আত্মসমালোচনার অভ্যাস: ফাঁদ নাকি আশীর্বাদ?

আত্মসমালোচনার অভ্যাস: ফাঁদ নাকি আশীর্বাদ?
নিজেকে নিয়ে সমালোচনা বা আত্মসমালোচনা করার অভ্যাস এবং এ ধরণের চিন্তা ভাবনা আমাদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি করে এবং মানসিক পীড়ায় আক্রান্ত হয়ে অপ্রীতিকর অনুভূতি থেকে মুক্তি পেতে আমরা সেসব কাজ করি যা করা ঠিক নয়। এ ধরণের স্বভাব ঠিক যেন এক মারণ ফাঁদ।

কিছু হলেই নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করা এবং নিজের যা কিছু আছে সেটি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে না পারাই হল আত্মসমালোচনার প্রধান কারণ। আমাদের মধ্যে অনেকেই আত্মসমালোচনার এই ফাঁদের শিকার। আমরা আমাদের কাজকে পছন্দ করতে পারিনা, আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছাকে সম্মান করতে পারিনা, এমনকি লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হলেও আমরা নিজেদের উপর ক্রুদ্ধ হয়ে যাই। আমরা অন্য কোন কিছুকে উৎকৃষ্ট বা সঠিক মনে করে সর্বদা নিজেদের সক্ষমতাকে ছোট করে দেখি। এ ধরণের অভ্যাস বা স্বভাব অধিকাংশ সময়ই আমাদের মধ্যে ভয়ানক খারাপ অনুভূতির সৃষ্টি করে। আর এর ফলে মানসিক শান্তির আশায় উদ্ভ্রান্ত হয়ে আমরা বোকার মতো কাজ কর্ম করে বসি। কিভাবে আমরা এই ফাঁদ থেকে মুক্ত হতে পারি? নিচে কয়েকটি এমন কৌশল তুলে ধরা হল যা আমাদের মনে নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনবে এবং যার গুণে আমরা এই ফাঁদ থেকে মুক্ত হতে পারবো।

১) ইতিবাচক দিকে দৃষ্টিপাত করুনঃ
একটি মানুষের স্বভাবে দোষ গুণ উভয়ই থাকবে। একই ভাবে প্রতিটি মানুষের সক্ষমতা, স্বভাব, অভ্যাস এসবও ভিন্ন ভিন্ন হয়। আমরা যদি নিজেদের স্বভাব, পারদর্শিতা, চিন্তাভাবনা এসব নিয়ে সন্তুষ্ট না থাকতে পারি তাহলে আমাদের মাঝে নেতিবাচক মনোভাবই বিকশিত হবে। তাই সব সময় সমালোচনা করা বা সব বিষয়কে নেতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করা চলবে না। আমাদের গুণ বা প্রতিভাবেও সম্মান করতে হবে এবং নেতিবাচক দিক গুলি নয়, বরং ইতিবাচক দিকে মনোযোগ দিতে হবে। ভালো কিছুর জন্য নিজেদের উৎসাহিত করতে হবে। অত্যধিক সমালোচনা মনের স্পৃহা কমিয়ে দেয় এবং স্বতঃস্ফূর্ত জীবন যাপনে বাঁধা সৃষ্টি করে।

২) আত্মসমালোচনার ফলাফলগুলির প্রতি দৃষ্টিপাত করুনঃ
আত্মসমালোচনা আপনার মন ও শরীরের উপর ঠিক কিভাবে প্রভাব বিস্তার করছে এবং কি কি ফলাফল বয়ে আনছে সেগুলি খুব মনোযোগ দিয়ে চিন্তা করুন। আত্মসমালোচনা ব্যক্তির মাঝে হতাশার জন্ম দেয়। মানুষ মানসিক প্রশান্তি কি সেটি ভুলে যায়। সর্বদা এক প্রকার শূন্যতার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। আর এ ধরণের অনুভূতি বা মানসিক স্থিতি সর্বদাই মানসিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার পথে বড় অন্তরায়। তাই এসব নেতিবাচক ফলাফল নিয়ে যখন আপনি ভালো ভাবে ভাববেন, কখনোই এমন অবস্থার শিকার আর হতে চাইবেন না। তাই খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে নিজের মাঝে সচেতনতার অনুভূতি জাগ্রত করুন।

৩) নিজেকে ভালবাসুনঃ
নিজের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস আনার জন্য সর্ব প্রথম নিজেকে ভালবাসতে শিখতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে যে কেউই আদর্শ জীবন যাপন করতে পারেনা। আর নিজের অপারগতাকে নিজের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে দাঁড় করাবেন না। এতে আপনার ক্ষতিই সব থেকে বেশী। তাই নিজেকে ভালবাসুন। নিজেকে নিয়ে খুশী থাকুন। তাহলে আত্মসমালোচনার মতো অভ্যাস গুলি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।

ধৈর্য এবং সহনশীলতাই একজন মানুষের সব থেকে বড় মানসিক গুণ। আত্ম সমালোচনা আমাদের মধ্যে ভালো মন্দের বোধ থেকে আসে। কিন্তু এটিকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিৎ নয় যা আমাদের আত্মবিশ্বাস, নিজের প্রতি আস্থা এবং ভালোবাসাকে কমিয়ে দেবে। উপরের কৌশল গুলি হতে পারে এ ধরণের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার শুভ সূচনা।

সূত্র: https://www.psychologytoday.com/intl/blog/cbt-made-simple/202105/the-trap-self-criticism

অনুবাদ করেছেন: প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা 

স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে

 

Previous articleআমরা কি মহামারী উত্তরণে মানসিক ভাবে প্রস্তুত?
Next articleমহামারীকালে মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ডিজিটাল জীবন ব্যবস্থার যত গুণাগুণ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here