চিন্তা কৌশলের খেলা

চিন্তা কৌশলের খেলা

ক্রীড়া বা খেলা শব্দটি শুনলে আমরা এর শারীরিক দিকটার কথাই মনে করি অধিকাংশ সময়। সুস্থ-সঠাম দেহের গুরুত্ব নিঃসন্দেহে খেলাধুলার জন্য অনস্বীকার্য।

একজন খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন নিয়মিত কঠোর শারীরিক পরিশ্রম। এজন্য তাদের মাংসপেশির দরকার পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ, যা হৃৎপি- ও ফুসফুসের সুস্থতা ছাড়া অসম্ভব।

২০১৮ উইম্বল্ডন টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে ছেলেদের এককের সেমিফাইনালে কেভিন এন্ডারসন ও জন ইনসার একটানা ৬ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট ধরে ৫ সেট খেলা খেলেন। এটি ছিল উইম্বল্ডনের সবচেয়ে দীর্ঘ সেমিফাইনাল, যা শেষ পর্যন্ত জিতেন কেভিন এন্ডারসন। তার শারীরিক সক্ষমতাই কি তাকেঁ এই সুদীর্ঘ খেলা জিততে সহায়তা করেছিল?

সকল খেলোয়াড়দেরই বছরের পর বছর প্রশিক্ষণ নিতে হয় খেলার নিয়ম-কৌশল ও শারীরিক স্ট্যামিনা তৈরির জন্য। ফুটবল খেলায় যেমন কিকিং, হেডিং, ড্রিবলিং, ট্রপিং, ট্যাকলিংয়ের মতো নানা শারীরিক কৌশল আছে।

ক্রিকেটে পেস বোলারদের হাজার হাজার বার বল ছুড়ে তাদের নিক্ষেপ নিখুঁত করতে হয়। যেকোনো বড়ো খেলার আগে খেলোয়াড়দের দিন-রাত, সপ্তাহের পর সপ্তাহ অনুশীলন করে যেতে হয় এই শারীরিক কৌশলগুলোতে পরিপক্ব হওয়ার জন্য।

কিন্তু এগুলো খেলার একটি মাত্র আঙ্গিক, পুরো দৃশ্য নয়। একজন ক্রিকেটার কঠোর প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত চর্চা করে তার বোলিং লাইন, বোলিং দূরত্ব বা প্রয়োজনীয় ছন্দ নিজের আয়ত্তে আনতে পারবেন ঠিকই কিন্তু জয়ের জন্য তার খেলাটা হবে ভিন্ন।

খেলা জেতার জন্য কেবল শারীরিক শক্তি বা কলাকৌশলই যথেষ্ট নয়, তার সেই খেলা সম্পর্কিত পর্যাপ্ত বোধগম্যতা, খেলার সময় তার অন্তর্দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, মানসিক দৃঢ়তা ও সঠিক পরিকল্পনা কোনো অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

একজন খেলোয়াড়ের যতই চমৎকার শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও প্রায়োগিক কলাকৌশল থাকুক, যাথাযথ বোধগম্যতা ছাড়া কখনোই তার পক্ষে বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়। সহজ বাংলায় আমরা এটাকে বলে থাকি খেলার মাথা।

এই খেলার বোধগম্যতা বলতে অনেককিছুই বোঝায়। এর মধ্যে খেলা-মাঠে সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, প্রতিপক্ষের কৌশল বোঝা বা খেলার গতিবিধি আঁচ করতে পারা বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা ও মাঠে দ্রুত কলাকৌশল তৈরি ও পরিবর্তনের ক্ষমতাই নির্ধারণ করে খেলায় তার সাফল্য ও ব্যর্থতা এবং একইভাবে নিশ্চিত করে খেলায় দলের বিজয়টিও।

ক্রিকেট খেলায় কেউ যদি কারো বলে চার-ছক্কা মারে তবে পরের বলগুলো কেমন হওয়া উচিত এটি তার কলাকৌশল, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও প্রতিপক্ষ সম্পর্কিত তার জ্ঞান থেকে উপলব্ধ হবে।

ফুটবল খেলায় খেলোয়াড়দের চিন্তার ক্ষমতা ও মানসিক দৃঢ়তার চূড়ান্ত পরীক্ষা হয় পেনাল্টি শ্যুট আউটের সময়। যদি গোলকিপারের শ্যুটার সম্পর্কে যথেষ্ট পড়াশুনা থাকে। তবে সে জানবে তার প্রিয় কর্নার সম্পর্কে এবং সেই গোল ধরে ফেলার সম্ভাবনাও থাকবে বেশি।

কৌশলগত সুচিন্তার মাধ্যমে গাধাখাটুনির বদলে কম কাজ কার্যকরভাবে করে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব। বোকার মতো বলের পেছনে না ছুটে প্রতিপক্ষ কোনদিকে আছে ও কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে দেখেই বল পাস করে খেলাটাই কৌশলী চিন্তার উদাহরণ।

ভালো খেলার জন্য কেবল মাংসপেশিতেই অক্সিজেন সরবরাহ প্রয়োজন তা নয়- আমাদের মস্তিষ্কের ও প্রয়োজন অক্সিজেনের পর্যাপ্ত সরবরাহ। কারণ এটা মস্তিষ্কই নির্ধারণ করবে আমরা আমাদের মাংসপেশিগুলো কীভাবে ব্যবহার করব।

হয়ত খেলার শেষ মূহুর্তে অতর্কিতে আক্রমণ, আকস্মিক একটি নিক্ষেপ কিংবা প্রতিপক্ষের দুর্বল দিকে ড্রিবল পাসই দলে এনে দিতে পারে বিজয়ের গৌরব।

ডা. মো. জুরদি আদম

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

“মনের খবর” ম্যাগাজিন পেতে কল করুন ০১৮ ৬৫ ৪৬ ৬৫ ৯৪
Previous articleস্মার্ট ফোন হচ্ছে ডিজিটাল মাদক
Next articleজিটিএ’২১ গোল্ড মেডেল পেলেন মনের খবরের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক মাফরুহা খানম সূবর্ণা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here