Depression বা বিষণ্নতা একটা মানসিক রোগ এবং অনেক রোগের তুলনায় এ রোগের গুরুত্ব অনেক বেশি। ২০০৫-২০০৭ সালে আমরা গবেষণা করে ৪.৫ শতাংশ বিষণ্নতা পেয়েছি। ৪.৫ শতাংশ যদি হয় তাহলে আমাদের ১৬ কোটি লোকের মধ্যে প্রায় ৭০ লাখের মত বিষণ্নতার মানুষ আছে।
বিষণ্নতা তিন ধরণের হয়-
– হালকা ধরণের
– মধ্যম ধরণের
– গুরুতর ধরণের
গুরুতর বিষণ্নতা একটা বড় সমস্যা এবং আত্বহত্যার একটি অন্যতম কারণ। গুরতর বিষণ্নতা হলে দৈনন্দিন কাজকর্ম চাকরী-বাকরী, ব্যবসা বাণিজ্য, সংসার এগুলো করা কঠিন হয়ে যায়। তবে বিষণ্নতা রোগের চিকিৎসা আছে। ঔষুধের পাশাপাশি কাউন্সিলিং, সাইকোথেরাপী, Cognitive Behavior Therapy এগুলো যদি নেয়া হয় তাহলে এই রোগ ভাল হয়ে যায়। তবে পরবর্তীতে আবারো বিষণ্নতা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্য রোগীর Follow up করতে হয়।
বিষণ্নতা রোগীদের একটা অংশের আবার ‘বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার’ থাকতে পরে। বাইপোলার রোগটির দুটি অংশ থাকে ‘বিষণ্নতা ও ম্যানিয়া’। প্রথমবার বিষণ্নতা, দ্বিতীয়বার বিষণ্নতা, তৃতীয়বার বিষণ্নতা এরপর দেখা গেল সে অস্বাভাবিক হয়ে গেল। কথা বেশী বলে, ঘোরাফেরা বেশি করে ইত্যাদি। এজন্য বিষণ্নতা রোগীর চিকিৎসার সময় খেয়াল রাখতে হবে রোগীর আবার ‘বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার’ আছে কি-না। উল্টাভাবে আগে ম্যানিয়া দিয়ে শুরু হয়েও পরে বিষন্নতা আসতে পারে।
WHO এর Projection Record মতে Disease Burden এর মধ্যে ২০৩০ সালে বিষণ্নতার স্থান হবে দ্বিতীয়। এটা শুধু মানসিক রোগ না, শারীরিক রোগ এবং মানসিক রোগ মিলে যে Disease Burden তৈরী হয় যেটা জাতির জন্য একটা বড় বোঝা সেখানে বিষণ্নতা দ্বিতীয় স্থানে চলে আসবে ২০৩০ সালে। যদি এটার প্রতি মনোযোগ দেয়া না হয়, চিকিৎসা করা না হয় তাহলে দেশের Burden অনেক বেশী হবে এবং যারা কর্মক্ষম মানুষ আছে তাদের যদি একটা বিরাট অংশ (৬০-৭০ লক্ষ) বিষণ্নতা রোগে ভোগে তাহলে তারা ঘরে বাইরে কাজ করতে পারবে না। এরকম হলে জাতির উন্নতি যেটা আমরা চাচ্ছি এবং দারিদ্রতা বিমোচন যেটা সরকারের প্রতিপাদ্য সেটা সম্ভব হবে না। সেজন্য বিষণ্নতার চিকিৎসা খুব জরুরী।
বিষণ্নতা রোগের একটা সমস্যা হলো- মন খারাপ এটা রোগী সব সময় বলে না। বেশীর ভাগ সময় তারা বলে যে আমার মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, অস্থিরতা ইত্যাদি কিন্তু মন খারাপ এটা বলতে চায় না। সেজন্য রোগী যখন চিকিৎসকের কাছে আসে তখন মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, বুক ব্যথা, পেট ব্যথা, পেটের সমস্যা এ ধরণের শারীরিক লক্ষণের কথা বলে তাই ডাক্তারেরই দায়িত্ব
Conform করা এটা মন খারাপ বা বিষণ্নতা রোগ কি-না নাহলে বিষণ্নতা রোগটা ধরাও পড়বে না এবং চিকিৎসাও দেয়া হবেনা।
এছাড়াও বিষণ্নতার কারণে মানুষের নেশার একটা প্রবনতা থাকে। নেশা করলে বিষণ্নতা কাটে এটা তাদের ব্যাখ্যা। এভাবে বিষণ্নতা দুর করতে গিয়ে নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে এবং তখন একটি সমস্যা দুর করতে গিয়ে আরো বড় ধরণের সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে।
