জেন্ডার বৈষম্যের শিকার নির্যাতিত নারী ও শিশুদের মনো-সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা

জাতিসংঘ পরিচালিত ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের এক সমীক্ষায় প্রকাশিত তথ্য মোতাবেক জেন্ডার বৈষম্যের শিকার নির্যাতিত নারীর পরিসংখ্যান হলো: বিশ্বে প্রতি তিনজন নারীর মধ্যে একজন নারী লিঙ্গ ভিত্তিক নির্যাতনের মুখোমুখি হন। অপরদিকে ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রাম’-এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সমীক্ষা প্রতিবেদন মোতাবেক; বাংলাদেশে শতকরা ৫৮ভাগ নির্যাতিত নারী ও শিশুর বয়স হচ্ছে: ১০ থেকে ৪৯ বছর।
আমাদের দেশে যৌন নিপীড়ন ও শারীরিক নির্যাতন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এক্ষেত্রে মানসিক নির্যাতনের পরিসংখ্যান-এর হার অতি উচ্চ; যদিও তা দৃশ্যমান নয়। এমনকি নির্যাতিত নারী ও শিশুর মানসিক নির্যাতন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সচেতনতাই নেই। আমাদের সামাজিক নানান রীতিনীতির প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে- তার বা তাদের উপর যে মানসিক নির্যাতন হচ্ছে; তা সে বা তারা বিবেচনায়ই নিতে অভ্যস্ত হয়ে গড়ে উঠেনি ।
ফলে উল্লেখিত নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু বরাবরই রয়ে যাচ্ছে নিরাপত্তাহীন আর আইনি সুযোগ-সুবিধা ও মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবার বাইরে। ফলে প্রকারান্তরে ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশু বঞ্চিত হয়ে থাকে নানান সীমাবদ্ধতায়ও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চালু থাকা আইনি এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির সম্ভাবনা থেকে।
নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু ঘটনার আকস্মিকতায় হয়ে পড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ও আতঙ্কগ্রস্ত। যা মোকাবেলায় তাদের কোনরূপ দক্ষতা না থাকায়; তারা ভোগে হীনমন্যতায়। ভয়, অস্থিরতা, বিষণ্নতা, একাকিত্ববোধ প্রতিনিয়ত তাড়িত করে তাদের; যা তাদের মধ্যে জন্ম দেয় পিটিএসডি(পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার ঘটনার জন্য নিজেকে দায়ী ভেবে ভোগে অপরাধবোধে। অনুশোচনায় একসময় বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
অপরদিকে স্টিগমাজনিত কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত নারী ও শিশুকে “মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো” ঘটনার পর সম্মুখীন হতে হয় ব্যাক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক সমালোচনার। এমনকি নির্যাতনের ঘটনার জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকেই দায়ী করা হয়ে থাকে। যার প্রেক্ষিতে সে বা তারা নিজেকে মনে করে অপরাধী। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি লজ্জাবোধ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয় ঘটনার প্রতিবাদ করা থেকে; ভোগে হীনমন্যতায়। সেই অনুভূতি বা আবেগগত চাপ; তাকে করে তোলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
প্রকারান্তরে তা রাগ, ক্ষোভ, হতাশায় পর্যবসিত হয়ে তার বা তাদের নেতিবাচক ও আগ্রাসী নানা আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়। সর্বোপরি সে হয়ে পড়ে সমাজ বিচ্ছিন্ন।
মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তির মনোসামাজিক প্রতিবন্ধকতা দূরিকরণ ও মনোরোগ চিকিৎসায় আমাদের দেশে প্রচলিতভাবে মুলত ঔষধী সেবা দিয়ে থাকেন “সাইকিয়াট্রিস্ট” বৃন্দ। যার সংখ্যাও হাতে গোনা। এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর কোন চিকিৎসক যদি সাইকিয়াট্রি বিষয়ে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্স সম্পন্ন করেন; তবে তাকে “সাইকিয়ট্রিস্ট” বা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বলা হয়।
এদিকে আমাদের দেশে এমবিবিএস-এর সিলেবাসে মানসিক রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি ঐচ্ছিক পাঠ্যসূচি হিসাবে অন্তর্ভুক্ত। ফলে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায়ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যৌক্তিকভাবে ডায়গনিস্ট হয় না। কারণ মানুষ তার প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার জন্য এমবিবিএস সম্পন্নকারী ডাক্তারদের কাছেই গিয়ে থাকে।
