দলীয় খেলায় ফল পেতে হলে

ফরাসী বিজ্ঞানী  Ringelmann আবিষ্কার করেন যে, একই দলভূক্ত আটজন লোককে একটি দড়ি ধরে টানতে বলা হলে সকলে মিলে দড়ি টানার সময় জনপ্রতি তারা যে শক্তি প্রয়োগ করে তা ঐ ব্যক্তিদেরকে একক ভাবে দড়ি টানতে বলা হলে সে পূর্বের শক্তির দ্বিগুণ প্রয়োগ করে। এটাকে Sports Psychology-এর ভাষায় বলা হয় সামাজিক অলসতা (social loafing)। অর্থাৎ কোনো এক ব্যক্তি দলগত কাজে তার নিজের যোগ্যতা বা ক্ষমতাকে আলাদা করে প্রকাশিত হবার অথবা বিবেচিত হবার সম্ভাবনা না থাকলে সে তার ক্ষমতার আংশিক ব্যবহার করে। সে তখনই তার পরিপূর্ণ ক্ষমতা প্রয়োগ করে যখন সে জানে তাকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। তার এই মনোবৃত্তি তার দলের সদস্যদের সাথে তার সংশক্তি (cohesin) এর অভাব থেকে সৃষ্ট। এটাই সমাজবদ্ধ মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এই মনোবৃত্তি দলীয় কাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। কোনো একটি দলের সার্বিক ফলাফল বা নির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য এমন মনোবৃত্তি থেকে উত্তরণ জরুরি।

দল ও দলীয় সদস্যদের মধ্যকার সংশক্তি (cohesion) এর গুরুত্ব বুঝতে হলে প্রথমে বুঝা দরকার, দল বলতে কি বুঝায়? বাংলা ভাষায় দল বুঝাতে একটি শব্দ ব্যবহৃত হলেও ইংরেজিতে দুটি শব্দ Group ও Team ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে Group ও Team সমার্থক হলেও এদের মধ্যে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। Moorhead এবং Griffin এর মতে দল (group) তখনই গঠিত হয় যখন দুই বা ততোধিক ব্যক্তি মতামত আদান প্রদানের মাধ্যমে পরস্পরকে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে দল (Team) হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের দল (Group), যে দলের সদস্যগণ একটি বিশেষ ধরনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিশেষ ক্ষমতা অর্জন করে এবং বিশেষ এই অর্জনের জন্য তারা দায়বদ্ধ। এই বিবেচনায় কোনো একটি খেলায় দলকে Group না বলে Team বলা যুক্তিযুক্ত। সাধারণভাবে Sport Psychology এর তত্ত্ব অনুযায়ী দল (Team) বলতে সেই সমস্ত সদস্যকে বুঝায় যারা একসাথে কাজ করে এবং দলের সাফল্যে একে অপরের উপর শক্তিশালী প্রভাব বিস্তার করে। একটি দলের সাফল্য পাওয়া তখনই সম্ভব হবে যখন এই দলটি কিছু নির্দিষ্ট পর্যায়ভুক্ত শর্ত পূরণ করে গঠিত হয় এবং দলের সদস্যগণ সংশক্তি (cohesion) অর্জনের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে এবং দলের সাথে সংযোজিত হয়।

এখন প্রশ্ন হলো সংশক্তি (cohesion) কি? সংশক্তি (cohesion) হলো সেই সকল শক্তির সমষ্টি যা দলের সদস্যদের দলের অংশ হতে প্রভাবিত করে। Widmeyer দলীয় সংশক্তির (cohesion) ক্ষেত্রে দুটি বিষয় বিবেচনায় আনার কথা বলেছেন। যার প্রথমটি হলো একীকরণ (team integration), দ্বিতীয়টি হলো ব্যক্তিগত আকর্ষণ (individual attraction)। দলের সদস্যদের দল সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থাকতে পারে এবং থাকতে পারে তাদের ভিন্নতর মানসিক ভাবনা এবং সামাজিক যোগাযোগ। অন্যভাবে বলা যায়, দলের প্রতিটি সদস্য একজন কেবলমাত্র স্বতন্ত্র ব্যক্তি অথবা দলের স্বতন্ত্র সদস্য অথবা প্রত্যেকে প্রত্যেকের পরস্পর সহ-প্রতিযোগী। যে সকল বিষয় সংশক্তিকে প্রভাবিত করে তা হলো-
(১)    সদস্যদের দলের প্রতি নিজস্ব ভূমিকা।
(২)    দলের ভালো ও সাফল্যের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার ইচ্ছা
(৩)    দলীয় অন্যান্য সদস্যদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও দলীয় চুড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে পরস্পর সহযোগিতা।

এই সকল বিষয়ের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত থাকে প্রশিক্ষণের ধরণ (coaching style)। দলের প্রশিক্ষক (coach), দলের প্রধান (captain), দলের ব্যবস্থাপকের (manager) ভূমিকা দলের সংশক্তির জন্য নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। দলের বিগত সময়ের সাফল্যও সংশক্তি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রশিক্ষক যদি উপহাস, বিদ্রূপ ও অসম ব্যবহার করেন তা সংশক্তি অর্জনে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে। তার সাহায্যকারী ভূমিকা প্রয়োগ কৌশলজনিত সাহায্য ও প্রেরণাকারী বক্তৃতা ইত্যাদি সংশক্তি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

তবে অধিক সংশক্তি কোনো কোনো সময় নেতিবাচক ভূমিকাও নিতে পারে। Sports Psychology এর ভাষায় দলীয় চিন্তা (group thinking) আরেক ধরনের সমস্যা যা দলীয় সিদ্ধান্তে বা কাজে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করে। বিশেষ করে যে সকল দলের সদস্যদের মধ্যে অধিক সংশক্তি থাকে সে সকল দলের ক্ষেত্রে দলের সদস্যদের অনেকেই তাদের স্বাধীন ও সঠিক মত প্রকাশ থেকে বিরত থাকে। দলীয় চিন্তা প্রাধান্য পাওয়ার কারণে অনেক ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হয় এবং সামগ্রিকভাবে দল ক্ষতির সম্মুখীন হয়।


প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। মনের খবরের সম্পাদকীয় নীতি বা মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই মনের খবরে প্রকাশিত কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না কর্তৃপক্ষ।

Previous articleনেতিবাচক চিন্তা ও ভয় আপনাকে গৃহে অবরুদ্ধ রাখতে পারে
Next articleআজকের মন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here