ট্রাইপ্যানোফোবিয়া: ইনজেকশনের সূচে ভয়

ট্রাইপ্যানোফোবিয়া: ইনজেকশনের সূচে ভয়। ছবি: ইন্টারনেট

প্রাপ্ত বয়স্ক জনসাধারণের একটি বড় অংশের মাঝেই রয়েছে ইনজেকশন ও সূচ ফোটানোর ভয়। এ কারণে কোভিড-১৯ টিকাকরণে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্করাই ট্রাইপ্যানোফোবিয়া বা সূচে ভয় পাওয়ার মানসিক সমস্যায় ভোগে। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে কারণ অনেকের মাঝেই হয়তো ভয় থাকা সত্ত্বেও তারা এটিকে স্বীকার করে না। সূচে ভয় পাওয়ার এই সমস্যা বিশেষ ভাবে সামনে এসেছে এই করোনা মহামারিকালীন টিকা প্রদানের সময়ে। এছাড়াও এই মানসিক সমস্যা দীর্ঘ দিন ধরে সাধারণ মানুষকে তাদের প্রয়োজন ও ইচ্ছা  অনুসারে সাধারণ স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণেও নিরুৎসাহিত করে আসছে যার সমাধান করা অবশ্যই প্রয়োজন।

মনস্তত্ত্ববিদগণের মতে, সূচে ভয় পাওয়ার এই সমস্যা দূর করতে ভয়ের মুখোমুখি হওয়া, যা সিবিটি বা কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি নামে পরিচিত, সেটি বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই থেরাপিতে ব্যক্তিকে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে ভয়ের যে কারণ সেটির মুখোমুখি করা হয়। ধরুন, কেউ সাপে খুবই ভয় পায়। তার এই ভয় দূর করতে তাকে সাপের ছবি দেখানো, সাপের কোন ভিডিও চিত্র দেখানো বা সতর্কতার সাথে তাকে কোন চিড়িয়াখানায় নিয়ে সরাসরি সাপ দেখানো যেতে পারে। থেরাপি প্রদানকারী এক্ষেত্রে অবশ্যই সেবা গ্রহীতা যেন কোন রূপ অস্বস্তি বা অনিরাপদ বোধ না করে সেটি  নিশ্চিত করেন এবং তাকে পরবর্তী পর্যায়ের থেরাপির জন্য প্রস্তুত করেন।

পরিকল্পিতভাবে সুবেদিতা হ্রাস হল সম্মুখ থেরাপির একটি অংশ যেখানে ধীরে ধীরে ভয়ের পরিবেশ বা ভয়ের বস্তুর প্রতি উদ্বেগ কমিয়ে মানসিক শিথিলতা সৃষ্টি করা হয়। যারা সূচে ভয় পান, তাদের ক্ষেত্রে থেরাপি প্রদানকারী হয়তো সূচের একটি ছবির প্রতি মনোযোগ দিয়ে দেখতে বলতে পারেন এবং সেই সাথে ধীরে ধীরে বড় করে নিঃশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে সেটিকে মনস্তাত্ত্বিক গ্রাহ্যতা প্রদান করতে আপনাকে উৎসাহিত করতে পারেন। এই থেরাপির প্রক্রিয়াটি পরিচালনার সময় আপনার নাড়ির স্পন্দন পর্যবেক্ষণ করে আপনার উপর এই থেরাপির প্রভাব পর্যবেক্ষণ করা হবে যে আপনি প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত মানসিক শিথিলতা অর্জন করতে পারছেন কি না। এই প্রক্রিয়াটির জন্য অনেক বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়না। গবেষণায় দেখা গেছে, এজন্য একটি সেশনই অনেকটা কার্যকরী।

এ ধরণের থেরাপিতে সাধারণত তিনটি ধাপ থাকে। প্রথম ধাপে সূচে ভয়ের কারণ ও সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত শোনা হয় প্রায় এক ঘণ্টা সময় নিয়ে। তারপর দেড় বা দুই অথবা তিন ঘণ্টার একটি সম্মুখ থেরাপির ব্যবস্থা করা হয় যেখানে সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে সরাসরি তার ভয়ের সম্মুখীন করা হয়। এ সময় তাকে সূচের  বা ইনজেকশন প্রদানের ছবি, ভিডিও এবং সরাসরি সূচের ব্যবহার দেখানো হয়। তারপর সব শেষে ত্রিশ মিনিটের একটি ফলো আপের ব্যবস্থা রাখা হয়।

অনেকের মাঝেই পূর্ব অভিজ্ঞতার ফলে ভয় সৃষ্টি হয় আবার অনেকের মাঝে এই ভয় দুর্ঘটনা বা নিরাপত্তার আশংকা থেকেও সৃষ্টি হয়। যে কারণেই হোক না কেন, ইনজেকশন নিতে ভয় বা সূচে ভয় অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা গ্রহণের পথে অনেক বড় অন্তরায় সৃষ্টি করে। আর কোভিড মহামারির এই ক্রান্তি কালে যেহেতু টিকা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি তাই সূচে ভয়ের এই মানসিক সমস্যার যথাযথ নিবারণ প্রয়োজন। সমাজের একটি বড় অংশ শুধুমাত্র এই সমস্যার কারণেই টিকা নিতে আগ্রহী নয়। তাদের টিকা প্রদান নিশ্চিত করতে তাই এই সমস্যা সম্পর্কে সবার মাঝে সচেতনতা ও নিবারণে উপরের প্রক্রিয়াগুলি অনুসরণ করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

সাইকোলজি টুডে থেকে অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে 

 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪
Previous articleমানসিক স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক কার্যক্রম ‘কথা বলো কথা বলি’
Next articleমায়ের সঙ্গে বন্ধন সন্তানের বিকাশে ভূমিকা রাখে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here