বিষন্নতা সবার জীবনেই থাকে। তবে অতিরিক্ত বিষন্নতা একটি মানসিক রোগ। যা ধীরে ধীরে আমাদের উপর চরম প্রভাব ফেলে। এই বিষন্নতাকে ঝেড়ে ফেলতে রয়েছে কয়েকটি উপায়। তা হলো,
১। পুষ্টিকর খাবার- টাটকা ফলমুল, আঁশযুক্ত ও এন্টিঅক্সিডেন্টযুক্ত খাবার খান। এতে শরীর ও মন সতেজ থাকে। শরীরের কোষগুলোর আয়ু বেড়ে যায়।
২। প্রচুর পানি পান করুন- দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস। শরীর থেকে টক্সিক জাতীয় পদার্থ বের করে। মস্তিস্কের কোষগুলোকে সতেজ রাখে। দৈহিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করে নতুন করে কর্মোদ্দীপনা যোগায়।
৩। ধূমপান, মদ্যপান ও মাদক সেবন থেকে দূরে থাকুন- যেহেতু এরা বিষণ্নতার জন্ম দেয়।
৪। সপ্তাহে ৪/৫ বার কমপক্ষে ৩০ মিনিট করে ব্যায়াম করুন। যেমন- হাঁটা, দৌঁড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদি। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল।
৫। মেডিটেশন-রিলাক্সজেসন করুন। দীর্ঘ ও গভীর শ্বাস নিন। ১০ সেকেন্ড পর আস্তে আস্তে ছাড়ুন, করেকবার (১৫-২০ বার) করুন। ফলে রক্ত প্রবাহ বাড়বে, ব্রেইন অক্সিজেন পাবে ও সতেজ হবে এবং ক্লান্তি দূর করবে।
৬। পর্যাপ্ত ঘুমান- কমপক্ষে প্রতিদিন একি সময়ে ৬-৮ ঘণ্টা শান্তিতে ঘুমান।
৭। ভালো সামাজিক ও পারিবারিক কাজে সংযুক্ত রাখুন। ব্যস্ত থাকুন। মন খারাপের সময়ই পাবেন না।
৮। যে কোন সৃজনশীল কাজে যুক্ত হউন- ইতিবাচন কাজে নিজেকে ডুবিয়ে দিন। নেতিবাচক চিন্তাকে কমিয়ে দিন। প্রতিদিন কিছু ইতিবাচক কাজ করার চেষ্টা করুন। নিজের জন্য সময় বের করুন।
৯। আবেগগুলোকে চেপে রাখা যাবে না- যতটা সম্ভব প্রকাশ করুন, শেয়ার করুন ঘনিষ্টজনের সাথে যারা বুঝতে পারে। যেহেতু অনুযোগগুলো চেপে রাখতে রাখতে নিজের মনেই জন্ম দেয় বিষণ্নতা।
১০। বেরিয়ে আসুন দূরে কোথাও – চেনা-জানা পরিবেশ আর পরিচিত মানুষের গণ্ডি ছেড়ে কয়েকদিনের জন্যে চলে যান প্রকৃতির খুব কাছাকাছি। প্রকৃতির স্নিগ্ধতায় কমিয়ে দিবে আপনার কষ্টগুলো।
১১। জীবন অনেক ছোট একটি সময়। অতীতকে ছেড়ে দিন। এরমধ্যে অতীতকে বারবার মনে করে বর্তমানে অসুখী হওয়া বোকামী।
১২। ভবিষ্যতে কি হবে এইসব ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত চিন্তা থেকে বিরত থাকুন।
১৩। লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করুন, প্রতিদিন হাসুন, গান শুনুন। সব সময় হাসিখুশী থাকা বিষণ্নতা থেকে দূরে থাকার অন্যতম উপায়। বর্তমান নিয়ে খুশী থাকুন। ব্যস্ততার মধ্যে অন্তত কিছু সময় প্রাণ খুলে হাসার চেষ্টা করুন।
১৪। ক্ষমা করা শিখুন। আত্ম-বিশ্বাসী হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখুন।
১৫। নামাজ পড়ার কোন বিকল্প নেই। আপনজনদের সংস্পর্শে থাকুন। একাকীত্ব দূর করে পাশে থাকার সময় বেশী বাড়ান। কাজের সাথে সম্পৃক্ত হন।
১৬। শখগুলোকে প্রাধান্য দিন। যেমন- বাগান করা, গান শোনা, বই পড়া ইত্যাদি।
১৭। কিভাবে আনন্দ পাবেন তার উপায় বের করতে হবে।
১৮। কিছু ভাল লাগছে না, মন খারাপ, মন কেমন করে, কাজকর্মে অনীহা, এই কথাটা বলেনি এমন লোক এই জগতে পাওয়া যাবে না। গবেষণায় দেখা গেছে শতকরা ১০-২০ জন জীবনের কোন না কোন সময় বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়; তবে সাধারণত এইটা আপনা থেকেই ভালো হয়ে যায়। প্রকৃতি, পরিবেশ, প্রফুল্লতা, কাজে ব্যস্ততা আর মানুষের সাহচার্যে প্রাণ খুলে কথা বলে। হয় তখন মনরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে থেরাপির মাধ্যমে সঠিক মাত্রায় ঔষধ নির্দিষ্ট ২০। ক্লায়েন্টকে নিয়মিত ফলো-আপ-এ আসতে হবে।
১৯। কিন্তু উপসর্গগুলো যদি দুই সপ্তাহের অধিক অটল থাকে এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাহত সময় ব্যাপী সঠিক নির্বাচন করে সেবন করতে হবে।
লিখেছেন- অধ্যাপক ডা. মহাদেব চন্দ্র মন্ডল।
করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে