সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে অসচেতনতা শিশু কিশোরদের মধ্যে মানসিক উদ্বেগ, বিষণ্নতা, অনিয়ন্ত্রিত আচরণ ইত্যাদি মানসিক সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই তাদের মধ্যে এটি ব্যবহারে সচেতনতা সৃষ্টিতে অভিভাবকদেরকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অনেক পিতামাতাকেই দেখা যায় যে তারা তাদের সন্তানদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অভিভাবকদের চিন্তার বিষয় হওয়া উচিৎ তাদের সন্তানরা কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে, অপব্যবহার করছে কিনা। সম্প্রতি মহামারী কালে লকডাউনের সময়ে শিশু কিশোরদের স্ক্রিন টাইম বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এই সমস্যা এবং সমস্যা সমাধানে কী কী করা যায় এটি নিয়ে বেশ কিছু গবেষণা সম্প্রতি পরিচালিত হয়েছে। এসব গবেষণায় বিশেষ ভাবে যে বিষয়টি উঠে এসেছে সেটি হল, সম্প্রতি বৃদ্ধি পাওয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারের সাথে সাথে শিশু কিশোরদের মাঝে মানসিক অসন্তোষ, হতাশা, বিষণ্নতা, মানসিক উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
তাছাড়া এর সাথে সাথে বেড়েছে ক্ষুধামন্দা, নিদ্রাহীনতা সহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাও। তাই শিশু কিশোরদের মধ্যে এই বাড়তে থাকা মানসিক স্বাস্থ্য জটিলতা দূর করতে অভিভাবকদেরকে গঠনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যেন শিশু কিশোরদের মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা বাড়ে।
সন্তানকে সচেতন করতে আগে নিজেদের সচেতন হওয়া জরুরী। কারণ সন্তানের উপদেশ বা নির্দেশনা থেকে অভিভাবকদের আচার আচরণকে বেশি অনুসরণ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুফল এবং কুফল উভয়ই রয়েছে। তাই আপনার সন্তানদের সামনে সেই উদাহরণ প্রস্তুত করুন যেটি দেখে তারা সঠিকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার করতে শিখবে। তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভূমিকা পালন করতে পারে এমন সব তথ্য তাদের সরবরাহ করার প্রয়াস করুন।
তাছাড়া, শিশু কিশোরদের মাঝে একাকীত্বের অনুভূতি বৃদ্ধি পেয়েছে বলেই তারা এই লকডাউনের সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এবং তাদের মাঝে এর ব্যবহার আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এই আসক্তি কমাতে তাদের এই একাকীত্বের অনুভূতি দূর করার প্রয়াস করুন। শিশুরা অন্য বিষয়ে সময় দিলে তাদের মাঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মাঝে চলে আসবে।
শিশু কিশোরদের সচেতন করতে তাদের সামনে বিভিন্ন গবেষণার পরিসংখ্যান তুলে ধরুন। তাদেরকে বোঝান এর অপব্যবহারে কী কী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে সব মানসিক সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী সেগুলি নিয়েও তাদের সাথে আলোচনা করুন। এতে করে তারা নিজেদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের আগ্রহ বাড়াতে সক্ষম হবে।
তাছাড়া আপনার সন্তানকে জিজ্ঞাসা করুন, তারা এর ব্যবহারের আগে এবং পরে কেমন অনুভব করে। তাদের সাথে তাদের ভালোলাগা মন্দ লাগা নিয়ে কথা বলুন এবং এর ভালো ও মন্দ দিকের ব্যাখ্যা করুন যেন তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে এবং নিজ থেকে শুধরে যাওয়ার সুযোগ পায়। পারিবারিক নিয়ম নীতি এবং বন্ধন দৃঢ় করার মাধ্যমে তাদেরকে অন্য দিকে মনোযোগী করে তুলুন যেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতিরিক্ত ব্যবহারে তারা আগ্রহী না হয়।
শিশু কিশোরদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ যেহেতু এই বয়সেই বেশি ত্বরান্বিত হয় তাই তাদেরকে সঠিক ও ভুলের জ্ঞান প্রদান করা এ সময় অত্যন্ত জরুরী যেন তারা বিপথে পরিচালিত হয়ে নিজেদের ক্ষতি সাধন না করে। এরই অংশ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার নিয়ে তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরী। প্রত্যেক অভিভাবককেই এ বিষয়ে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
সাইকোলজিটুডে থেকে অনুবাদ করেছেনঃ প্রত্যাশা বিশ্বাস প্রজ্ঞা
স্বজনহারাদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য পেতে দেখুন: কথা বলো কথা বলি
করোনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য ও নির্দেশনা পেতে দেখুন: করোনা ইনফো
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক মনের খবর এর ভিডিও দেখুন: সুস্থ থাকুন মনে প্রাণে