নোমোফোবিয়া এক নির্বাক ঘাতক

0
83

নোমোফোবিয়া: মোবাইল আসক্তির মানসিক সমস্যা। বর্তমান পৃথিবীতে মোবাইল ফোন মানব জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জিনিস। তাই এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সাধারণ মোবাইল ফোনের পাশাপাশি বেড়ে চলেছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও।  মোবাইল ছাড়া বর্তমানে মানুষ নিজের জীবনকে সম্পূর্ণ ভাবতে পারে না। মোবাইল কাছে নেই বা মোবাইলের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছে বা চুরি হয়ে যাওয়া ঘটনাকে  অনেকের মধ্যে মানসিকভাবে আতঙ্কের সৃষ্টি করে।  কিন্তু তাই বলে সেটা মাত্রা ছাড়াবে এমন তো নয়। তবে কারো ক্ষেত্রে যদি ব্যাপারটি গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে, সেটাকে তখন আর স্বাভাবিক বলা যায় না। তখন এই মানসিক সমস্যাকে নোমোফোবিয়া বলে ধারনা করেন মানসিক চিকিৎসকেরা।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক গবেষণানুসারে, বর্তমানে শুধু আমেরিকার মোট জনসংখ্যারই ৯০ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে, যাদের ৫০ শতাংশ হল স্মার্টফোন ব্যবহারকারী। এছাড়া পৃথিবীতে প্রায় ৬.৮ বিলিয়ন মোবাইল ফোন গ্রাহক রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তো খুব সাধারণ একটি অ্যাপ। আর দশটা অ্যাপের মত। কিন্তু বর্তমানে ফেসবুক ছাড়া আমাদের একটা মিনিটও চলে না। কোনো অ্যাপ নয়, এটি যেন আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছে।

নোমোফোবিয়া আক্রান্ত লক্ষণগুলো হলো,রাতে প্রতি দুই ঘণ্টা পরপর আপনার ফোন চেক করার জন্য জেগে ওঠেন। দুপুরের খাবার বা রাতেও খাবার খাওয়ার সময়ও যদি আপনি ফোন চেক করেন। ফোনের ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং পুনরায় চার্জ না দেওয়া পর্যন্ত শান্ত হতে পারেন না। ফোনে কোনো সিগনাল না থাকলে আপনার এমন অনুভূতি হয় যে আপনার জীবনটাই বুঝি বৃথা। আপনি যত ব্যস্তই থাকেন না কেন ফোনে কল আসলে আপনি তা রিসিভ করার জন্য মুখিয়ে থাকেন। আপনি এমনকি ওয়াশরুমেও ফোন নিয়ে যান। এই লেখাটি পড়ার সময়ও আপনি অন্তত দুইবার আপনার ফোন চেক করেছেন।

এছাড়াও নোমোফোবিয়া ফলে আমাদের যেসব ধ্বংসাত্মক কারণগুলো হচ্ছে সেগুলো হলো এটি উদ্বেগ তৈরি করে। ফোন থেকে দূরে থাকলে এই রোগে আক্রান্তরা উদ্বেগে ভোগেন। যার ফলে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া এর ফলে মনোযোগও নষ্ট হয়। যার ফলে কর্মস্থলে উৎপাদনশীলতাও কমে আসে। সময়ের অপচয় করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে মাল্টিটাস্কিং বা একই সময়ে একাধিক কাজ করা ক্ষতিকর। কারণ এভাবে তথ্য ধারণ ও প্রসেস করা যায় না। অনবরত ফোন চেক করলে সময়ের অপচয় হয় প্রচুর। ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।  ফোন থেকে যে নীল আলো নিঃসরণ হয় তা মস্তিষ্কে এই সঙ্কেত দেয় যে এখন ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময়। যা ঘুমের জন্য সহায়ক মেলাটোনিন হরমোনকে দমণ করে। নোমোফোবিয়ায় আক্রান্ত লোকেরা ত্বকের সমস্যায়ও আক্রান্ত হন। অনবরত ফোনের সংস্পর্শে থাকার ফলে ব্রণ, অ্যালার্জি এবং ডার্ক স্পট পড়তে পারে। পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ককেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সময় ফোন চেক করাটা নিষ্ঠুর আচরণ বলে গণ্য করা হয়। কর্মক্ষেত্রেও এই ধরনের কাজ করলে আপনাকে উদাসীন ভাবা হতে পারে।

তাই এ রোগ থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে ঘুমানোর আগে ফোন বন্ধ করে রাখুন এবং বিরামহীনভাবে ঘুমান।নোটিফিকেশন রিসিভ কমিয়ে রাখুন। নানা অ্যাপ থেকে প্রতিনিয়ত নোটিফিকেশন আসলে তা আপনার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটাবে।অপ্রয়োজনীয় অ্যাপগুলো বন্ধ করে রাখুন। কারণ সেগুলোও মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটায়।ফোনে সময় চেক করার বদলে হাতঘড়ি পরুন।নিজের একটি ফোন ফ্রি জোন তৈরি করুন। কাজে। আর যখন ফোন সঙ্গে থাকবে তার ব্যবহার সীমিত করুন।

ফোনের চেয়ে বরং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটান।

লিখেছেনঃ মোজাম্মেল হোসেন নয়ন

করোনায় স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪

Previous articleমানসিক চাপ কাটিয়ে মাঠে ফিরছেন টিম পেইন
Next articleকরোনাকালে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উদ্বেগ ও বিষণ্নতায় শীর্ষে বাংলাদেশ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here