স্মরণীয় যে ঔষধী সেবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। এছাড়াও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর এক প্রতিবেদন মোতাবেক জানা যায় যে: স্নায়ুগত বা হরমোনজনিত পরিবর্তনধর্মী মনোরোগের চিকিৎসা করা যায় ঔষধ ব্যবহার করে, যা মোট মানসিক সমস্যাজনিত রোগের মাত্র ৪ শতাংশ!!! অপরদিকে ঔষধবিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন। আমাদের দেশে অনুরূপ চিকিৎসা প্রদানে দক্ষ জনবলও হাতে গোনা। যাদের “ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট” বা ‘চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী’ বলা হয়ে থাকে।
যাদের মনোবিজ্ঞান বিষয়ে গ্রাজুয়েশন করার পর ১ বছরের এমএস শেষে ২ বছরের এমফিল ডিগ্রি সম্পন্ন করতে হয়। ঔষধবিহীনভাবে মনোবৈজ্ঞানিক নানান বিশ্লেষণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের মানসিক সমস্যার চিকিৎসা দিয়ে থাকে এই ধারার মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীগণ। অর্থাৎ ৯৬ শতাংশ মনোসমস্যা ও মানসিক রোগের চিকিৎসাসেবা দিতে এই পেশাজীবীগণ সক্ষম।
স্মরনীয় যে আবেগগত ও অনুভূতিগত পরিবর্তনজনিত কারণে যেসকল মানসিক সমস্যা বা মনোরোগের সৃষ্টি হয়; তা ক্ষতিগ্রস্তব্যাক্তির মধ্যে অসামঞ্জস্য আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গিজনিত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলে সে সামাজিক নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হয়। তথা তার সুষ্ঠু সামাজি করণ বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই এই সমস্যাকে বা প্রতিবন্ধকতাকে মনো-সামাজিক সমস্যা বলা হয়। অর্থাৎ ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোথেরাপিস্ট বা চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী’ গণই হলো মনোসামাজিক চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য যৌক্তিক ও কার্যকরী পেশাজীবী দল। অথচ এই ধারার জনবলের অনুউপস্থিতি ও স্বল্পতা আমাদের দেশে মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়াকে সংকটময় করে তুলেছে। আবার এই পদ্ধতির মনোচিকিৎসা প্রধানত “ওয়ান টু ওয়ান” ধর্মী হওয়ায়; সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল।
তবে বিগত শতকের গোড়ার দিকে সিগমন্ড ফ্রয়েড-এর শিক্ষার্থী ড. জেকব লেভি মরেনো এই সংকট উত্তরণে ‘গ্রুপ সাইকোথেরাপি’ আঙ্গিকে মনোচিকিৎসা দেওয়ার অভিনব এক পদ্ধতির প্রবর্তন করেন, যা বর্তমান সময়ে ‘থেরাপিউটিক থিয়েটার’ বা ‘নিরাময়ী নাট্য’ অভিধায় বিশেষভাবে কার্যকর একটি দলগত মনস্তাত্ত্বিক সেবা পদ্ধতি হিসাবে সফলভাবে চর্চিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার একটি দেশ এবং এই দেশের মোট জনগোষ্ঠীর সিংহভাগই দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে বলে- বর্তমান সময়কালে সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও “থেরাপিউটিক থিয়েটার তথা “প্রতিবিধানমূলক নাট্যধর্মী” মনোচিকিৎসা জনপ্রিয়তা লাভ করছে।
সরকার পরিচালিত ‘ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার‘ সমূহের উপকারভোগী-ক্ষতিগ্রস্ত ২০০জন নারী ও শিশুর উপর ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে পরিচালিত এক জরিপের ফলাফল মোতাবেক যে চিত্র ফুটে উঠেছে; তা হলো: শতকরা ৮১.৪০ভাগ নির্যাতিত নারী ও শিশু ‘বিষণ্নতা’-এর মতো মানসিক সমস্যায় ভোগে। আর শতকরা ৯১ ভাগ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে থাকে “উদ্বেগ” জনিত সৃষ্ট মানসিক চাপ।
বর্ণিত এই পরিসংখ্যান থেকে সহজেই অনুমেয় যারা মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয় (যা দৃশ্যমান নয়); তাদের মানসিক অবস্থা ও অবস্থান কোন স্তরে থাকে। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী নারী ও শিশুদের পরিস্থিতিতো আরো অমানবিক।
