ছোট বেলা থেকেই মার খেয়ে বড় হয়েছি

ছোট বেলা থেকেই মার খেয়ে বড় হয়েছি

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সে সবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আমাদের আজকের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন- ইসমাত জাহান জনি।

প্রশ্ন: আমি নিজে ছোট বেলা থেকেই মাইর খেয়ে বড় হয়েছি। অন্যায় না থাকা স্বত্তেও ছোট বেলায় স্বপ্নে দেখতাম আম্মা মারছে। এই বয়সেও একই স্বপ্ন দেখি ঘুমে ছোট বেলা ও কাদতাম এখনো কাদি। ইভেন ছেলের সামনে আমাকে মারে। আজকে ছেলে বলতেছে মাকে লাঠি দিয়ে মারে। ওকে সারাক্ষণ তুলনা করতে থাকে কেন ও অন্যদের মতো না। ও ছোট বেলায় এমন ছিল না। স্কুলে গিয়ে গতানুগতিক বাচ্চাদের মতো বসত না। কিন্তু পড়াশোনায় আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো।

আর গত ৩ বছর ধরে হঠাৎ করে প্রচন্ড সাউণ্ড সেন্সেটিভ হয়ে গেছে। জোরে মাইকে কথা বললে, শুক্রবার খুতবা পড়লে না থামা পর্যন্ত ওর অস্থিরতা কমে না। আগে খুব কান্নাকাটি করত। ইদানীং আমি নানাভাবে এটাকে একটু চেঞ্জ করেছি কিন্তু তাও কোন উন্নতি নাই।

সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম ওনাকে কোয়াপারেট করে না। আমি সিংগেল মাদার মায়ের বাসায় থাকি। মা বোনেরা আমাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে। আমি বাইরে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়েছি ওকে সাথে নিয়ে যাব কিন্ত ওকে আমি কিভাবে মানসিক ভাবে প্রস্তুত করব বুঝতে পারছি না।

আর ওর মধ্যে বয়ঃসন্ধির বেশ কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হচ্ছে কিন্তু ও এইসব এর কিছুই বুঝে না। সবকিছু মিলে আমার পাগল পাগল লাগে। ও গোটা কয়েক মানুষ ছাড়া কারোর সাথে মিশতে পারে না। আই খুব কন্টাক্ট কম করে। কিভাবে কি করব যদি পরামর্শ দিতেন।

উত্তর: আপনাকে ধন্যবাদ প্রশ্ন করার জন্য। আপনার লেখা পড়ে বুঝা যাচ্ছে আপনি অনেকদিন যাবত এই সমস্যায় ভুগছেন। আপনার ব্যক্তিগত জীবন, সাংসারিক জীবন, পরবর্তিতে এখন বাচ্চাসহ যেই জীবন, এই তিন জীবনের টোটাল ঘটনাটা শুনা বা জানা খুব জরুরি। আপনি যখন ছোট ছিলেন তখন কেমন ছিলেন? কেন আপনার পরিবারের লোকজন আপনাকে মারতো বা আধৌ মারতো কিনা? সেটা জানার প্রয়োজন ছিল।

একই সাথে পরবর্তিতে আপনি যখন দু:স্বপ্ন দেখতেন যে আমাকে মারছে, এই বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা জরুরি। আপনার স্বামীর সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল? কেন আপনি সিংগেল মাদার? এই বিষয়গুলো বিস্তারিত জানা দরকার। পরবর্তিতে যখন আপনার বাচ্চা হয়, সে বাচ্চার যে কথা বললেন তাতে বুঝা যায় প্রথম দিকে বাচ্চার এমন সমস্যা ছিল না। এখন আপনার বাবার বাড়িতে আছেন, সেখানেও আপনার অবস্থা ভালো নেই, সেটাই বুঝা যাচ্ছে।

বাবার বাড়িতে যদি ভালো না থাকেন, সেটার কারণটা কি? কেন আপনার প্রতি নির্যাতন করা হবে বা হচ্ছে? সেই বিষয়গুলো জানা জরুরি। একই সাথে বাচ্চার যে কথা বললেন তাতে বুঝা গেল আপনার বাচ্চার প্রথম দিকে এমন সমস্যা ছিল না, পরবর্তিতে এমন সমস্যা হয়েছে। এটা খুব সম্ভব অটিজমের সমস্যা। আর অটিজমের সমস্যা এবং আপনার ব্যক্তিগত সমস্যার কোনটারই কিন্তু প্রোফেশনাল হেল্প না নিয়ে শুধুমাত্র হালকা চিকিৎসা দিয়ে এটা শেষ হবে না।

আপনি যেহেতু পিএসডির সুযোগ পেয়েছেন, আমার মনে হয় যে কোন ভাবেই এটা করা উচিৎ। তার জন্য আপনার প্রোফেশনাল আপনাকে আরো সরাসরি সাহায্য করতে পারবে যে, আসলে বাচ্চাটাকে কেমন করে ভালো রাখা যায় বা বাচ্চাটা কেমন করে ভালো থাকবে? এবং আপনি বিদেশে বা বাহিরে যেয়ে কিভাবে থাকবেন বা কিভাবে রাখবেন। আপনার কর্তৃপক্ষ যারা আছেন বা যারা আপনাকে পিএসডি করার সুযোগ দিয়েছেন তাদের সাথে আপনি এটা নিয়ে আলাপ করতে পারেন যে, আপনার এমন একটা বাচ্চা আছে।

সুতরাং আপনার নিজের অবস্থাটা দেখা, বাচ্চার অবস্থাটা দেখা এবং যা যা করণীয় বা করা যায়, সেটার জন্য আপনাকে সরাসরি প্রোফেশনালের সাহায্য নিতে হবে এবং এটা মেইন্টেন করতে হবে। ভালো হয়, আপনি বিদেশে যাওয়ার আগে এটা করেন এবং বিদেশে গিয়েও আপনার বাচ্চাটাকে কিভাবে ভালো রাখা যায় সেটার জন্য সামনের দিকে আগান। ধন্যবাদ আপনাকে।

ইতি,

প্রফেসর ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব

অধ্যাপক – মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সেকশন মেম্বার – মাস মিডিয়া এন্ড মেন্টাল হেলথ সেকশন অব ‘ওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন’।

কোঅর্ডিনেটর – সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবেক মেন্টাল স্কিল কনসাল্টেন্ট – বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম।

সম্পাদক – মনের খবর।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে

Previous articleসুখময় যৌনজীবনে ঘুমের প্রভাব
Next articleশিশুদের করোনা ভীতি দূর করতে শোনাতে পারেন করোনা বিষয়ক গল্প

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here