শরীরের বিশেষ কোনো এক অঙ্গ বা অংশের সাইজ, শেপ, অবস্থান কিংবা ইমেজ নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তিত। কোনো ভাবেই নিজের অঙ্গকে স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারেন না, কখনো কখনো এমনকি অপারেশন পর্যন্ত করিয়ে সেই অবস্থার পরিবর্তন চায়। বেশির ভাগ সময় উপকারী না হয়ে ফল উল্টো আরো উদ্বিগ্নতা বেড়ে যায়, এমন একটি মানসিক রোগ ‘বডি ডিজমরফিক ডিজঅর্ডার’।
‘বডি ডিজমরফিক ডিজঅর্ডার’
বডি ডিজমরফিক ডিজঅর্ডার এক বিশেষ ধরনের মানসিক রোগ। যেখানে মানুষ তার স্বাভাবিক কিংবা সামান্য পরিবর্তীত কোনো অঙ্গ বা অংশ নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তিত থাকেন। নাওয়া খাওয়া ঘুম কাজ বাদ দিয়ে শুধু ঐ বিষয়টি নিয়েই পরে থাকেন। কোনো ভাবেই সেই অঙ্গকে বা শরীরের অংশকে মেনে নিতে পারেন না। সেই চিন্তাকে ঘিরে যত ধরনের কাজ করা যায় সবই করেন। সারক্ষণ হাত দিয়ে পরিবর্তন করার চেষ্টা করা, প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় ওষুধ ব্যবহার করা, বিভিন্ন ধরনের লোশন লাগানো, চেপে ধরে রাখা, মানুষের কাছ থেকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করা সবই এর মধ্যে থাকে। কখনো কখনো নিজের মতো করে পরিবর্তন করার জন্য প্লস্টিক সার্জনের (বা সাধারণ সার্জনের) স্মরনাপন্নও হয়ে থাকেন।
ভূক্তভোগীরা নিজেরাও বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত এবং প্রচন্ড মানসিক চাপে থাকেন। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত কাজে দারুণ ভাবে বিঘ্ন ঘটে।
কোন কোন অঙ্গ নিয়ে বেশি চিন্তা করতে দেখা যায়?
শরীরের যেকোনো অঙ্গ কিংবা অংশ এর অন্তর্গত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও সাধারণত: মুখমন্ডল এবং মাথার বিভিন্ন অংশ নিয়েই বেশি চিন্তা করতে দেখা যায়। মুখ, নাক, কান, চোখ, চোখের পাতা, ঠোঁট, দাত, চোয়াল, থুতনি নিয়ে বেশির ভাগ ভূক্তভোগীরা চিন্তায় আবদ্ধ হয়ে থাকেন। কপালের ভাঁজ, মুখের যেকোনো ধরনের দাগ, ব্রন, মুখের বা শরীরের যেকোনো স্থানের ফুলে উঠা শিরা বা ধমনী, কেউ কেউ শরীরের দুই ভাগের মধ্যে সমতা আছে কিনা (এক পাশে বেশি এক পাশে কম) এ নিয়েও চিন্তা করেন।
বিশেষ বিশেষ অঙ্গের মাঝে, হা-পা, পেট, যৌনাঙ্গ, স্তন, কোমড়, বাহু, হিপ, এমন পুরুষ হিসেবে পুরুষের মতো দেখাচ্ছে কিনা, বা নারীর মতো শরীর হয়েছে কিনা এসব নিয়েও চিন্তা করেন।
কখন, কাদের হয়?
সাধারণত: দেখা যায় বয়োসন্ধিকালেও এ রোগটি শুরু হয়। ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সেই বেশি হয়। ধীরে ধীরে হঠাৎ যেকোনো রকমেই শুরু হতে পারে। ছেলেদের চেয়ে মেয়েদেরই বেশি হয়। সমস্যার প্রকোপ কখনো কম কখনো বেশি হলেও দির্ঘদিন এরোগ থাকতে পারে। এমন কি সারা জীবন থেকে যাওয়ার প্রবণতাই বেশি। মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ ভাগ এই রোগে ভূগতে পারে।
সঠিক কারণ আবিষ্কার করতে না পারলেও আক্রান্ত মানুষের মস্তিষ্কে এক ধরনের ক্যামিকেল, নাম সেরোটোনিনের উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা যায়।
বিখ্যাত পপ শিল্পি মাইকেল জ্যাকসনের কথা কেউ কেউ বলে থাকেন, যিনি তাঁর নাকের সাইজ শেপ বা ইমেজ নিয়ে খুশী ছিলেন না।
প্রকার
সাধারণত দুই ধরনের হয়। ডিলুশনাল কোয়ালিটি এবং অবসেশনাল কোয়ালিটি। চিকিৎসার বেশির ভাগই নির্ভর করে প্রকার ভেদের তারতম্যের উপর।
চিকিৎসা
ডিলুশনাশ কোয়ালিটির চিকিৎসা সাধারণত এন্টিসাইকোটিক মেডিসিন; যেমন- এরিপিপ্রাজল, রেসপেরিডন বা পিমুজাইড ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।
তবে অবসেশনাল কোয়ালিটিতে শুধু ওষুধে কাজ হবার সম্ভাবনা কম থাকে। ওষুষের পাশাপাশি সাইকোথেরাপী অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ওষুধের ভিতর সেরোটোনিন রিআপটেক ইনহিবিটর, যেমন ফ্লুক্সেটিন বা সারটালিন বেশ উপকারী। যেসব ওষুধ মানসিক চাপ কমানোর পাশাপাশি চিন্তা কমাতেও সাহায্য করে। অপর পক্ষে সাইকোথেরাপী (কগনেটিভ ভিহেভিয়ার থেরাপী) অস্বাভাবিক ও নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক ও স্বাভাবিক চিন্তায় রুপান্তরে সাহায্য করে। বিষয়গুলির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও চিকিৎসার ক্ষেত্রে জরুরি।
অনেক ক্ষেত্রে শান্তনার জন্য অপারেশনের পরামর্শও দিয়ে থাকেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফলপ্রসু হয় না।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।