আকাশ মাঠ থেকে খেলাধুলা শেষ করে ফেরার পর মা দেখেন ছেলের পায়ে লাল লাল অসংখ্য মশার কামড়ের মতো দাগ। দেখে ভয় পাওয়ারই কথা!
মাস দুয়েক আগে একবার সর্দি-জ্বর হওয়া ছাড়া এমন কোন রোগ হয়নি এতদিন। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন রক্তের অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট অনেক কমে গেছে। এ তো আরও ভয়ের কথা। এরপর গেলেন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে। জানা গেল রোগটির নাম একটু খটমট ইমিউন থ্রম্বোসাইটোপেনিক পারপুরা, সংক্ষেপে আইটিপি।
আইটিপি কী?
আইটিপি একটি অটোইমিউন গোত্রের রোগ। এতে দেহে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, যা রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকাকে ধ্বংস করতে থাকে। ফলে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায়। সাধারণত সুস্থ, স্বাভাবিক মানুষের রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা প্রতি ঘন মিলিমিটারে দেড় লাখের ওপর। এই রোগে তা এক লাখের নিচে নেমে আসে, এমনকি কমতে কমতে ৫ হাজারে চলে আসতে পারে।
আমরা জানি যে রক্তে প্লাটিলেট নামের কোষের কাজ হলো রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা। আইটিপি হলে প্লাটিলেটের সংখ্যা কতটা কমল তার ওপর নির্ভর করে উপসর্গ বা লক্ষণ কী হবে। প্লাটিলেট যদি ২০ হাজারের নিচে নেমে আসে তবে রক্তপাতের আশঙ্কা বাড়তে পারে।
আইটিপি হলে সাধারণত এই রক্তক্ষরণ ত্বক ও মিউকাস মেমব্রেনে হয়ে থাকে। যেমন- ত্বকের নিচে লাল দাগ (ছোট ফুসকুড়ির মতো হলে পারপুরা, বড় ছড়ানো রক্ত দেখা গেলে ইকাইমোসিস), দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, কালো পায়খানা বা মলের সঙ্গে রক্তপাত, মাসিকের সঙ্গে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ, নাক থেকে রক্তপাত ইত্যাদি। খুবই অল্প কিছু ক্ষেত্রে শরীরের অন্তর্গত অঙ্গে যেমন- মস্তিষ্কে বা পেটের ভেতর রক্তপাত হতে পারে, যা বিরল।
কেন হয় এই আইটিপি?
যেকোনো বয়সে আইটিপি হতে পারে, তবে শিশুদের হলে তা দ্রুতই সেরে যায়। প্রতি ১০ হাজারে একজন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে এর পেছনে তেমন কোনো নির্দিষ্ট কারণ নেই, একে বলা হয় প্রাইমারি আইটিপি। তবে ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে অন্য কোনো রোগ এ জন্য দায়ী। যেমন- এসএলই, লিমফোমা ইত্যাদি, একে তখন সেকেন্ডারি আইটিপি বলা হয়। অনেক সময় কিছু ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণও দায়ী হতে পারে।
আইটিপি কীভাবে বুঝবেন?
আইটিপি হলে কোনো জ্বর বা অন্য সমস্যা থাকে না। কেবল ছোটখাটো রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। রক্তের কমপ্লিট কাউন্টে প্লাটিলেটের সংখ্যা কম হলে আইটিপি সন্দেহ করা যায়। কিন্তু আরও নানাবিধ কারণে প্লাটিলেট কমতে পারে। বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণ (যেমন ডেঙ্গু), ওষুধের প্রভাব, রক্তের নানা ক্যানসার ইত্যাদি নানা কারণে প্লাটিলেট কমে। শারীরিক পরীক্ষা ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে এটা নির্ণয় করা হয়। প্লাটিলেট কমার অন্য কোনো কারণ না পাওয়া গেলে একজন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ আইটিপি শনাক্ত করতে আরও কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন।
চিকিৎসা
আইটিপি হলে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, তবে ধৈর্য দরকার। কারণ, ওষুধ দিয়ে চিকিৎসায় খুব ধীরে প্লাটিলেট বাড়বে। ঘন ঘন চিকিৎসা বদল করবেন না। সাধারণত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দিয়ে এর চিকিৎসা করা হয়। এর বাইরে আরও কিছু বিশেষায়িত চিকিৎসা আছে, যা কেবল রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানেই নেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে প্লাটিলেট সঞ্চালন কার্যকর নয়। বরং তা ক্ষতিকর। আরেকটা কথা, কোনো নির্দিষ্ট খাবারে প্লাটিলেট বাড়ে না।
আইটিপি অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নিন। যেসব আইটিপি ভালো হয় না, তাকে ক্রনিক আইটিপি বলা হয়। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসা একটু জটিল হয়ে পড়ে। তাই শুরুতেই দেরি না করে ধাপে ধাপে চিকিৎসা নিন আর নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকুন।
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে