খাদ্য গ্রহণ যখন শরীর বা মনের চাহিদার সাথে কোন সম্পর্ক না রেখে শুধু মাত্র একটি নিয়মতান্ত্রিক কার্যক্রমের অংশ হয়ে ওঠে, তখন অনেক ক্ষেত্রেই এটি মানসিক অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
ডায়েট শব্দের অর্থটি হল খাদ্য গ্রহণে সংযম পালন। সংযম কথাটি থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, মনের ইচ্ছা বা শারীরিক চাহিদা দুটোকেই নিয়ন্ত্রণ করা। অর্থাৎ যা ইচ্ছে করবে সব সময় সেটি করা চলবে না।
ধরুন, আপনার জন্ম দিন উজ্জাপন করছেন। একটি বড় চকোলেট কেক আনা হয়েছে। যথারীতি কেক কাটা হল। এবং আপনার একজন বন্ধু বলল যে সে কেক খেতে পারবে না। কারণ সে ডায়েট করছে। এমন পরিস্থিতিতে বা বন্ধুর এমন কথায় অবাক হবার মতো কিছু নেই। কারণ খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ অনেকের কাছেই বেশ স্বাভাবিক ঘটনা। অনেকেই এটি মেনে চলেন, যে কোন খাবার মনের ইচ্ছে মতো খেয়ে নিলেই হয় না, বরং সেটি খাওয়া উচিত নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এভাবে সব আনন্দ, সব চাহিদাকে দূরে ঠেলে শুধুমাত্র নিয়ম করে খাওয়া কি হতাশা বা মানসিক অসন্তোষ সৃষ্টি করে না? আর যদি উত্তরটি ইতিবাচক হয়, তাহলে কিভাবে দুটির মাঝে মেল বন্ধন করে সামাঞ্জস্য বিধান করা যেতে পারে যাতে পুরো বিষয়টি আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে? আসুন জানা যাক।
বর্তমান সময়ে ডায়েট করা অনেক সাধারণ একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। ডায়েটিং সত্তিই মানুষকে অনেক ক্ষেত্রেই শরীর সুস্থ সবল রাখতে সহায়তা করে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ যেভাবে ডায়েট করে সেটি অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে মানসিক অসন্তোষ সৃষ্টি করে।
বিভিন্ন গবেষণায় উঠে আসা তথ্য উপাত্য থেকে এই মূল বিষয়টির কারণ নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখা প্রদান করেছেন মনবিদগণ। তাদের মতে, যখন কেউ নিজের ইচ্ছেকে নিয়ন্ত্রণ করে অর্থাৎ জোর করে কোন কাজ করে স্বভাবতই মনের উপর চাপ পড়ে এবং খারাপ লাগা বা মানসিক অসন্তুষ্টি সৃষ্টি হয়।
ধরুন আপনার চকোলেট কেক খুবই পছন্দ, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে আপনি সেটি না খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কারণ এটি শরীরের জন্য পুষ্টিকর নয়। এভাবে আপনি যখন আপনার ইচ্ছাকে জোর করে দমন করেন তখন স্বাস্থ্যকর হলেও পুরো প্রক্রিয়াটি বেশ আনন্দহীন হয়ে পড়ে এবং প্রতিবার আপনি খাবারটি এড়িয়ে যান। এতে আপনার মানসিক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়।
আবার অনেকে খাদ্য গ্রহণের মাত্রার সাথে সাথে একটি নির্দিষ্ট সময়ও ঠিক করে নেন। এতে ক্ষুধা লাগলেও নির্ধারিত সময়ের আগে পরে কোন ধরণের খাবার গ্রহণ থেকে ব্যক্তি বিরত থাকে। এতে মানসিক কষ্টের সাথে সাথে শারীরিক কষ্টেরও সৃষ্টি হয়। আর এসব কিছু মোটেও কাম্য নয়। এ ধরণের ডায়েটিং সম্পূর্ণ বিষয়টিকে যেমন কষ্টদায়ক করে তোলে তেমনি এর উপযোগিতাও কমিয়ে দেয়।
এ ধরণের মানসিক ও শারীরিক পীড়া এবং অসন্তোষ থেকে মুক্তি পাবার উপায় কি?
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, একটি সফল ডায়েট শরীর ও মনের চাহিদাকে মিটিয়েই কার্যকারিতা লাভ করে। এক্ষেত্রে একটি কঠোর নিয়ম বা অনুশাসনের অধীন না হয়ে বরং একটি ভিন্নভাবে সব কিছু করা যেতে পারে। যখন কোন পছন্দের খাবার আপনার খেতে ইচ্ছে করবে, অবশ্যই সেটি খান। তবে পরিমাণ মতো খান।
আবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূর্ণ খাবার খাওয়ার বদলে ক্ষুধা লাগলে শরীরের চাহিদা পূরণ করে অল্প অল্প করে পরিমাণ ঠিক রেখে খান। এভাবে যদি আপনি আপনার ডায়েট চার্টটি নিজের ইচ্ছে এবং শারীরিক চাহিদাকে মাথায় রেখে করেন, তাহলে আশা করা যায় আপনার শরীর যেমন সুস্থ থাকবে তেমনি মানসিক অসন্তোষও সৃষ্টি হবে না। অর্থাৎ যাকে আমরা বলতে পারি, একটি সফল আনন্দদায়ক ডায়েট।
তাই, শুধু নিয়মের বেড়া জালে নিজেকে জোর করে বেঁধে না রেখে যখন যা খেতে ইচ্ছে করবে, অবশ্যই খান। তবে অবশ্যই পরিমাণ মতো খান। একসাথে অনেক বেশী না খেয়ে, বা কোন পছন্দের খাবারকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে না চলে সব কিছুর মাঝে একটি সামাঞ্জস্য বিধান করুন এবং আনন্দের সাথে ডায়েট করার মাধ্যমে শরীর সুস্থ রাখুন।
লিংক: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/the-clock/202106/i-can-t-i-am-diet
অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা