আমি সব মানুষের সাথে মিশতে পারি না

সমস্যা:
আমার নাম রাকিব হাসান। বয়স ২৮ বছর। আমার সমস্যা হলো খুব কাছের মানুষ ছাড়া সব মানুষের সাথে মিশতে পারি না। তাছাড়া মাঝে মাঝে হীনমন্যতায় ভুগি, হঠাৎ রেগে যাই, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি, অফিসের সিনিয়র কেউ কিছু বললে তা নিয়ে অনেক ভয়ে থাকি আর কথা বলতে গেলেও ভয় লাগে, হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এমনকি কোনো কাজ করার পর ভাবি এই কাজটা এভাবে না করে অন্য ভাবে করলে ভাল হতো। কল্পনাতে অনেক কিছু ভাবি, চিন্তা করি, কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই করতে পারিনা। আমার এই সমস্যাগুলোর জন্য আমি খুব অসহায় বোধ করছি। আমি এখন কি করতে পারি পরামর্শ দিলে খুবই উপকৃত হব।
পরামর্শ:
প্রশ্নকর্তা, আপনি উল্লেখ্য করেছেন আপনার বয়স ২৮ বছর। আপনার সমস্যা হলো আপনি সব মানুষের সাথে মিশতে পারেন না আপনজন ছাড়া। হীনমন্যতায় ভোগেন, হঠাৎ রেগে যান, হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং সিনিয়ররা কিছু বললে অনেক ভয় পান। এমনকি কথা বলতে গেলেও ভয় লাগে। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না এবং কোনো কাজ করার পর মনে করেন কাজটি এভাবে না করে অন্যভাবে করলে ভালো হতো। কল্পনায় অনেক কিছু ভাবেন কিন্তু বাস্তবে রূপ দিতে পারেন না। এ কারণে নিজেকে অনেক অসহায় বোধ করেন। আপনি সমস্যাগুলোর সমাধানে কী করণীয় জানতে চেয়েছেন।
পৃথিবীতে নানান ধরনের ব্যক্তিত্বের মানুষ থাকে, কেউ কেউ থাকেন অন্তর্মুখী চরিত্রের মানুষ, কেউ কেউ থাকেন বহির্মুখী চরিত্রের মানুষ। আর কিছু থাকেন এর মাঝামাঝি অবস্থানের মানুষ। এছাড়া কিছু লোক থাকেন যারা অসামাজিক মানসিকতার, আবার কেউ কেউ থাকেন খুবই নিখুঁত প্রকৃতির মানুষ। যারা সব কাজই সঠিকভাবে এবং নিখুঁতভাবে করতে চান, না করতে পারলে অস্থিরতা ও অশান্তির সৃষ্টি হয় যা অন্যদের মাঝেও সমস্যার সৃষ্টি করে। আবার কেউ কেউ থাকেন খুবই উগ্র মেজাজী ও রাগী যারা যেকোনো ঘটনায় মত পার্থক্য হলে অথবা তার মতামতের সাথে না হলে প্রথম ঘুষিটি তিনিই মেরে বসেন এবং এভাবেই তার মত প্রকাশ করতে চান।
আপনার ক্ষেত্রে যেহেতু আপনি আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণে হীনমন্যতায় ভোগেন এবং সবার সাথে সহজভাবে মেলামেশা করতে পারেন না সেহেতু নিজের মত প্রকাশ করতে পেরে উঠেন না। এ কারণেই আপনার মাঝে কখনও কখনও হতাশা থেকে রাগের উৎপত্তি হয়, সিনিয়রদের সাথেও মেলামেশায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না এবং নিজেকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেন না। আমি উপরের যে সমস্ত ব্যক্তিত্বের কথা বললাম তার কোনোটায় যেমন সীমাবদ্ধতা থাকে তেমনি ভাবে ইতিবাচক কিছু কিছু সুবিধাও থাকে। আপনার বেলায় ইতিবাচক দিক হলো আপনি সহজভাবে মিশতে পারলে, নিজেকে তুলে ধরতে পারলে, নিজের মতামতকে প্রকাশ করতে পারলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আপনার কোনো বড় ধরনের ভুল করার সম্ভাবনা থাকবে না। মোটামুটিভাবে সবার কাছে আপনি একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। যেহেতু আপনি একজন বিশ্লেষণধর্মী ব্যক্তিত্বের অধিকারী তাই আপনার নিজেকে সঠিকভাবে প্রকাশ করতে না পারার দুঃখ ও বেদনা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। মনে রাখতে হবে যাদের সাথে আপনি মেলামেশা চলাফেরা করেন তাদের কেউ হয়তো আপনার চেয়ে বেশি বুঝতে পারেন। আবার অনেকেই আপনার চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম যোগ্যতার অধিকারী। আপনার জন্য পরামর্শ হলো আপনার যোগ্যতা ও কর্ম দক্ষতা সন্মন্ধে সঠিক মূল্যায়ন করুন এবং আত্মবিশ্বাসী হতে চেষ্টা করুন। সামাজিকভাবে সব ধরনের মানুষের সাথে সহজ ভাবে মেলামেশা করতে চেষ্টা করুন। মনে রাখতে হবে আপনার মতো যারা আছেন তারা সাধারণত ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হন না, বড় ধরনের কোনো ভুল করেন না। আপনি যেমন আছেন আপনার সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে হতাশার দিকটা না ভেবে ইতিবাচক দিকগুলোর বহিঃপ্রকাশ করতে চেষ্টা করুন। মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের গঠন গ্রণালীতে অনেক ধরনের কারণ থাকে। যেমন- জীবনের প্রথম পাঁচ বছরে আপনাকে কিভাবে গড়ে তোলা হয়েছিল, পরবর্তী সময়ে পারিপার্শ্বিকতায় কী ধরনের সহযোগিতা অথবা বাঁধা পেয়েছিলেন। লেখাপড়ায় এবং কর্মক্ষেত্রে কী ধরনের সহযোগিতা অথবা বাঁধা পেয়েছেন তার উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। এছাড়াও রয়ে গেছে জেনেটিক ও পরিবেশগত প্রভাব। মানুষের মূল ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন খুব সহজসাধ্য নয়। জীবনে অগ্রসর হওয়ার জন্যে আপনার মতো যারা কষ্ট পাচ্ছেন তাদের সব সময়ই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলোর ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতিনিয়ত সক্রিয় অনুশীলনের মাধ্যমে সচেষ্ট থাকতে হবে এবং নেতিবাচক দিকগুলোকে পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে। যেহেতু আপনি একজন বুদ্ধিমান মানুষ, আপনার সীমাবদ্ধতাকে জয় করে আপনি জীবনে অগ্রসর হতে পারবেন এবং সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবেন বলে আমি মনে করি। তবুও যদি কোনো সময় বেশি অশান্তি বোধ করেন অথবা বেশি কষ্ট পান তাহলে যেকোনো ভালো সেন্টারে। যেমন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় অথবা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সাইকোথেরাপি ইউনিটে যোগাযোগ করুন। এক্ষেত্রে ঔষুধের ভূমিকা তুলনামূলক ভাবে কম। সাধারণ ভাবে যে পরামর্শ দেয়া হলো এর মাঝেই আপনি সমস্যার সমাধান খুঁজে পাবেন বলে আমি মনে করি। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।

Previous articleমানসিক রোগ: অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার (ওসিডি) বা শুচিবাই
Next articleপরীক্ষার নামে শিশুদের আনন্দ কেড়ে নেয়া হচ্ছে-অধ্যাপক ড. সিদ্দিকুর রহমান

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here