আমি কেমন একটা আতঙ্কে থাকি!

আমি কেমন একটা আতঙ্কে থাকি

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে ঘটে নানা ঘটনা, দুর্ঘটনা। যা প্রভাব ফেলে আমাদের মনে। সেসবের সমাধান নিয়ে মনের খবর এর বিশেষ আয়োজন ‘প্রতিদিনের চিঠি’ বিভাগ। এই বিভাগে প্রতিদিনই আসছে নানা প্রশ্ন। আমাদের আজকের প্রশ্ন যিনি পাঠিয়েছেন তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

প্রশ্ন: আমি একজন সিঙ্গেল মা। আমার বাচ্চার যখন একমাস বয়স, তখন আমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। আমাকে শশুর বাড়ি থেকে নানা ভাবে নির্যাতন করা হয় এবং হুট করে তারা আমাকে ডিভোর্স দেয়। এ কারণে আমি মানসিকভাবে আঘাত পাই এবং ভেঙ্গে পড়ি।

এরপর সমাজের কাছে খোঁচা, মেয়েকে একা মানুষ করা এবং নানান রকম চাপে পড়ে আমি এখন মানসিক ভাবে অসুস্থ। আজ ছয় বছর যাবত আমি সমস্যায় জর্জরিত। এখন রাতে ঘুম কম হয়। আগে একদমই হতো না। সব সামলিয়ে আমি এতোটাই ক্লান্ত যে, আমার ভীষণ রকম মুড সুইং হয়।

মাঝে মাঝে আমি অযথাই বাসার সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই। দিনদিন ভীষণ রকম বদ মেজাজি হয়ে গেছি। অল্পতেই আমার বাচ্চাকে বকাঝকা করি আবার মাঝে মাঝে মারও দেই। পরে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। বাসার সবার সাথে অযথাই রাগারাগি করি। ইদানিং মানুষের সাথে দেখা হলেও অনেককেই চিনি না, যাদের আগে চিনতাম। ছোট ছোট সমস্যাগুলো ভুলে যাই। সবার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখি। সব সময় একা থাকি।

আর সবেচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ইদানিং কেমন একটা আতঙ্কে থাকি। মনে হয় এই বুঝি কোনো খারাপ সংবাদ শুনবো। কেউ বাসায় জোরে কথা বললে বা হইচই করলে অথবা আমাকে জোরে ডাকলে আমার হাড বিট বেড়ে যায়। মনে হয় এই বুঝি স্ট্রোক করবো। প্লিজ আমাকে সমাধান দিন….

উত্তর: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ প্রশ্নটি করার জন্য। বুঝাই যাচ্ছে আপনি বেশ কষ্টকর ও দু:সময়ের ভিতর দিয়ে সময় কাটাচ্ছেন। একটা জিনিস সেটা হলো আপনার বয়স কত সেটা এখানে বুঝা গেল না। আপনার বাচ্চার বয়স একমাস থাকা অবস্থায় আপনি ডিভোর্সের স্বীকার হয়েছেন।

আপনার শশুড় বাড়ির মানুষ আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে আপনাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ( আপনার কথা অনুযায়ি)। তারপরে শশুড় বাড়ির লোক জনের সাথে কতটুকু যোগাযোগক করেছেন বা এখন আদৌ যোগাযোগ করেন কিনা? সেটাও ক্লিয়ার না।

যা হোক তারপরও যেটা বুঝা যায় আপনার পক্ষ থেকে বা সমস্যা থেকে আপনি নিশ্চিত ভাবে ডিপ্রেশন বা ডিজঅর্ডার ভুগছেন। আপনার যদি সুযোগ থাকে তাহলে আপনি ডিপ্রেশন বা ডিজঅর্ডারের চিকিৎসা করান। এটা খুব ভালো চিকিৎসা এবং চিকিৎসা করালে আপনি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবেন।

একটা জিনিস মনে রাখবেন জীবন আপনার, আপনি যে জীবন পার করে আসছেন তারা তো আপনাকে নিয়ে যাচ্ছে না বা আপনিও তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন না। সুতরাং ঐ অবস্থায় বন্দি থেকে আপনার জীবনকে দূর্বিশহ বা কষ্টকর করে তুলার মানে হয় না। কষ্টকর অবস্থায় আটকে রাখারও কোন মানে হয় না।

আপনি দ্রুত কোন একটা চিকিৎসা নেন এবং সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যান। জীবনকে উপভোগ করেন এবং আপনি যদি আপনার জীবনকে উপভোগ করেন বা আপনার জীবনকে সুস্থ রাখতে পারেন তাহলে আপনার বাচ্চার বা মেয়েটির জীবনও সুন্দর হবে।

সুতরাং ঐ কষ্টকর জীবনে সব সময় আটকে রাখার মানে হয় না। আমি আপনকে নিশ্চিত করে বলছি আপনি যদি চিকিৎসা করান তাহলে আপনি সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাবেন। সুন্দর জীবন কাটান, সুস্থ জীবন কাটান নিজের জন্য এবজন্য। আপনি যখন ভালো থাকবেন তখন আপনার এই বুক ধরপর করা বা অন্যান্য বিষয়গুলো থাকবে না।

আপনি যে আতঙ্কের কথা বললেন, সেটা আপনার ডিপ্রেশনের কারণে বিভিন্ন লক্ষণ আপনার মধ্যে চলে আসছে। চিকিৎসার মাধ্যমে আপনার সেই লক্ষণগুলো চলে যাবে। জীবনকে সুন্দর করুন, নিজে ভালো থাকুন, পরিবার ও বাচ্চাকে ভালো রাখুন। সব সময় মনের খবরের সাথে থাকুন। যদি আবার কোন সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে জানাবেন। আমরা আপনার পাশে থাকার চেষ্টা করব।

ইতি,
প্রফেসর ডা. সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব
চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক – মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সেকশন মেম্বার – মাস মিডিয়া এন্ড মেন্টাল হেলথ সেকশন অব ‘ওয়ার্ল্ড সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন’।
কোঅর্ডিনেটর – সাইকিয়াট্রিক সেক্স ক্লিনিক (পিএসসি), মনোরোগবিদ্যা বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক মেন্টাল স্কিল কনসাল্টেন্ট – বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিম।
সম্পাদক – মনের খবর।

Previous articleআদর্শ সম্পর্কের কিছু বৈশিষ্ট্য
Next articleনিঃসঙ্গতা, মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here