জানেন কি, সিদ্ধান্তহীনতার অন্যতম মূল কারণ ডিপ্রেশন? ডিপ্রেশন ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণগুলো অনেক সময় নির্ণয় করা যায় না। সিদ্ধান্তহীনতা ক্রোনিক ডিপ্রেশনের একটি বিশেষ লক্ষণ।
আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রকাশিত Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders (DSM-5) বইয়ের সর্বশেষ সংস্করণে বলা হয়েছে, ডিপ্রেশনে ভুক্তভোগীরা সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। অথবা তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া অত্যন্ত ধীরগতিসম্পন্ন হয়। উল্লেখ করা হয়েছে, মেন্টাল ডিপ্রেশন দীর্ঘস্থায়ী সিদ্ধান্তহীনতা (Chronic Indecisiveness) তৈরি করে।
দৈনন্দিন জীবনে ক্রোনিক ইনডিসিসিভনেসের প্রভাব
আমরা নিজেরাই এ প্রভাব বা প্রতিক্রিয়াগুলো সম্পর্কে অনেক সময় সজাগ থাকি না বা থাকতে পারি না। দিনে আমরা কয়েকশো সিদ্ধান্ত নেই ও বহুবার সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি। যেমন-
• কখন ঘুমাতে যাবো?
• কী পরবো?
• কী খাবো, এখন না পরে?
• গোসল করবো কী করবো না?
• ছাতা নেবো কী নেবো না?
• কোন পথ দিয়ে গেলে দ্রুত পৌঁছানো যাবে?
• কোন কথা কীভাবে, কখন বলবো? বলা ঠিক হবে কিনা?
• কোনো কাজে যাওয়ার ক্ষেত্রে কখন যাবো? আজ যাবো কিনা?
এ তো গেলো সাধারণ ছোট ছোট ব্যাপার। আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত রোজ আমাদের নিতে হয়। বেশিরভাগ মানুষ এসব সিদ্ধান্ত সেকেন্ডের মধ্যে নিয়ে ফেলে। কিন্তু ডিপ্রেশড ব্যক্তিরা ছোটখাটো ব্যাপারগুলো নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে দ্বিধায় ভোগে। তাদের ধারণা, তারা সুফলদায়ক বা উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। ভবিষ্যত ফলাফল নিয়ে এরা খুব বেশি অনিশ্চয়তায় ভোগে। ফলে ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে অনেকখানি সময় নেয় তারা।
বিষণ্নতা কেন দ্বিধান্বিত করে?
মোটিভেশনের অভাবে ডিপ্রেশড ব্যক্তিরা ইনডিসিসিভ হয় বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। মোটিভেশন ও ডিপ্রেশন পরস্পর বিরোধী। মোটিভেশন ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। গবেষণায়, বিষণ্নতাকালীন বৈকল্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে দৈহিক সমস্যা বলা হয়েছে। দেখা গেছে, মস্তিষ্কের মেডিয়াল ও ভেন্ট্রাল প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স অঞ্চলে ধূসর পদার্থ হ্রাস পেলে প্রেরণার উদ্দীপনা হ্রাস পায় এবং হানিকর সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা তৈরি হয়। বিমর্ষ ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে এই ধূসর পদার্থ হ্রাস পায়। পরিশেষে, বিষণ্ন ব্যক্তিদের মধ্যে দেখা দেয় উচ্চমাত্রার অ্যাংজাইটি। এই অ্যাংজাইটি সিদ্ধান্ত নিতে অন্যতম প্রধান অন্তরায়।
ড্রিপ্রেশন ও ইনডিসিশন ভাঙতে করণীয় কী?
ক্রোনিক ডিপ্রেশন ও ইনডিসিশনের সঙ্গে লড়াই করা কঠিন। তবে প্রাথমিকভাবে কাটিয়ে উঠতে এগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করা যেতে পারে।
• নোটবুক সঙ্গে রাখুন। সিদ্ধান্তের পজিটিভ- নেগেটিভ দিকগুলো লিখুন।
• ডিপ্রেশনের জন্য কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি নেওয়া যায়। চয়েজ অ্যানালাইজিংয়ে এ থেরাপি ফলদায়ক।
• জটিল সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বুঝে এড়িয়ে যান। অথবা কারও পরামর্শ নিন। অনেক ক্ষেত্রে পরামর্শ গ্রহণ করা বা না করা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে পারেন। সেক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কাঁধে ভরসা রাখুন।
• পজিটিভ চিন্তা করুন। নিজেকে পজিটিভ কথা বলুন।
• কোনো কিছু নিয়ে খুব বেশি ভাববেন না। কারণ ভবিষ্যৎ আমাদের কারও জানা নেই। আমরা কেবল সৎভাবে এগিয়ে যেতে পারি। বাকিটা ছেড়ে দিন। বিশ্বাস করুন, সব সমস্যারই সমাধান রয়েছে। কারণ, জগতে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়।
ভালো থাকুন।