সামগ্রিক অবস্থা ও পরিসংখ্যানের গুরুত্ব অনুধাবন করে বিগত ১০ আগস্ট ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে “মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়” কর্তৃক ৩৭/৩ ইস্কাটন গার্ডেন রোড, ঢাকা-১০০০তে অবস্থিত “মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর- এর ৮ম তলায় স্থাপন করে “ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার (ঘঞঈঈ)” নামের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। শুধুমাত্র মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মধ্যেই এই সীমাবদ্ধ নয়; এই সেন্টারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে- দক্ষ মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদায়ক জনবল গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, প্রাসঙ্গিক গবেষণা এবং বেসরকারি পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বয় সাধন প্রক্রিয়া।
সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় দেশব্যাপী গড়ে উঠা ৬টি (ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার)-এ আশ্রয় প্রাপ্ত এবং কেন্দ্রীয় “নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল”-এ আগত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত নারী ও শিশুদের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে কাউন্সেলিং সেবা দিয়ে থাকে।
এছাড়াও এই সেন্টারের পক্ষ থেকে হেল্প লাইন নম্বর ১০৯২১-এর মাধ্যমে দেশব্যাপী ক্ষতিগ্রস্তদের মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টা চালু থাকা এই ন্যাশনাল হেল্প লাইন ব্যাবহার করে নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু কাউন্সেলিং সেবা এবং তাদের পরিবারের সদস্যগণ সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় তথ্য ও পরামর্শ পেতে পারেন সহজেই।
“নাই মামার চাইতে কানা মামাও ভালো” ধারার এই ফোনালাপ সেবা থাকা সত্ত্বেও; এই সেবা কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশু এবং তাদের পরিবার প্রাসঙ্গিক তথ্য ও কাউন্সেলিং সেবা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত।
অপরদিকে শুধুমাত্র ফোনালাপেই প্রাপ্ত কাউন্সেলিং সেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও মানসিক বিপর্যস্ত নারী ও শিশুর পরিপূর্ণ ও দীর্ঘমেয়াদী মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য যথেষ্ট নয়; ফলে আমাদের দেশে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত নারী ও শিশুগণ বরাবরই প্রত্যক্ষ মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যার ফলে সেবাহীনতায় থেকে ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশুকে পরিণত হতে হচ্ছে- স্থায়ী মনোসামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিতে। যে পরিস্থিতি জন্ম দিচ্ছে- স্বতস্ফূর্ততাবিহীন ও সৃষ্টিশীলতা বিবর্যিত অদক্ষ জনশক্তি। যারা পর্যায়ক্রমে হয়ে পড়েছেন কর্মহীন ও নিথর এক জনবোঝা রূপে। যা প্রতিনিয়ত আমাদের সামগ্রিক সামাজিক ও আর্থিক বিপর্যস্ততার মুখোমুখি করছে।
বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশুর পরিবারে সৃষ্টি হচ্ছে নানান অসামঞ্জস্যতা। অথচ “জাতীয় প্রতিবন্ধী অধিকার ও সুরক্ষা আইন- ২০১৩” মোতাবেক; মনোসামাজিক প্রতিবন্ধিতা প্রতিরোধে এবং মনোসামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া মানবাধিকার।
স্মরণীয় যে আমাদের দেশে কোন “জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অধিকার আইন” নেই। ব্রিটিশ শাসক কর্তৃক ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দে করা অমানবিক “লুনাসি এক্ট” দিয়ে মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের সেবা ও সুরক্ষার বিষয়টি এখনও বিবেচনা করা হয়। অথচ এই উপমহাদেশের কোন দেশেই বর্তমানে “লুনাসি এক্ট-১৯১২” কার্যকর নেই। তা রহিত করে; সব দেশই ইতিমধ্যে আধুনিক ও অধিকারভিত্তিক মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যুতে নতুন আইন প্রণয়ন করেছে।
