চীনে মানসিক রোগে আক্রান্ত ১৭.৩ কোটি

মানসিক স্বাস্থ্য সেবার চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে চীনের গণস্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল দ্য ল্যান্সেট-এ প্রকাশিত একটি গবেষণার ফলাফল অনুসারে, চীনের ১৭৩ মিলিয়ন লোক মানসিক সমস্যায় ভুগছে। প্রতি এক লাখ লোকের জন্য গড়ে মানসিক ডাক্তার রয়েছে মাত্র দেড়জন, যা কি-না যুক্তরাষ্ট্রের এক-দশমাংশ। চীনে মানসিক ডাক্তারের মোট সংখ্যাটা মাত্র ২০ হাজার। সাংহাইয়ের জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টাল হেল্থ সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক মাইকেল ফিলিপস জানিয়েছে, মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে, চীনের এমন লোকদের মাত্র ৫ শতাংশ পেশাদার মনোচিকিৎসকের কাছ থেকে সেবা নিতে পারছে। তার মতে, মানসিক অবস্থা সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, মানসিক স্বাস্থ্য সেবার অপর্যাপ্ততা, কলঙ্কের ভয়, চিকিৎসার অধিক খরচ এবং বস্তুত ডাক্তার দেখিয়ে কিছু হয় না এমন মনোভাব জটিল রোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
যথাযথ মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অপর্যাপ্ততার সুযোগে নামসর্বস্ব ও অযোগ্য ডাক্তার ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। হংকং সাইকোলজিক্যাল সোসাইটির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের হংকং-ভিত্তিক চেয়ারম্যান ড. স্যামি চেং কিন-উইং জানিয়েছে, চীনের মনোচিকিৎসা সম্পর্কে প্রচুর অভিযোগ। বিশেষত অনিবন্ধিক মনোবিদরা অপেশাদার উপদেশ দিয়ে ক্লায়েন্টদের বিপদ আরো বাড়িয়ে দেয়। চীনের মূল ভূখ-ে অনেক মনোচিকিৎসকেরই প্র্যাকটিস জমজমাট। এদের একটা অংশ সু-প্রশিক্ষিত; কিন্তু তারা সংখ্যালঘু। মনোচিকিৎসার প্রচুর চাহিদা থাকায় অযোগ্যরা খুব সহজেই তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছে। এদের বাতলানো চিকিত্সায় বেশিরভাগ রোগীরই অবস্থার অবনতি ঘটে। এতে ক্ষেপে গিয়ে রোগীর আত্মীয়-স্বজন নামসর্বস্ব ডাক্তারকে মারধোর করেছে, এমন ঘটনা মোটেও বিরল নয়।
যাদের সত্যিই সাহায্যের প্রয়োজন অথচ অর্থাভাবে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছে না, তাদের কিছুদিন আগেও সরকার জোর করে মানসিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠিয়ে দিয়ে প্রকারান্তরে বন্দী করে রাখত। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর জ্যেষ্ঠ গবেষক নিকোলাস বেকুউলিনের তথ্যানুসারে, মানসিক রোগীদের বেলায় এমন পদ্ধতি চীনে বলবৎ ছিল কয়েক দশক, যা কি-না মেডিক্যাল ইথিকসের স্পষ্ট লঙ্ঘন। মানবাধিকার কর্মী জিং শিকু জানিয়েছে, মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তাকে ছয় বছর আটকে রাখা হয়েছিল হাইলংজিয়াং প্রদেশের একটি হাসপাতালে। এ ধরনের মানসিক প্রতিষ্ঠানকে চীনে বলা হয় “আংকাং” হাসপাতাল। আংকাং শব্দের অর্থ শান্তি ও স্বাস্থ্য। কিন্তু ওই হাসপাতালগুলোতে আদৌ শান্তি ছিল কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ২০১১ সালেও চীনে আংকাং হাসপাতাল ছিল মোট ২০টি। এগুলোয় চিকিৎসা বলতে ছিল কেবল মারপিট আর বৈদ্যুতিক শক। চীনের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কমিশন অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তাদের দাবি, মনোরোগীদের চিকিৎসা করা হত সকল নিয়ম-কানুন মেনেই। আংকাং হাসপাতালগুলো পরিচালনার দায়িত্বে ছিল সেদেশের জননিরাপত্তা ব্যুরো। এদিকে, গত বছর সূচিত হয়েছে একটি মানসিক স্বাস্থ্য আইন, যেটি পাস করতে লেগে গেছে ২৭ বছর। নতুন এ আইন অনুসারে কোনো মানসিক রোগী না চাইলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা যাবে না। এতে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে তা হচ্ছে, প্রয়োজন হবে প্রচুর প্রশিক্ষিত মনোচিকিৎসকের। কিন্তু সে পরিমাণ প্রশিক্ষিত মনোচিকিৎসক তৈরি করতে চীনের বহু বছর লেগে যাবে।

Previous articleভালো থাকার জন্য নিয়ম মেনে চলি-ফরিদা পারভীন
Next articleযৌনাচরণের মূল নিয়ন্ত্রক মন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here