মানুষ সামাজিক জীব।সে পরিবার গঠন করে।বাবা মা ভাই বোন ছেলে মেয়ে নিয়ে পরিবার তৈরী করে।আত্নীয়স্বজন পাড়াপ্রতিবেশী নিয়ে একটা সামাজিক বলয় সৃষ্টি করে তার চারপাশে।কর্মক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সহকর্মী এবং অধস্তন কর্মচারীদের নিয়ে একটা সুষ্ঠ কর্মপরিবেশ বজায় রেখে তার দাপ্তরিক কার্যসম্পাদন করতে চায়। এই পৃথিবীতে একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অঞ্চলে সে জন্মগ্রহণ করে।সেটিই তার অন্য ধর্মের জন্মভূমি ,দেশ।এই দেশের শাসনব্যবস্থা অনুযায়ী সে বসবাস করে।
আইন কানুন মেনে চলে।প্রতিটি মানুষের একটি নিজস্ব ধর্ম আছে।এক ধর্মের মানুষ প্রতি শ্রদ্ধাশীল।সামাজিকভাবে মানুষ সবার সাথে মিলেমিশে এক সমাজে সবাইকে নিয়ে বসবাস করে।একে অপরের উপকারের মাধ্যমে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়ায়।উপকার করা মানুষের একটি মানবিক গুণ।একটা সমাজের সব মানুষ জীবন যাপনের চাহিদার সমান স্তরে থাকেনা।নানাবিধ চাহিদা আছে কিন্তু যোগান থাকেনা।ধন সম্পদ,ক্ষমতা,জীবনের মৌলিক চাহিদা এসবের সাম্যাবস্থা সবার সমান থাকেনা।স্বভাবগতভাবেই মানুষের পরোপকারীতা গুণ থাকে ।সে তার আত্নীয়স্বজন এর উপকার করে,প্রতিবেশীর বিপদে এগিয়ে যায়।কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর বিপদে সহমর্মীতার হাত বাড়ায়।বন্ধুবান্ধবের পাশে থাকে।
মানসিকভাবে, আর্থিকভাবে, কার্যগতভাবে মূলত সার্বিকভাবে যার যেখানে যেভাবে প্রয়োজন সেভাবেই একজন আরেকজন এর পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।জরুরী না যে কেউ শুধু সাহায্য করবে,বরং সেও সাহায্য নিবে।যে একসময় একজন কে সাহায্য করবে ,সেই আবার পরবর্তিতে অন্য একজনের কাছে সাহায্য নিবে।এভাবেই মানুষ একে অপরের পাশে দাঁড়ায়। জীবন সাম্যাবস্থায় রাখতে এই সাহায্যশীলতার ভূমিকা অপরিসীম।রোগেশোকে পরিবারের একজন আরেকজন কে সেবাযত্ন করে তাকে স্বাভাবিক করে তোলে।তাকে কর্মক্ষম করে।
এলাকায় একটা ছেলে ছোট থেকেই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।বাবা মারা গেছেন ছোটবেলাতেই।মা কষ্ট করে মা ছেলের জন্য অন্নসংস্থান করতো।বলাবাহুল্য এলাকাবাসী এই মা ছেলেকে সাহায্য করতো।ছেলেকে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতার জন্য মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ দেখিয়েছে,ঔষধ কিনে দেয়।সেই ছেলেটার মা যখন মারা গেল তারপর ছেলেটার আরো কিছু আচরনমূলক সমস্যা দেখা দিল।তখন এলাকার কিছু ছেলে সবার কাছে টাকা উঠিয়ে অসুস্থ ছেলেটিকে নিয়ে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাস্পতালে ভর্তি করালো,যে কয়দিন প্রয়োজন সাথে থেকে চিকিৎসা করালো।এভাবেই মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়।সাম্প্রতিককালে বন্যার দৃষ্টান্ত সবার মনে আছে।এমন কি এই লিখাটা যখন লিখছি তখন ও কয়েক জেলা ভয়াবহ বন্যা আক্রান্ত।প্রতিবছর উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকা বন্যা আক্রান্ত হয়।প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট উভয়কারণেই বন্যার সম্মুখিন হচ্ছে দেশের মানুষ।হঠাৎ সৃষ্ট বন্যার তৎক্ষণাৎ জরুরী অবস্থা সামলাতে পুরোদেশবাসি ঝাপিয়ে পড়েছে বন্যাআক্রান্ত মানুষের পাশে দাড়াতে।যে যেভাবে পেরেছে তার সাধ্যমত সাহায্য করেছে।এখনো করে যাচ্ছে।বন্যাপরবর্তি অবস্থার মোকাবিলা ব্যক্তিগতভাবে,এলাকাভিত্তিক,সমষ্টিগতভাবে সর্বপরি দেশের সরকারের ভূমিকার মাধ্যমে বন্যা মোকাবিলা করা হচ্ছে।এভাবেই বাংলাদেশের মানুষ সাহায্যশীলতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে এক অনন্য উদাহরণ তৈরী করেছে।এক সাথে থাকলে,একে অপরের পাশে দাঁড়ালে কোন কিছুই মানুষ কে দমাতে পারবেনা,হারাতে পারবেনা।মানুষ মাথা উঁচু করে দাড়াবেই।তাঁর প্রাপ্য পাবেই।সে ভাল থাকবেই।এই যে নিস্বার্থ উপকার করে মানুষ এর জন্য সে কি কিছু পায়?নাহ টাকাপয়সা কিছু সে পায়না।কিন্তু যা পায় সে,তা যে আরো মূল্যবান।মনের প্রশান্তি পায় সে।কিছু মানুষ থাকে যারা অন্যদের কাছে অপবাদ পায়”ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায়”।তারা এসব কথা শুনেও পরপোকারী মনোভাব বদলায়না।ঘরের খেয়ে পরের সেবা তারা করেই যেতে থাকে।কারণ যে মানসিক প্রশান্তি তারা পায় তার সাথে কোনকিছুর তুলনা নাই।
ডা.আরেফিন জান্নাত সম্পা
এম ডি(ফেইজ বি) রেসিডেন্ট
সাইকিয়াট্রি ডিপার্টমেন্ট
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ
প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনেরখবর-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য মনেরখবর কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।
সিরিয়ালের জন্য ভিজিট করুন- এপোয়েন্টমেন্ট
আরও দেখুন-