আমাদের দেশে ) – এর আলোকে “বাংলাদেশ মানসিক স্বাস্থ্য অধিকার আইন-২০১৪” শিরোনামে একটি নতুন আইন- এর খসড়া প্রণীত হলেও; রহস্যজনক কারণে মনোসামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং মানসিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিদের পরিবার ও সংশ্লিষ্ট মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবীদের এই আইনের খসড়ায় কোন মতামত গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের প্রত্যাশা সরকার যত দ্রুত সম্ভব এই খসড়া আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ার সাথে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ব্যক্তি, তাদের পরিবার ও প্রাসঙ্গিক ক্ষেত্রে পেশাদারীভাবে সেবা দানকারীদের মতামত নিয়ে প্রস্তাবিত এই আইনটি চূড়ান্ত করবে।
এ প্রসঙ্গে মানবাধিকারের আলোকে একটি বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে যথাক্রমে “চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন” এবং “জাতীয় আইন কমিশন”- এর দায়িত্বশীল কার্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যাতে করে জেন্ডার বৈষম্যের শিকার নারী ও শিশুরা মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের সম্মুখীন হলে- মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা এবং আইনি সুরক্ষা পেতে সমর্থ হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যুতে সচেতনতার অভাব, সেবা প্রদানকারীর সংখ্যার ও সেবার মানের নিম্নমুখিতা, পারিবারিক ও সামাজিক স্ট্রিগমা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিকারমূলক আইনি কাঠামোর অনুপস্থিতিকে পর্যবেক্ষণ-এ নিয়ে; স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা “ইউনাইট থিয়েটার ফর সোশাল অ্যাক্‌শন্‌” প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যুতে নানামুখী কর্মসূচি, প্রশিক্ষণ ও অধিপরামর্শমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
যার ধারাবাহিকতায় ২০১২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে উৎস দাতা সংস্থা “দিয়াকোনিয়া বাংলাদেশ”-এর সহযোগিতায় নারী ও শিশুদের মানোসামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায়- একটি সমন্বিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
অপরদিকে জেন্ডার বৈষম্য সৃষ্টিকারী পুরুষ ও কিশোরদের নেতিবাচক চিন্তাকে ইতিবাচক পর্যায়ে উপনীত করার লক্ষ্যে- মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণিক পরিবর্তন নিশ্চিত করতে পুরুষ ও কিশোরদের অংশগ্রহণে এই প্রকল্পের মাধ্যমে সচেতনতামূলক ও আচরণ পরিবর্তনমূলক “মনোবিশ্লেষক বা থেরাপিউটিক” থিয়েটার অধিবেশন আয়োজন করা হচ্ছে। যেন মনোবৈকল্যতা সম্পন্ন ও বিকারগ্রস্ত মানসিকতার কিশোর ও পুরুষগণ “জেন্ডার সেনসেটিভ” জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়।
একদিকে আলোচ্য প্রকল্পের মাধ্যমে উৎস মানসিক স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ “জেন্ডার বৈষম্য” কমিয়ে আনতে যেমন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে; তেমনি জেন্ডার বৈষম্যের শিকার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে থেরাপিউটিক থিয়েটার-এর বিভিন্ন স্বতঃস্ফূর্ত ও সৃজনশীল নাট্যক্রিয়ার প্রয়োগ প্রক্রিয়া বিনামূল্যে প্রদান করে ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
জেন্ডার বৈষম্য দূরীকরণ ও মনোসামাজিক স্বাস্থ্য সুরক্ষাসেবা সহজলভ্য করা এবং প্রাসঙ্গিক ইস্যুতে অধিপরামর্শ করার জন্য ভুক্তভোগী ও সচেতন নাগরিকদের নিয়ে ইতোমধ্যে চলমান প্রকল্পের আওতায় ২টি অধিপরামর্শমূলক মোর্চা সংগঠন গঠিত হয়েছে। যার একটি হলো “মেন্টাল হেলথ অ্যাডভোকেস এসোসিয়েশন” এবং অপরটি হলো “নারী যোগাযোগ কেন্দ্র (ঘঔক)- চট্টগ্রাম মহানগর।
পরিশেষে সকল পাঠককে নারী ও শিশুর প্রতি জেন্ডার বৈষম্য কমিয়ে আনার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের মানসিক বিপর্যয় থেকে মুক্তি দিতে যে যার অবস্থান থেকে কাজ করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
লেখক : মোস্তফা কামাল যাত্রা
নির্বাহী পরিচালক,উৎস; চট্টগ্রাম।
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনেরখবর-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য মনেরখবর কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের দায় নেবে না।

Previous articleলেখক লেখকই, লেখকের কোনো জেন্ডার নেইঃ সেলিনা হোসেন
Next articleনারীর মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় চালু হচ্ছে ওয়েবসাইট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here