বিষণ্নতার কারণে হার্টের রোগ, স্ট্রোক, ব্রেইনের রোগ, যৌন সমস্যা এগুলোও হয়। সার্বিক বিবেচনায় যত মানসিক রোগ আছে এর মধ্যে বিষণ্নতার স্থান হলো দ্বিতীয়। প্রথম হলো অতি উদ্বিগ্নতা বা Anxiety Disorders। Anxiety Disorders আমরা পেয়েছি প্রায় ৬.৫ শতাংশ এবং বিষণ্নতা বা Depression হলো ৪.৫ শতাংশ। সিজোফ্রোনিয়াসহ অন্যান্য যেসব মানসিক রোগ আছে সেগুলোর পরিমাণ খুব কম। প্রথম হলো Anxiety Disorder এবং দ্বিতীয় হলো Depression বা বিষণ্নতা। কাজেই বিষণ্নতাকে যদি আমরা Address না করি, চিকিৎসা না করি বা যথাযথ মনোযোগ না দেই তাহলে বিরাট অংশের চিকিৎসা বাকি থেকে যায় এবং Productive Population অর্থাৎ যারা কাজ করার ক্ষমতা রাখে তাদের যদি বিষণ্নতা থাকে এবং চিকিৎসা দেয়া না হয় তবে জাতির উন্নতি দিন দিন কমে যাবে। এজন্য আমি মনে করি বিষণ্নতার উপর যথষ্টে গুরুত্ব দেয়া দরকার।
বিষণ্নতা যে শুধু মানসিক বিষয়ের বিষয় তা নয়। যাদের শারীরিক সমস্যা থাকে থাকে যেমন -ডায়বেটিস, হাইপারটেনশন, চর্মরোগ, এ্যাজমা, Chronic bronchial, ক্যান্সার এ সমস্ত রোগ থাকলে তার বিষণ্নতা হতে পারে। যদি বড় ধরণের সার্জারী হয় যেমন Brain Operation, পায়ুপথের সার্জারী, হার্টের অপারেশন এসব রোগীর মানসিক চিকিৎসা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই লাগবে এবং সেটা বিষণ্নতা হওয়াই সম্ভাবনা বেশী। কাজেই অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদেরও বিষণ্নতা সম্পর্কে জানা দরকার এবং বিষণ্নতাই ভোগা রোগীদের চিকিৎসা দরকার। বিষণ্নতা চিকিৎসা না করে যদি শুধুমাত্র শারীরিক চিকিৎসা দেয়া হয় তাহলে ঐ রোগীর Quality of life অর্থাৎ সুন্দর জীবন হবে না। যার হার্টের অপারেশন হলো সে হয়ত বেঁচে থাকলো বেশী দিন। কিন্তু বিষণ্নতা থাকলে তার তো মন খারাপ থাকবে, সব সময় তার সব কাজ বন্ধ। হার্টের অপারেশন করে সে বেশী দিন বেঁচে থাকছে ঠিকই কিন্তু সমাজ বা পরিবারের জন্য সে কোন কাজে আসছে না। তাই শুধু বিষণ্নতা রোগ আর শারীরিক রোগের সাথে বিষণ্নতা রোগ দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। শারীরিক রোগের সাথে বিষণ্নতা রোগ আমি মনে করি অন্যান্য চিকিৎসকদেরও জানা খুব দরকার। এতে উনারা নিজেরাও চিকিৎসা করতে পারেন অথবা Refer করতে পারেন।
৭ ই এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এই আলোকে এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে Depression: Let’s talk। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আমরা এটাকে বাংলা করেছি “আসুন বিষণ্নতা নিয়ে কথা বলি”। এ স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা সংশ্লিষ্ট যারা রোগ বা রোগের চিকিৎসার সাথে জড়িত সকলে বিভিন্ন Program আয়োজন করতে পারি এবং বিষণ্নতাকে Highlight করে বিষণ্নতারোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যায় এবং কি করা প্রয়োজন ঐ দিবসে আমরা এসব বিষয়ে কথা বলতে পারি। আমাদের সরকার এখন এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এবং বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালমহ বিভিন্ন জায়গায় এ রোগের চিকিৎসা পাওয়া যায়। সাইকোলজিস্টরাও বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দিচ্ছে। আমার মনে হয় আমরা Right Track-ই আছি এবং সরকারে কাছ থেকে আমরা আরো সহযোগিতা আশা করি।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।