কিশোর-কিশোরীরাই আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাই তাদের মানসিক বিকাশ যেন বিষণ্ণতার মতো সমস্যাগুলির ফলে বাঁধাগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে আমাদের সবার মনোযোগী হতে হবে
গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যান্যদের তুলনায় কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বিষণ্নতায় ভোগার হার বেশি এবং এর বেশকিছু বিশেষ কারণ রয়েছে। কিশোর বয়সীদের মধ্যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন থাকায় এই বয়সী ছেলে, মেয়েরা তাদের চারপাশের সবকিছুর দ্বারা অন্যদের তুলনায় অধিক প্রভাবিত হয়। এর ফলেই তাদের মাঝে দেখা দেয় বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, যার মধ্যে বিষণ্নতা অন্যতম। তাছাড়া করোনা মহামারীর অস্বাভাবিক অবস্থাতে এ সমস্যা আরও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিষণ্নতার মতো সমস্যাগুলি নিরসন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। কিশোর-কিশোরী বলতে আমরা সাধারণত ১৮ বছরের কম বয়সী ছেলেমেয়েদের বুঝি। গবেষণায় দেখা গেছে, এই বয়সে তাদের মধ্যে অন্যান্যদের তুলনায় অধিক মাত্রায় বিষণ্ণতাসহ বিভিন্ন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণত স্কুল ও কলেজ পড়ুয়ারাই এর দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং দ্রুততর সময়ে সমাধান না করা হলে অনেক ক্ষেত্রে বিষণ্ণতার মতো মানসিক সমস্যা আত্মহত্যার মতো চরম পরিণতিও ডেকে আনতে পারে। পরিসংখ্যান বলছে, এ হার কম নয়।
শতকরা ২ ভাগের বেশি কিশোর-কিশোরী বিষণ্ণতায় ভুগে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের বিষণ্ণতায় ভোগার কারণগুলি চিহ্নিত করে সেগুলি যদি প্রশমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই সুস্থ ও সুন্দর প্রজন্ম উপহার পেতে পারি। অনেক পিতামাতাই আছেন, যারা তাদের সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত থাকলেও এ বয়সী ছেলেমেয়েদের উপর খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা সঠিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপটি গ্রহণ করতে পারেন না। এসব ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, তাদের কারণে কিংবা পরিবারের অন্য কোন পরিস্থিতির কারণে যেন সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারে কলহ, বিবাদ অথবা সন্তানের প্রতি পিতামাতার উদাসীনতাসহ বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ বিষণ্ণতার কারণ হয়ে ওঠে। অনেক সময় পিতামাতার অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ মানসিকতাও সন্তানের মানসিক চাপ, মানসিক অবসাদ এবং বিষণ্ণতার কারণ হয়। এই বয়সী ছেলেমেয়েরা অন্যান্যদের তুলনায় বেশী সংবেদনশীল হওয়ায় পিতা, মাতার করা সমালোচনা তারা মেনে নিতে পারে না। ফলে অনেক বেশী প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব প্রদর্শন করে। তাই এই সবকিছুর প্রতি পিতামাতাকে আরও সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে যেন তাদের দ্বারা সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয়। কিশোর-কিশোরীদের বেপরোয়া জীবনযাপনও অনেক ক্ষেত্রে বিষণ্ণতার কারণ হয়। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, মাদকাসক্তি, অসৎসঙ্গ ইত্যাদি মানসিক সমস্যা সৃষ্টিতে মূল ভূমিকা পালন করে। অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি সময় ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ইমো ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে এবং অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকছে। নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামন্দা, অতিরিক্ত জাংক ফুড খাওয়া ইত্যাদিও এ ধরণের জীবনযাপনের বৈশিষ্ট্য যা সরাসরি তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি সাধন করছে। অসৎসঙ্গে পড়ে অনেকেই মাদকাসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে, যা তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে। অল্প বয়সীদের বিষণ্ণতার মতো মানসিক সমস্যা থেকে দূরে রাখতে যেমন পারিবারিক পদক্ষেপ প্রয়োজন, তেমনি সামাজিক পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, পিতা, মাতাসহ সবাইকে এই সমস্যা দূর করতে এগিয়ে আসতে হবে। ছেলে, মেয়েদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে কোনটি সঠিক এবং কোনটি তার জন্য ক্ষতির। তাছাড়া বিষণ্ণতার কারণে আত্মহত্যার মতো চূড়ান্ত সমস্যা প্রতিরোধে প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা যেতে পারে।
সাইক্সেন্ট্রিক থেকে অনুবাদ করেছেনঃ প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে