গত ৫ এপ্রিল আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান সংক্রমণের তৃতীয়স্তরে প্রবেশে করেছে বাংলাদেশ। কারণ ঢাকার টোলারবাগ ও বাসাবো, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর (শিবচর), গাইবান্ধা (সাদুল্লাপুর)-এসব এলাকায় “ক্লাস্টার” বা গুচ্ছ আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।
ঢাকার বাইরের অনেকগুলো জেলাতেও করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ রয়েছে।
বুধবার (৮ এপ্রিল) সেব্রিনা ফ্লোরা বিবিসি’কে জানান, বাংলাদেশ এখন সংক্রমণের দিক থেকে তৃতীয় ও চতুর্থস্তরের মাঝামাঝিতে রয়েছে। ভাইরাসটি কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়লেও সেটা এখনো ক্লাস্টার আকারে রয়েছে।
উল্লেখ্য, সংক্রমণের প্রথমস্তর বলা হয়ে থাকে, যখন দেশে কোন রোগী শনাক্ত না হয়।
দ্বিতীয়স্তর বলা হয়, যখন বিদেশফেরতদের মাধ্যমে রোগী শনাক্ত হয়।
তৃতীয়স্তর হচ্ছে সীমিত আকারে সমাজে রোগটি ছড়িয়ে পড়া।
‘সঙ্কটময়’ এপ্রিল
এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।
বৃহঃবার বাংলাদেশে নতুন করে ১১২ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে, বুধবার এই সংখ্যা ছিল ৫৪ জন । এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৪১জন। তার আগের দিন ছিল ৩৫জন।
একইসাথে বৃহঃবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বুধবার এই সংখ্যা ছিল ৩ জন। এর আগের দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল পাঁচজন। দেশটিতে বুধবার পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০জন।
সামাজিক সংক্রমণ এড়াতে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার ভেতরেও বেশ কয়েকটি এলাকা লকডাউন বলে ঘোষণা করা হয়।
লকডাউন করা এসব এলাকায় কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারবেন না। বুধবার থেকে লকডাউন করা হয়েছে কক্সবাজার জেলাকেও।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব এলাকায় একাধিক রোগী শনাক্ত হওয়ায় সংক্রমণ ঠেকাতে এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এপ্রিল মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একদিকে যেমন সামাজিক সংক্রমণ দেখা দিতে শুরু করেছে, তেমনি সেটা ঠেকিয়ে রাখার জন্য ছুটি লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তারপরেও রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে হবে।
তিনি বলছেন, “ঢাকা শহরেই বেশিরভাগ পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জেও বেশ কিছু রোগী পাওয়া গেছে। এরকম যেসব স্থানে বেশি রোগী পাওয়া গেছে, সেসব এলাকা লকডাউন করে রোগটি সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা যদি ঠিকভাবে করা যায় তাহলে আমরা বেঁচে যাবো।”
“করোনাভাইরাস কন্ট্রোল করতে হলে সেটা এই এপ্রিল মাসের মধ্যেই করতে হবে। এরচেয়ে বেশি সময় দেওয়া যাবে না। আমরা যদি সেটা করতে না পারি, ব্যর্থ হই, তাহলে অবস্থা খুব খারাপ হবে। তখন লম্বা সময় ধরে আমাদের করোনাভাইরাস পুষতে হবে। তাই এই এপ্রিল মাসটা খুব ক্রিটিক্যাল।”
তিনি বলছেন, এখন সবকিছু বন্ধ রয়েছে, সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও যদি রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরে আর নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, যে হারে রোগী শনাক্ত হচ্ছে, সংক্রমণের যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এক কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (ব্যাপক জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণ) বলতে বাধা নেই।
তৃতীয় আর চতুর্থ স্তরের মাঝামাঝি
আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, “এখনো বাংলাদেশে কোভিড-১৯ বিস্তার ক্লাস্টার আকারে (ছোট ছোট গ্রুপের মধ্যে) রয়েছে। সেটা কমিউনিটি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলবো না। তবে কিছু কিছু রোগী আমরা পাচ্ছি, যাদের সংক্রমণের উৎস শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।”
“আমরা আসলে এটা ট্রান্সজিশন পিরিয়ডের ভেতরে রয়েছি। তৃতীয়স্তর থেকে চতুর্থস্তরে (যখন ব্যাপক মানুষের মধ্যে সংক্রমণ দেখা দেয়) যারা লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। তবে সর্বোচ্চ স্তরে চলে গেছি সেটি আমি বলবো না।”
সূত্র: বিবিসি
করোনাভাইরাস: এপ্রিল মাস কেন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ‘সঙ্কটময়’?
বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে কোভিড-১৯ পরীক্ষা বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এপ্রিল মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একদিকে যেমন সামাজিক সংক্রমণ দেখা দিতে শুরু করেছে, তেমনি সেটা ঠেকিয়ে রাখার জন্য ছুটি লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তারপরেও রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে হবে।