ধূমপান না করা ইত্যাদি স্বাস্থ্যবিধি সবারই জানা। উপসর্গ অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার ক্ষেত্রেও সচেতনতা বেড়েছে। মোটের উপর শারীরিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার্থে সাধারণ জনগণ আগের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন। কিন্তু মনকে সুস্থ রাখার প্রাথমিক কায়দা কানুন ক’জনেরই বা জানা? কেউ কি বলতে পারেন অসুস্থ মনের উপসর্গ গুলো কি কি? কোন উপায়ে মানসিক স্বাস্থ্যকে সতেজ রাখা যায় বা মনোরোগকে প্রতিরোধ করা যায়?

বাংলাদেশের বর্তমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কাঠামো সম্পূর্নরুপে শারীরিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা সদর ও বিভাগীয় পর্যায়ে সমন্বিত মানসিক স্বাস্থ্য সেবার কোনো অস্তিত্ব নেই। স্কুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠ্যক্রমে শারীরিক স্বাস্থ্য শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকলেও মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা বলে কোনো কিছুই নেই। এম বি বি এস কোর্সে ০১ সপ্তাহের ওয়ার্ড প্লেসমেন্ট ছাড়া সদ্য পাশ করা ডাক্তারগণের স্মৃতিতে মন বা মনোরোগ নিয়ে আর কোনো তথ্য নেই। তাই তারা ডায়রিয়ার চিকিৎসা দিতে জানেন কিন্তু দুশ্চিন্তারোগ বা বিষণ্নতা রোগের চিকিৎসা জানেন না। নার্সদের ক্ষেত্রেও নেই কোনো বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ। তাই হাঁপানি, হৃদরোগ কিংবা ক্যান্সার রোগীর প্রত্যাশিত সেবা সম্পর্কে  দক্ষ হলেও  উত্তেজিত, দুশ্চিন্তাগ্রস্থ কিংবা তীব্র বিষণ্ন রোগীর সেবা সম্পর্কে সম্যক কোনো ধারণা নেই তাদের।

আশার কথা, সময়ের সাথে সাথে “মন” সম্পর্কিত আলোচনা সমালোচনা এখন শহরতলী হতে গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত । টিভি চ্যানেল, টক শো, পত্রিকা, ফেসবুক, অনলাইনে “মন” ও “তার সুস্থতা অসুস্থতা” নিয়ে নানান ধরনের গঠনমূলক বক্তব্য পাওয়া যায়। বেশ কিছু মনোরোগ সম্পর্কিত ম্যাগাজিন যেমনঃ মনোজগত, মনোবার্তা ইত্যাদি বুকস্টলে পাওয়া যাচ্ছে। দেশের একমাত্র অনলাইন পত্রিকা “ মনের খবর.কম (www.monerkhabor.com)” এ পাঠকগণ জানতে পারছেন মানসিক স্বাস্থ্য তথা মনোরোগ সম্পর্কিত নানা মৌলিক বিষয়। বর্তমানে জাতীয় মানসিকস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, পাবনা মানসিক হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোর মনোরোগ বিদ্যা বিভাগ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে।

monon-600

বর্তমান এ প্রেক্ষাপটে তাই সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে জনসচেতনতা সৃষ্টি , স্কুল পাঠ্যক্রমে মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষার আবশ্যিক অন্তর্ভুক্তি, এমবিবিএস ও  নার্সিং কোর্সে দীর্ঘ মেয়াদি পাঠদান এবং প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকরণ। সর্বোপরি ইউনিয়ন বা প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা পর্যায় হতে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত  মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য সেবার সুসমন্বিত অবকাঠামো নির্মাণ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্য ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগ এখন তাই সময়ের দাবী। আর সময়ের দাবীর গর্জনটুকু দিতে পারেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (BMA) ও বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ সাইকিয়েট্রিস্ট (BAP)।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleAttachment Parenting কি? এর উপকারিতা কি?
Next articleমানসিক স্বাস্থ্য সংকটে মধ্যপ্রাচ্য ও উ: আফ্রিকার অধিবাসীরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here