বিষণ্ণতার সাথে পাওয়া গেছে জিনের সম্পর্ক: চিকিৎসায় খুলবে নতুন দিগন্ত

0
19

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মানুষদের নিয়ে আন্তর্জাতিক একটি গবেষণায় জানা গেছে, বিষণ্ণতার সাথে জিনের একটি সম্পর্ক রয়েছে।

এরকম প্রায় ১০০টি জিনকে সনাক্ত করেছেন গবেষকেরা। পৃথিবীর ২০টি দেশের ২০ লাখ মানুষের কাছ থেকে নেওয়া ব্যাপক তথ্যের উপর করা হয় এই গবেষণা।
যাদের মধ্যে জিনগত ফারাক যত বেশি ছিল তাদের ক্ষেত্রেই ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হবার ঘটনা ও ঝুঁকি বেশি ছিল।
বিষণ্ণতার সাথে জিনের এই সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ায় চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতি ছয়জনে একজন ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয় এবং এটিই এখন বর্তমান দুনিয়ায় ডিসএবিলিটি বা প্রতিবন্ধীতার সবচেয়ে বড় কারণ।
মন খারাপ থাকা, উদ্যমহীনতা, নিরানন্দময়তা, ক্ষুধামন্দা, যৌনতায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলা সহ আর নানান ধরণের লক্ষণ দেখা যেতে পারে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে।
বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে কেউ হয়তো কয়েক মাস ভোগেন। কারো কারো ক্ষেত্রে আবার এটি হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক। দীর্ঘকাল ধরে ভুগতে পারে কেউ-কেউ; আবার কারো অবস্থা এতোটাই তীব্র পর্যায়ে চলে যায় যে তাকে মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়।
এমনকি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত মানুষেরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মহত্যার পথ-ও বেছে নেয়।
ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ড. রেবেকা লরেন্স বলছিলেন, তার বিষণ্ণতার মাত্রা এতো বেশি হয়ে গিয়েছিল যে তাকে একটা সময়ে ইলেক্ট্রো-কনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি) নিতে হয়েছে।
বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবার পর মিজ. লরেন্সের মধ্যে যে উপসর্গগুলো দেখা গেছে তার মধ্যে ছিল কর্মস্পৃহার অভাব। এটা এতই তীব্র ছিল যে কোনো কিছু করার সামর্থ্যটাই তার হারিয়ে গিয়েছিল।
এছাড়া খুব ‘নিরাশ’ লাগতো তার। আর খুব ভয় পেতেন তিনি।
বিভিন্ন কারণেই বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। যেমন যে কোনো স্ট্রেস বা চাপ, ট্রমা, আপনজনের মৃত্যু এবং এরকম আরো বিভিন্ন পরিস্থিতি ব্যক্তিকে বিষণ্ণতার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
এমনকি জিনগত কারণে পারিবারিক ভাবেও অনেকে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারে।
নেচার নিউরোসাইয়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ এই আন্তর্জাতিক গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের এডিনবোরো ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ক্লিনিকে ব্রেইন সায়েন্সেস এর অধ্যাপক এন্ড্রিউ ম্যাক্লনটোশ।

ডিএনএ-তে পরিবর্তন

গবেষণাটিতে মানুষের ডিএনএ-র রেকর্ডগুলোকে খতিয়ে দেখা হয়েছে।
গবেষণার জন্য যুক্তরাজ্যের বায়োব্যাঙ্ক, দি সাইকিয়াট্রি জিনোমিক্স কনসোর্টিয়াম, পার্সোনাল জেনেটিক্স ২৩ এন্ড মি, এবং রিসার্চ ইঞ্জিনিয়ারিং নামক কয়েকটি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দাতাদের কাছ থেকে ডিএনএর নমুনা নেয়া হয়েছে।
এই সকল নমুনা খতিয়ে দেখে প্রায় একশটি জিনের সন্ধান পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে জিনের এই ভিন্নতাটি ছিল তারাই বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে ছিল।

পারসোনালিটি ফ্যাক্টর্স

ডিপ্রেশনে আক্রান্ত মানুষদের মধ্যে একটি কমন ডিএনএ’র সন্ধান পাওয়া গেছে।
ধূমপায়ীদের মধ্যেও এই ডিএনএটি সনাক্ত করা গেছে।
এছাড়া স্নায়বিক পীড়ার সাথেও বিষণ্ণতার একটা সম্পর্ক রয়েছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকেরা।
উদ্বেগ ও বিষণ্ণতার মধ্যে কী ধরণের সম্পর্ক রয়েছে সেটি জানতেও এখন আরো বিশদ অনুসন্ধান চলছে।

Previous articleমানসিক রোগ নির্ণয়ে বাংলায় রিসার্চ স্কেল নির্ধারণে বিএসএমএইউ’তে কর্মশালা
Next articleমানসিক চাপ দূর করার উপায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here